হলগুলোতে ফিরছে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা, এখনও নানা সমস্যা
Published: 17th, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সোহরাওয়ার্দী হল। গত বছরের নভেম্বরে এই হলের খাবারে পাওয়া গিয়েছিল সিগারেটের টুকরো। এর আগে এ হলের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে তেলাপোকা পাওয়া গিয়েছিল। খাবারের নিম্নমানসহ নানা কারণে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও আন্দোলন চলত এই হলে। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী হলের চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এই হলে খাবারে চালু হয়েছে নতুন ব্যবস্থা, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী হলে নতুন করে চালু হয়েছে ‘মেস’ ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুর্চিদের পরিবর্তে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হলের এই নিয়মে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই কমিটি গত শুক্রবার থেকে ১৫ দিনের কার্যক্রম শুরু করেছে। মেস পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে ১৫ দিনের অর্থ একসঙ্গে নিয়েছে কমিটি। খাবারের পদ ও ধরনেও অন্যান্য হলের তুলনায় এসেছে ভিন্নতা। ৩০ টাকায় এই হলে এখন ভাতের সঙ্গে পাওয়া যায় তিনটি তরকারি। কমিটির সদস্যরা জানান, নিয়মিত আয়োজনে ভাতের সঙ্গে একটি আমিষ ও দুটি শাক-সবজির আয়োজন থাকবে।
সোহরাওয়ার্দী হলের এই ব্যবস্থা অনুসরণের কথা চলছে অন্যান্য হলেও। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু খাবার বা আবাসন নয়; রাজনৈতিক দখলদারিত্বমুক্ত হওয়ায় হলগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা। কোনো ধরনের ভোগান্তি, তদবির, নেতাদের ধরাধরি ছাড়াই বৈধভাবেই সিটে উঠতে পারছেন তারা। তবে এখনও পানি, ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে।
পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬৬ সালে চবির যাত্রা শুরু। কিন্ত প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পেরিয়ে এখনও পূর্ণ আবাসিক হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আসন মাত্র পাঁচ হাজার। ছাত্রদের আবাসিক হলে মাত্র দুই হাজার ৭১৪ ও ছাত্রী হলে দুই হাজার ৩৮৪ জনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এই হলগুলোতেও গত সাত বছরে হয়নি বৈধ আসন বরাদ্দ। নিয়ম মেনে সর্বশেষ এসব হলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন মাসে। এর পর হলগুলোর দখল নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ছাত্রদের সাতটি হলের অধিকাংশ কক্ষই ছিল তাদের দখলে। কোন কক্ষে কে থাকবে, সেটা নির্ধারণ করতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। কয়েক দফা চেষ্টা করেও প্রশাসন বৈধভাবে হলে আসন বরাদ্দে ব্যর্থ হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে পাল্টেছে এ চিত্র।
আলাওল হলের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, হলে শৃঙ্খলায় আগের চেয়ে বেশ পরিবর্তন দেখছি। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংঘাত না থাকায় বেশ স্বস্তিতে আমরা। খাবারের মান কিছুটা ভালো হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজা শুরুর আগেই লেবু শসা ও বেগুনে উত্তাপ
অন্য বছরের তুলনায় এবার রোজার আগে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বলা চলে এক প্রকার স্বাভাবিক। তবে কয়েকটি পণ্যে রোজার আঁচ লেগেছে। বিশেষ করে এ তালিকায় রয়েছে লেবু, বেগুন, শসাসহ ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন পণ্য। চাহিদা বাড়ার সুযোগে পণ্যগুলোর দর কিছুটা বেড়েছে।
শুক্রবার ছুটির দিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার চাঁদ দেখা গেলে রোববার থেকে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগে সবাই অগ্রিম বাজার করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এর কিছুটা প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। ফলে প্রায় এক মাস ধরে দর বাড়তি। এ ছাড়া বেগুন, শসাসহ যেগুলোর দাম বেড়েছে তার মূল কারণ ক্রেতাদের বেশি পরিমাণে কেনা। রোজার আগমুহূর্তে প্রতিবছরই এসব পণ্যের দর বাড়ে। তবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনের দিনগুলোতে দর বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা।
শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। রমজানে ইফতারে কমবেশি সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে প্রতি হালি শরবতি বা সুগন্ধি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আকারভেদে অন্য লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাসখানেক আগে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে কেনা গেছে লেবুর হালি। তবে এখনও বাড়লেও গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে দাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, লেবুর উৎপাদন কম। কারণ, এখন লেবুর মৌসুম নয়। তাছাড়া অনেক দিন ধরে বৃষ্টিপাত নেই। এ জন্য ফলন ভালো হচ্ছে না। সেজন্য বাজারে লেবু কম আসছে। কিন্তু রোজার কারণে মানুষ আগেভাগে লেবু কিনছেন। মূলত এ জন্য দর বাড়তি।
বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে। হাইব্রিড ও দেশি শসার পাশাপাশি ছোট আকারের খিরাও পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসা ও খিরার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেনা গেলেও দেশি জাতের শসা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব শসা অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা কমে কেনা গেছে। অবশ্য, এ দর গেল রমজানের চেয়ে বেশ কম। গত বছর এ সময় শসার কেজি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ছুঁয়েছিল।
এখনও টমেটোর ভর মৌসুম চলছে। ফলে বাজারে দেশি টমেটোর পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। সেজন্য দাম এখনও নাগালে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়।
বেগুনি তৈরি করতে লম্বা বেগুনের দরকার হয়। সেজন্য রোজার সময় লম্বা বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে দামে। পাঁচ-ছয় দিন আগেও প্রতি কেজি লম্বা বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুণের মতো দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ভ্যান থেকে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে অন্তত আরও ১০ টাকা। বছরের অন্য সময়ে গোল বেগুনের দর বেশি থাকলেও এখন স্বাভাবিক। প্রতি কেজি কেনা যাবে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, এখনও শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। লম্বা বেগুনের চাহিদা বেশি। এ কারণে কেউ কেউ দর বেশি নিচ্ছে। তবে অন্য জায়গায় দর বাড়লেও কারওয়ান বাজারে বাড়েনি বলে দাবি করেন এই বিক্রেতা।
গাজরের সরবরাহ রয়েছে বেশ ভালো। ফলে দর বাড়ার তালিকায় উঠতে পারেনি মিষ্টি জাতীয় সবজিটি। প্রতি কেজি গাজর কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম দরে মিলছে পেঁয়াজ। মানভেদে দেশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
রমজানে কাঁচামরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার ঝালজাতীয় পণ্যটির দর নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাস দুই-তিনেক ধরে এ দরের আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে মরিচ।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বিকাশ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, রোজা উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকা মহানগরে ১০টি বিশেষ তদারকি দল মাঠে নামবে। তারা বিভিন্ন বাজারে তদারকি করবে। রমজানজুড়ে চলবে এ তদারকি কার্যক্রম। রোববার সকালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কারওয়ান বাজারে এ তদারকি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।