Samakal:
2025-03-03@21:22:18 GMT

ছড়া কবিতা

Published: 17th, January 2025 GMT

ছড়া কবিতা

শেখ সালাহ্উদ্দীন 
শীত আসে না 
মায়ের কাছে

শীতের কামড় লাগলে গায়ে পৌষ-মাঘে
বাঘেরও হয় মেজাজ খারাপ, চেঁচায় রাগে।
শীতে কাঁপে হাড়-মাংস; দাঁতের মাড়ি     
রয় না বশে, ওপর-নিচে মারে বাড়ি। 
শিকার ধরে আহার করাও মাথায় ওঠে  
প্রাণ বুঝি যায় বেরিয়ে ওদের শীতের চোটে।

গরু ছাগল সকাল-রাতে কাঁপে শীতে
ওদের দিকেও হয় আলাদা নজর দিতে
গৃহস্থ তাই ওদের গায়ে পরায় ছালা    
মাঝে মাঝে গোয়ালে হয় আগুন জ্বালা! 

মা যতই বকুনি দেয়, উঠতে বলে
ঘাপটি মেরে আমরা থাকি লেপের তলে। 
লেপের তলে আয়েশি ওম বেশ তো লাগে 
ওমটা ভেঙে সাতসকালে কে-বা জাগে।    

দস্তানা শাল মাঙ্কি-টুপি পরা, তবু-
বুড়ো দাদু ঘরের মাঝে জবুথবু
মাটির তাওয়ায় নিভু নিভু আগুন সেঁকে
হচ্ছে না ওম, শিরদাঁড়া তার যাচ্ছে বেঁকে।
বলে হেঁকে- বউমা আবার কোথায় গেলে
নতুন আগুন দাও নেভা এই আগুন ফেলে।

ড্রয়িং-রুমে বসে চেঁচায় বড় চাচা- 
যাচ্ছি জমে, চা ছাড়া তো যায় না বাঁচা!   
এক পেয়ালা চা দিতে হয় এতো কি লেট? 
আনতে চা-টা ছোট বউ কি গেছে সিলেট?   

শীত আসে না কেবল আমার মায়ের কাছে
পাত্তা দেবে শীতকে এমন সুযোগ আছে? 
কাজের চাপে হয় না রাখা শীতের খবর 
হোক না সে শীত হাড়-কাঁপানো, তারচে’ জবর!
 

 

প্রজীৎ ঘোষ 
নতুন দিনে নতুন আশা

নতুন দিনে নতুন আশার স্বপ্ন করি চাষ;
নতুন আলোয় আলোকিত আমাদের চারপাশ।
পুব আকাশে নতুন সূর্য যখন দিলো উঁকি;
গরম লেপের আদর ঠেলে উঠে পড়লো খুকি।

কুয়াশারা লুকোয় কোথায়, কোথায় বা সে থাকে?
শীতের রাতে আকাশ কেন এমন ছবি আঁকে?
এমন হাজার প্রশ্ন ঘোরে খুকির ছোট্ট মাথায়;
হাজার স্বপন নিয়ে ঘুমায় দুইটি চোখের পাতায়। 

নতুন করে নতুন ভোরে নতুন লুকোচুরি;
শীতের চোটে কাঁপছে দ্যাখো থুত্থুড়ে এক বুড়ি। 
বুড়ি তো নয়, নয় সে বুড়ি হিম কুয়াশার চাঁদ;
নতুন দিনে নতুন আশা ভাঙলো খুশির বাঁধ।
 

 

সুমন বনিক 
শীতের পিঠে

ফাস্টফুডে আর জাঙ্কফুডে
মেজাজটা খিট-খিটে  
এসব খেয়ে দেশি পিঠার
স্বাদটা কি আর মিটে?

শিকড় খুঁড়ে তাই তো খুঁজি 
বাংলার পিঠে-পুলি 
গ্রামে-গঞ্জের হৃদয় জুড়ে 
রসনার সেই বুলি!

মায়ের হাতের মিষ্টি পায়েস
ভাপা চিতই পিঠে 
মুগেরকুলি পাটিসাপটা 
স্বাদটা যে কী মিঠে!

পৌষ-পাবনের রাতের স্মৃতি
যাইনি আজো ভুলে
সুঘ্রাণে তাই মনটা ভরি
স্মৃতির দুয়ার খুলে।

 

 

শাহরিয়ার শাহাদাত 
বাংলাদেশি ভ্যান

ঘড়ির কাঁটা হাঁটছে ঠিকই 
দৌড়ে লুকায় দিন 
শীতবিকেলের মিষ্টি সময়
জলদি লুফে নিন। 
বলছি কেন, আবাক হলেন
এমন অফার হয়?
দিন গিলে খায় মাঘের দত্যি
জানেন তো নিশ্চয়!

শীতের এমন দই কুয়াশায় 
ডিগবাজি দেয় রোদ
সীমিত এই রোদ প্যাকেজের
করছি অভাববোধ! 
রাতের বদল দিনটা শীতে
বড়ত কিছু, ইস! 
স্কুলের মাঠে ঝিমায় বিকেল
আলসে-নিরামিষ। 

কখন ক্লাসের শুরু ও শেষ
ভীষণ অবাক হই
ব্যাগের ভেতর কাঁপছে যেন
ঠান্ডা টিফিন, বই! 
তাই বলি কী– ও শীত বুড়ো
সাইবেরিয়ান ম্যান
ফ্রি টিকিটে যাবেন? রেডি
বাংলাদেশি ভ্যান!
 

 

চন্দনকৃষ্ণ পাল 
রঙ

বিকেলগুলো সোনালি রঙ
মাখিয়ে যায় গাছের ডালে 
সবুজ এবং সোনালিতে 
কী আনন্দ পাহাড় ঢালে।

পুব পাশের ঐ কালচে সবুজ 
ওখান থেকেই চোখটা মেলে 
দূর আকাশের সোনালি রঙ 
ছোঁয়াছুয়ির খেলা খেলে।

বিকেলগুলো কী আনন্দে ভরা 
আকাশকনের রঙটা দিয়ে গড়া। 
 

 

সনজিত দে 
একমুঠো রোদ

হাড়কাঁপানো শীতে
মিলেছি সঙ্গীতে
যাচ্ছি হাটে সকাল সকাল ভাবছি যেতে যেতে
আস্তে-ধীরে উষ্ণতায় এক রোদ উঠেছে তেতে।
রোদ নিয়ে তাই ফিরবো বাড়ি
চল না গাড়ি তাড়াতাড়ি
ব্যাগ ভরে আজ রোদকে নিয়ে ফিরবো যখন বাড়ি
সব ছায়ারা পড়বে ঢাকা শুকাবে মা’র শাড়ি।

ফর্সা হবে উঠোন যখন
ফিক করে মা হাসবে তখন
এমন হাসি দেখিনি মার অনেক বছর ধরে
সেই যে বাবা হারিয়ে গেছে হঠাৎ ফুড়ুৎ করে।

রোদ দিয়ে তাই হাসি কিনি পেয়ে রোদের ছটা
গাছগাছালি পশু-পাখি হাসছে করে ঘটা।
সব পেয়েছি রোদকে দিয়ে যেন মনে হয়
শীতের সকাল একমুঠো রোদ বুঝেছ নিশ্চয়।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নুরুল হক নুর কি অন্য দলে যাচ্ছেন? কী বলছেন রাশেদ খান

‘গণ অধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে নুরুল হক নুরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা এখন এগুলো প্রচার করছেন মূলত মিডিয়ায় হাইপ (অতিরঞ্জিত) করার জন্য যে, তাদের দলে অনেক মানুষজন যোগদান করছে।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপিতে) যোগ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে সমকালকে এ কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার রাতে সমকালের মামুন সোহাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।     

