আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নানা দিক থেকে ভুক্তভোগী। পরিবার থেকে শুরু করে অফিসে, রাস্তায়, বাসে, শপিংমলে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। প্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারণা করছি। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালে অফিসে আসার পথে এমনই এক ঘটনা দেখলাম। একজন মধ্যবয়সী নারী ও শিশু রিকশা করে জিগাতলা মুখে এগোচ্ছিলেন। আমি ছিলাম পেছনের রিকশায়। মোড়ে আসার পরপরই একজন ৩০-৩৫ বছরের লোক কিছু পাওয়ার আশায় তাঁর কাছে হাত পেতে দিল। তাতে ওই নারী কোনো ধরনের সাড়া না দিয়ে স্থির বসে রইলেন। তৎক্ষণাৎ সেই লোকটি ক্ষোভ দেখিয়ে রিকশার হুডে শক্ত হাতে ঝাঁকি দিল। পরক্ষণেই আমি রিকশা থেকে তাঁকে ধমক দিলে বিষয়টি সে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই নারীর পাশেই ছিল ৮ কি ৯ বছরের শিশু। ঘটনায় দু’জনই নির্বিকার দর্শক মাত্র!
চারপাশে আমাদের চোখের সামনেই এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে, যদিও তা আমরা অতটা গুরুত্ব দিই না। এতেই বোঝা যায়, নারী ও শিশুর প্রতি আমাদের মজ্জাগত ধ্যান-ধারণা কতটা নির্মম ও নিষ্ঠুর।
একই দিন আরেকটি ঘটনার সাক্ষী হলাম। লেগুনায় ফার্মগেট আসছিলাম। ২২ কি ২৩ বছরের এক তরুণী জিগাতলা থেকে ধানমন্ডি ২৭-এর আগে চক্ষু হাসপাতালের উদ্দেশে লেগুনায় উঠেছে। সহকারীর সঙ্গে কথাবার্তায় বোঝা গেল, মেয়েটি নির্ধারিত ভাড়ার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নয়। সহকারী ওই মেয়েকে সামনে গিয়ে ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে বলেন। মেয়েটি লেগুনা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চলে গেল। তৎক্ষণাৎ দেখলাম, চালক নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ রেখেছেন। এ ধরনের ঘটনা শুধু নারীর সঙ্গে ঘটে এমন নয়। বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বিশেষত নারী ও শিশুরা এর শিকার।
শিশুর কথাই বলা যাক। মায়ের কোল ছাড়া শিশু কোথায় নিরাপদ? শিশু দুর্বল– এটি ভেবেই অনেকে তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, শিশুর প্রতি এ উপেক্ষিত আচরণ শুরু হয় পরিবারেই। এমনভাবে তাদের গড়ে তোলা হয়, যাতে তার স্বাধীন সত্তার অমর্যাদা করা হয়। তারা ছোট– এমন চিন্তা মাথায় রেখে বড়রা তাদের সঙ্গে আচরণ করেন। এ চিন্তায় ‘ছোট’ ধারণাটি যতটা স্নেহ ও ভালোবাসার, তার চেয়ে বেশি থাকে শিশুকে ‘এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই’ এমন মানসিকতা।
আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নিয়ে বিদ্যমান প্রভাবশালী ডিসকোর্স উভয়কে দমিয়ে রাখতে চায়। মূলত নারীকে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতায়িত করতে হলে দরকার একটি মধ্যপন্থি ডিসকোর্স। এই বয়ানে একদিকে যেমন দেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও আদব-কায়দার প্রতিফলন থাকবে, আবার তা বিশেষ কোনো দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নারীর ব্যাপারে এ ধরনের মধ্যপন্থি বয়ানের জন্য এ সমাজের মাটি থেকেই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বলয় তৈরি করতে হবে। বেগম রোকেয়ার চিন্তাভাবনায় অনেকটুকু সেই প্রভাব রয়েছে। পরবর্তী সময়ে পাশ্চাত্য চিন্তা ও সংস্কৃতির যথাযথ বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা ‘নারীবাদ’ ডিসকোর্স গড়ে তুলতে পারিনি। বরং নির্বিচারে নারীবাদের পাশ্চাত্য ডিসকোর্স গ্রহণ করতে গিয়ে আরও জটিলতা বেড়েছে।
