খবরটি পড়ে বিস্মিত হবো, নাকি অভিভূত হবো বুঝতে পারিনি। বিএনপির কর্মীরাও যে এতটা সাহসী (?) হতে পারেন, ধারণায় ছিল না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে তাদের লুকোচুরির আন্দোলন দেখে সে রকম মনে হওয়াই স্বাভাবিক। খবর হলো, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার পুলিশকে মারধর করে হাজত থেকে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী। গত ১৯ নভেম্বর সংঘটিত একটি মারামারির ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। ১০ জানুয়ারি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর স্থানীয় বিএনপির প্রায় ২০০ নেতাকর্মী থানা ঘেরাও করে রাত ১০টার দিকে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই করো’ স্লোগান দিয়ে আসামি তরিকুলকে হাজত থেকে বের করে নিয়ে যান। তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এমন হতে পারে, যে আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, সে রাস্তা থেকে পালিয়ে গেছে।’
রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কাছ থেকে মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীল আচরণ প্রত্যাশা করে। গ্রেপ্তার যুবদল কর্মীকে মুক্ত করার সোজা পথ ছিল পরদিন আদালত থেকে তাঁকে জামিনে ছাড়িয়ে আনা। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী সে সোজা পথে না হেঁটে পেশিশক্তি ব্যবহারের বাঁকা পথেই হেঁটেছেন। এ ধরনের ঘটনা আমরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেখেছি। তখন থানা-পুলিশ ছিল ক্ষমতাসীনদের হুকুমবরদার। তাদের হুকুমে পুলিশ নড়াচড়া করত। সেই যুগাবসানের পর দেশবাসী এই ভেবে স্বস্তি পেয়েছিল যে, এবার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে; মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। বাস্তবতা ভিন্ন।
গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে দেশের বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড.
এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের। ১৫ বছরের একাধিপত্যে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল হাতি সমতুল্য। কোনো রাজনৈতিক দলই তাদের টলাতে পারছিল না। এমন সময়ে ঠোঁটে কঙ্কর (নুড়ি পাথর) নিয়ে আবাবিল পাখির মতো হাজির হয় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। নিমেষেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আওয়ামী লীগের হাতিবাহিনী।
আওয়ামী লীগের পতনের পর মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল, তখনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকে নতুন উপদ্রবের খবর। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে দেশের বড় রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিতে থাকে। বাসস্ট্যান্ড, লেগুনাস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, মাছঘাট, মাছের আড়ত, রাজধানীর ফুটপাত, গ্রাম-গঞ্জের বাজার ও রাস্তার পাশের টং দোকান– সবখানে তারা থাবা বিস্তার করে লিপ্ত হয় দেদার চাঁদাবাজিতে। পত্রপত্রিকায় সেসব খবর প্রকাশিত হতে থাকে। দলটির একজন যুগ্ম মহাসচিব (নারী) আওয়ামী লীগের পতনের এক দিন পরেই বরিশালে একটি পুকুর দখল করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। এসব ঘটনায় প্রমাদ গোনেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কঠোর অবস্থান নেন এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে। বরিশালের ওই নেত্রীর দলীয় পদ স্থগিতসহ গত পাঁচ মাসে সারাদেশে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও তাদের অপ্রতিরোধ্য গতি থামানো যাচ্ছে না। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারে না আসতেই দলের নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পাঁচ মাসে যদি দেড় হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে সরকারে এলে পাঁচ বছরে কতজনকে সাংগঠনিক ব্যবস্থার গিলোটিনে দিতে হবে? তখন আবার ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’ হবে না তো?
শ্রীনগর থানায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা দেখে ওই এলাকার পরিচিত অনেকেই ফোন করে বলেছেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের অনেক অপকর্মের সাক্ষী। থানা থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কখনও ঘটেনি।’ ‘এটা কীসের আলামত’– এ প্রশ্নও করেছেন তারা। তাদের সে প্রশ্নের জুতসই কোনো জবাব দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমার শুধু মনে হচ্ছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা। তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনি ‘দেশে-বিদেশে’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে– প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত মুজতবা আলীকে ‘কুইনাইন’ খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তাঁর এক বন্ধু। জ্বরে কাতরাতে কাতরাতে সৈয়দ মুজতবা আলী বললেন, ‘কুইনাইন তো জ্বর সারাবে, কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে?’ কুইনাইন প্রচণ্ড তেতো, ম্যালেরিয়া জ্বরের ওষুধ।
দুঃশাসন-দুরাচারিত্বে দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করেছিল আওয়ামী লীগ। গণঅভ্যুত্থান তাদের হটিয়ে মুক্তি দিয়েছে জাতিকে। এখন যাদের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে এবং তারা হাতের যে পেশি দেখাতে শুরু করেছেন, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ন ত কর ম র জন ত ক ব যবস থ ব এনপ র শ র নগর কর ম র র পতন র ঘটন সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুর-চট্টগ্রামের সামনে কোয়ালিফায়ারের যে সমীকরণ
বিপিএলের গ্রুপ পর্বের লড়াই শনিবার শেষ হবে। শেষ দিন বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মাঠে নামবে খুলনা টাইগার্স। চট্টগ্রাম নামবে কোয়ালিফায়ারে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে।
চলতি বিপিএলে ১১ ম্যাচ খেলে ৫ জয় পেয়েছে খুলনা টাইগার্স। গ্রুপ পর্বের শেষ দিন শনিবার দিনের প্রথম ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটালসের মুখোমুখি হবে খুলনা। ওই ম্যাচে মেহেদী মিরাজরা জিতলে শেষ চারে চলে যাবে। হারলেই বিদায় নিতে হবে তাদের।
দুর্বার রাজশাহী ১২ ম্যাচে ৬ জয় পেয়েছে। খুলনা জিতলে তাদেরও ৬ জয় হবে। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে আছে খুলনা। যে কারণে শেষ ম্যাচে জিতলে সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে সুপার ফোরে যাবেন মেহেদী মিরাজরা।
একইভাবে দিনের শেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে মাঠে নামবে চট্টগ্রাম কিংস। মোহাম্মদ মিঠুনের দল এই ম্যাচে জিতলে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করবে। রংপুর রাইডার্স নেমে যাবে এলিমিনেটরে।
চট্টগ্রাম ১১ ম্যাচে ৭ জয় পেয়েছে। শেষ ম্যাচে জিতলে ৮ জয় হবে তাদের। একইভাবে ১২ ম্যাচে ৮ জয় আছে রংপুরের। কিন্তু নেট রান রেটে রংপুরের চেয়ে এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম। রংপুরের নেট রান রেট +০.৭৬৪। চট্টগ্রামের নেট রান রেট +১.৫৩৪।
শেষ ম্যাচে জিতলে তাই চট্টগ্রাম কিংস প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করবে। সেক্ষেত্রে প্রথম কোয়ালিফায়ারে বরিশাল ও চট্টগ্রাম মুখোমুখি হবে। বিপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম কোয়ালিফায়ারে জয়ী দল সরাসরি ফাইনালে যাবে। পরাজিত দল এলিমিনেটর থেকে জিতে আসা দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে।