বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র তরুণদের সমর্থন হারাচ্ছে
Published: 17th, January 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র মরছে। এটি শুনতে মনে আতঙ্ক জাগতে পারে। এ থেকে কয়েকটি প্রশ্নও উঠতে পারে: আসলে এর মানে কী? নির্বাচন কি হবে না? বিরোধী দলকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হবে কী? যদি এগুলো হয় মানদণ্ড, তাহলে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ায় গণতন্ত্র বিরাজমান বলতে হবে। রাশিয়ার ফেডারেল সংসদ দুমায় ছয়টি রাজনৈতিক দল প্রতিনিধিত্ব করে, দেশটিতে ২০টির বেশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। আপনি ঠিকই ধরতে পেরেছেন। রাশিয়াতে কোনো গণতন্ত্র নেই। বস্তুত এটি এমন একটি জাতি, যা অতীতের কর্তৃত্ববাদ ও সর্বগ্রাসীবাদের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে জোসেফ স্টালিনের শাসনের চেয়ে অনেক বেশি রাশিয়ান রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য নির্যাতিত হচ্ছেন।
গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা প্রশ্নাতীতভাবে কমে যাচ্ছে। একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৫ বছরের কম বয়সী ব্রিটেনের পাঁচ ভাগ লোক বিশ্বাস করেন, একটি দেশ কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হলো, একজন শক্তিশালী নেতা, যাকে নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। অন্যদিকে তাদের চেয়ে বয়স্ক ৮ শতাংশ লোক ভিন্নমত পোষণ করেন। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রায় একই পরিস্থিতি বিরাজ করে। ২০২০ সালে কেমব্রিজ গবেষকরা এক সমীক্ষা ১৬০টি দেশের মনোভাব নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। এতে দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্ম ‘গণতন্ত্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান হারে মোহ হারাচ্ছে।’ পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, ২০২৪ সালে ১২টি উচ্চ আয়ের দেশের প্রায় দুই-
তৃতীয়াংশ নাগরিক গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল, যা ২০১৭ সালে ছিল অর্ধেকেরও নিচে।
কেন এমন হচ্ছে? স্থবিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দেওয়া অর্থনৈতিক মডেল এর উত্তর দিতে পারে। কেমব্রিজের গবেষণাটির উপসংহারে বলা হয়েছে, তরুণদের মধ্যে অসন্তোষের প্রধান একটি কারণ হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে তাদের বাদ দেওয়া। এ বিষয়ে রাশিয়ার পরিস্থিতি শিক্ষণীয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ১৯৯০ সালে ঘোষণা করেছিলেন, ‘জনগণের জীবনযাত্রার মান যাতে অবনমন না ঘটে তা আমরা নিশ্চিত করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে তাদের সময়মতো আওয়াজ দেওয়া উচিত।’ চার বছরের মধ্যে রাশিয়ানদের প্রকৃত আয় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। শকথেরাপি নীতির কারণে রাশিয়ার ৩২ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যে পতিত হয়। ২০২১ সালের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ রাশিয়ান ‘গণতন্ত্রের পশ্চিমা মডেল’ সমর্থন করেছিল। মুক্তবাজার পুঁজিবাদের অশান্তি গণতন্ত্রের ব্যানারে বিতরণ করা হয়েছিল। এটি মোহভঙ্গের অনুভূতি তৈরি করেছিল, যা পুতিন দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়েছেন।
ব্রিটেনকে ১৯৯০-এর দশকের রাশিয়ার ভয়াবহতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়নি। তা সত্ত্বেও নব্য উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতি ও কঠোরতার একটি বিষাক্ত সংমিশ্রণ তরুণদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। থ্যাচারিজম স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এর পরিবর্তে নিরাপত্তাহীনতাই তৈরি হয়েছিল। নিরাপদ চাকরি বলতে কিছু ছিল না, ভাড়া বেড়েছে, মজুরি কমে গেছে, যুব পরিষেবাগুলো কমে গেছে এবং স্নাতকদের
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে শাস্তিমূলক ঋণের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অল্পবয়সী ব্রিটিশরা রাষ্ট্রীয় নীতিজনিত কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই কখনও ভোট দেয়নি। গণতন্ত্র যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে তাদের সমবয়সীদের কাছে দিন দিন অসন্তোষের কারণ হয়ে উঠেছে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কেননা তারা নয়া উদারতাবাদের কারণে ভোগান্তির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে।
অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্রও খুঁজে পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরুন। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশক ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিত্বের উত্থান ও বিজয়ের জন্য ব্যাপক সুযোগ তৈরি করেছিল। পুঁজিবাদের অধীনে সবসময় করপোরেট স্বার্থ ও ধনবানদের কারণে গণতন্ত্র ব্যাপক কাটছাঁটের শিকার হয়েছে, যারা গড় ভোটারের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা ভোগ করেছে। পুঁজিবাদ যখন সংকটে পড়ে, যেমনটি ২০০৮ সালে হয়েছিল, তখন এর গভীর ত্রুটিগুলো থেকে ব্যাপকভাবে জনমনে ক্ষোভের জন্ম নেয়। প্রশ্ন হলো, কে এই পরিস্থিতি কাজে লাগায়। একটি বড় বিপদ হলো, অতি ডানপন্থিরা ধ্বংসাত্মকভাবে সফল একটি সামাজিকমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট কৌশল তৈরি করেছে, যা তাদের অনুগামীদের অধিকহারে উগ্রবাদী করে তুলেছে। অন্যদিকে বামরা কয়েক আলোকবর্ষ পিছিয়ে রয়েছে।
মানুষের মধ্যে রাগ জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক। সেই ক্ষোভ বারবার ভুল লক্ষ্যে চালিত করা হচ্ছে। ব্যর্থ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস ভেঙে পড়ছে এবং এই সংকটের দৃঢ়প্রত্যয়ী উত্তর না দেওয়া হলে তা ভয়াবহ হতে পারে।
ওয়েন জোন্স: কলামিস্ট; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার: তারেক রহমান
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ৩১ দফা জনগণের জন্য তৈরি। জনগণের পক্ষ থেকে আসা প্রশ্ন নিয়েই ৩১ দফা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু জনগণের বাকস্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করেছি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। সেই জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। দেশের সকল সংকটকালে বিএনপি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষও বিএনপির প্রতি আস্থা রেখেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।
বুধবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের একটি অভিজাত হোটেলে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
তারেক রহমান বলেন, জনগণ যদি আপনার পিছনে না থাকে, তাহলে আপনি কিসের নেতা? মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে তো আমি টানবো না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতেই হবে।
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি, কর্মী, নেতার কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাকে আমরা ওন (নিজের) করতে পারবো না। আমরা বহু ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যদিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। বহু অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যদিয়ে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কেউ নিজের স্বার্থ নিয়ে দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, কেউ কেউ বলে যারা অপরাধ করেছে, ভুল করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। এতে কী হবে। কী হবে সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা যতটুকু জানছি, সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যখন যেটা জানবো ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি বলে, আমরা খারাপ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। অন্তত এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার থাকবো। মুখে বলব একটা, কাজে করব আরেকটা, তা নয়। আমরা যা মুখে বলছি, তা আমরা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করবো। তার প্রতিফলন থাকবে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যাতে সর্বোচ্চ করতে পারি, আমরা সেটিই করছি। আমরা যদি সরকারে থাকতাম, তাহলে আমরা যেটা করতে পারতাম, দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। এই মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থানে নেই। কাজেই সেই অবস্থানে যদি আমাদের যাওয়ার সুযোগ হয়, আজকে যেমন শুধু দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছি। তেমন সরকারে থাকলে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, আমরা মুখে যেটা বলি, কাজেও সেটির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।
৫ আগস্ট থেকে দলের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিয়ে জনগণের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক কর্মী, নেতারা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়, জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করলে কী পরিণতি হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ৩১ দফার প্রশিক্ষণ আমরা করছি। ৩১ দফা জনগণের কাছে নিয়ে যাবো। ৩১ দফা আমাদের অনুধাবন করতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ থেকে যদি দূরে সরে যায় আমরা। তাহলে ওই ৫ আগস্টের পরিণতি আমাদের হবে। ৫ আগস্টের পরিণতি থেকে দূরে থাকতে হলে, জনগণের সঙ্গেই থাকতে হবে। আমরা সবাই কষ্ট করছি। আগামী দিনে যাতে দল সুফল পায়, আপনি আমি সুফল পায়, সেইজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ।
এ কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কর্মশালায় যশোর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।