নারী ও পুরুষ উভয়ে সমাজের চালিকাশক্তি– অনেকটা রেললাইনের মতো। কোনো একটি পাশে ত্রুটি থাকলে রেলের চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে অর্থনীতি, রাজনীতিসহ বহুমুখী পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। সে জন্য প্রথমে আমাদের মনের পুনর্গঠন দরকার। সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের যেসব মর্মান্তিক খবর আমরা দেখি, তার মূলে আছে তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাদের দেখলে সমাজে পরিবর্তন আসবে না।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই
প্রখ্যাত ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর প্রকাশ করেছে।
মারিয়ানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার মুখপাত্র বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে ঘোষণা করছি, গায়িকা, গীতিকার ও অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল মারা গেছেন। আজ সকালে লন্ডনে মারা যান তিনি। কোম্পানি এবং পরিবার তার অভাব বোধ করবে।”
ষাটের দশকে মিক জ্যাগারের সঙ্গে মারিয়ান প্রেমের সম্পর্ক ছিলেন। শিল্পীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়েছেন জ্যাগার। তাতে তিনি বলেন, “মারিয়ান ফেইথফুলের মৃত্যুর খবর শুনে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। এতদিন সে আমার জীবনের অংশ ছিল। সে আমার চমৎকার একজন বন্ধু ছিল। সে একাধারে একজন সুন্দরী গায়িকা, দুর্দান্ত অভিনেত্রী ছিলেন। সে সবসময়ই মনে থাকবে।”
আরো পড়ুন:
অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান: কাঁদলেন সেলেনা
জেনিফারের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, ওবামার সংসার ভাঙার খবর কতটা সত্য
বিবিসির তথ্য অনুসারে, ব্যক্তিগত জীবনে তিনবার বিয়ে করেন এবং বিবাহবিচ্ছেদ হয় মারিয়ানার। ১৯৬৫ সালে জন ডানবারকে বিয়ে করেন। কিন্তু এক বছর পরই ভেঙে যায়। ১৯৭৯ সালে বেন ব্রিয়ারলির সঙ্গে ঘর বাঁধেন। সাত বছর পর এ সংসারও ভেঙে যায়। ১৯৮৮ সালে অভিনেতা জর্জিও ডেলা টেরজাকে বিয়ে করেন। ১৯৯১ সালে এ সংসারেরও ইতি টানেন এই গায়িকা। মৃত্যুকালে নিকোলাস ডানবার নামে একটি পুত্রসন্তান রেখে গেছেন মারিয়ান।
১৯৪৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেডে জন্মগ্রহণ করেন মারিয়ান। ১৯৬৪ সালে গানের ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রখ্যাত ব্যান্ড দ্য রোলিং স্টোনের ম্যানেজার অ্যান্ড্রু লুং ওল্ডহ্যাম তাকে আবিস্কার করেন।
মারিয়ানের তুমুল জনপ্রিয় ‘আ টিয়ার্স গো বাই’ গানটি ছিল রোলিং স্টোনের দুই সদস্য মিক জ্যাগার ও কেই থ রিচার্ডসেরই লেখা। আলোচিত এ গান ছাড়াও মারিয়ানের আরো দুটি আলোচিত গান রয়েছে। সেগুলো হলো— ‘কাম অ্যান্ড স্টে উইথম মি’ ও ‘দ্য লিটল বার্ড অ্যান্ড সামার নাইটস’। ‘দ্য গার্লস অব আ মোটরসাইকেল’ ছাড়াও ‘ঘোস্ট স্টোরি’, ‘হ্যামলেট’, ‘শপিং’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।
ঢাকা/শান্ত