এনসিপিতে যোগদানের কথা একটি জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে- এর সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হক নুর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি এই মুহূর্তে ইতালিতে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, আমিও দেখলাম হান্নান মাসুদ (জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, আমার মনে হয় গণমাধ্যমের উচিত একপাক্ষিক বক্তব্য প্রচার না করে উভয়ের বক্তব্য নেওয়ার পরে একটি সিদ্ধান্তে আসা বা সেই বক্তব্য প্রচার করা। তিনি যা বলেছেন সেই কথাটার সত্যতা বা ভিত্তি কতটুকু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। 

রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নাহিদ ইসলাম (অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম  (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জায়গায় যারা রয়েছেন তারা আমাদের ডেকেছেন এবং আমাদের মতামত নিয়েছেন। মন্ত্রী পাড়ায় তাদের যেখানে বাসা সেখানেই সেই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের দল গঠন থেকে শুরু করে জোট গঠন বা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে। শুধু আমাদের সাথেই না এ রকম অনেকের সাথেই তারা বসেছে, কথা বলেছে, আলোচনা করেছে। সেখানে একটা সময় তারা আমাদের তাদের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে জোটের আসলে কতটুকু ভিত্তি আছে তা দেখেছি। জোটের মধ্যে মনোমালিন্য ভুল বোঝাবুঝি, জোট ভাঙার সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু আমাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করেছি, এক সাথে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি সুতরাং আমরা একসাথে কিছু করতে পারি। একীভুত হয়ে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। যেহেতু এখন গণমানুষের নতুন কিছু আকাঙ্খা আছে, গণতন্ত্রের আকাঙ্খা আছে এই বিষয়গুলো শুধু এভাবেই আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছি তারা এক হয়ে কীভাবে বড় পরিসরে কোনো কিছু করা যায় এই জিনিসটা তারাই কিন্তু প্রস্তাব দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তারা এখন এভাবে প্রচার করছেন মিডিয়ায় যে, অনেক মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগদান করছে। দেখেন তারা যখন দল গঠন করল, তার আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা দেখলাম যে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলে যোগদান করছে। আসলে এটি কতটুকু সত্য? তারা মূলত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সরকারি যে ক্ষমতা সেটা কিন্তু ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে, আপনারা আমাদের সাথে আসেন, আপনাদেরকে আমরা অমুক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেব এবং নির্বাচনের সমস্ত খরচ দেব।’

তিনি বলেন, ‘তারা এক্ষেত্রে এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হলাম। কারণ আমার জায়গা থেকে এ ধরনের বিতর্কে সূত্রপাত করা,  সেটি নিয়ে সমালোচনা, আলোচনা, পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আসলে ঠিক না। এখন যেহেতু এটি নিয়ে বিভক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং আপনি প্রশ্ন করলেন, জানতে চাইলেন সেটির আলোকে কিন্তু এই কথাগুলো বলা। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ 

তাহলে নুরুল হক নুর অন্য কোনো দলে যাচ্ছেন না- এটি নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। এই দল তো কোনো কিংস পার্টি না, বা কোন সরকারি বলয়ের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং এই দল ছেড়ে তো অন্য কোনো দলে নুরুল হক নূরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি সেটিই হতো তাহলে তো আমরা দল গঠন না করে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ জাতীয় পার্টিতে, কেউ জামায়াতে যোগ দিতাম। আমার মনে হয় না নুরুল হক নুর আসলে সেই দলে যুক্ত হবেন এমন কোনো কথা বলেছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াই হাইপ (অতিরঞ্জিত) তৈরি করার জন্যই তারা এ রকম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করছে। এর আগে দল গঠনের আগেও একই ধরনের বক্তব্য প্রচার করেছিল যে নুরুল হক নুর তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কমিটি তো হয়ে গেছে, তিনি তো যুক্ত হননি।’  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