এ যেন আজব এক খেলা। এই খেলায় নেই কোনো রেফারি, নেই কোনো দল, সীমানা অসীম। যার ইচ্ছে খেলতে পারেন। যার ইচ্ছে হবে না তিনি নাও খেলতে পারেন। তবুও এ খেলা দেখতেই মানুষের ঢল নামে। দেশে তো নয়ই; বরং পৃথিবীতে এমন খেলা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। খেলাটির নাম ‘হুমগুটি’। ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী এই খেলা ব্রিটিশ জমিদার আমল থেকে শুরু হলেও, এখনও চলে আসছে। পৌষ মাসের শেষ দিনকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ‘পুহুরা’। প্রতিবছর এই দিনে পিতলের মোড়কে তৈরি ৩০ কেজি ওজনের একটি ভারী বল নিয়ে কাড়াকাড়ি চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন।
জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশাল উপজেলার বৈলরের হেমচন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতিকাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশ, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ছয় শতাংশ। একই জমিদারের ভূখণ্ডে দুই নীতি থাকতে পারে না। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ইআটা নামক স্থানে ‘তালুক-পরগনার সীমানায়’ এ গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। গুটি গুমকারী এলাকা ‘তালুক’ এবং পরাজিত অংশ ‘পরগনা’ হিসেবে স্বীকৃত হবে। জমিদার আমলের সেই গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হয়। এভাবেই তালুক পরগনার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে এই খেলার গোরাপত্তন, যা আজও চলছে। তবে পিতলের গুটির ওজন কমেছে। এখন ৩০ কেজি ওজনের পিতলের গুটি ব্যবহার করা হয়।
বংশপরম্পরায় এখন খেলাটি পরিচালনা করেন এবি সিদ্দিক। ৩০ বছর ধরে তিনি এ খেলার হাল ধরে আছেন। পিতা মরহুম আব্দুল সালাম মণ্ডল। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সিদ্দিক মেজো। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক দলের নাট্যকার-গীতিকার হিসেবে কর্মরত।
খেলা উপলক্ষে মেয়েরা আসেন বাপের বাড়ি। দর্শক হিসেবে থাকার আনন্দ থেকে বাদ পড়তে চান না তারাও। বাড়ি বাড়ি চলে পিঠাপুলির উৎসব। খেলাস্থলে জমে ওঠে গ্রামীণ ‘পহুরা’ মেলা। উপজেলার লক্ষ্মীপুর, দেওখোলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোয় দু’তিন দিনব্যাপী চলে উৎসব আমেজ।
‘হুমগুটি’ স্মৃতি সংসদের পরিচালক এবি সিদ্দিক বলেন, ‘হুমগুটি খেলার মাধ্যমে দুই জমিদারের জমির পরিমাপ বিরোধ সমাধান হয়েছিল। পূর্বজরা প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিন খেলাটি আয়োজন করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা খেলাটির আয়োজন করে আসছি। এবার খেলাটির ২৬৬তম বছর।’
একেক এলাকার একেকটি নিশানা থাকে। ওই নিশানা দেখে বোঝা যায় কারা কোন পক্ষের লোক। ‘গুটি’ কোন দিকে যাচ্ছে, তা মূলত চিহ্নিত করা হয় নিশানা দেখে। নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয় খেলায়। এভাবে গুটি ‘গুম’ না হওয়া পর্যন্ত চলে খেলা। বিকেল থেকে গভীর রাত বা কখনও দু-তিন দিন পর্যন্ত খেলা চলার রেকর্ড আছে। এ বছর হুমগুটি গেছে ত্রিশালের ধানীখোলা ইউনিয়নের পালোয়ানদের দখলে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডার টরেন্টোতে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব
উৎসবমুখর ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩২। কর্মময় একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙালিরা আনন্দ উৎসবে মেতেছিলেন অন্যরকম এক মিলনমেলায়।
স্থানীয় সময় রোববার দুপুর ১টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় শপার্স ওয়ার্ল্ড এর পার্কিং লট থেকে। এসময় প্রচুর সংখ্যক অভিবাসী বাঙালি পায়ে হেঁটে টায়রা এভিনিউ ধরে সমবেত হন ডেন্টনিয়া পার্ক শহীদ মিনার পাদদেশে।
টরেন্টোর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা ডেন্টোনিয়া পার্কে বৈশাখের রঙ, ভালবাসার রঙ, আড্ডার রঙ, লোকজ ভাবনা, বাংলার ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় একে অপরের সান্নিধ্যে শ্রদ্ধা, ভালবাসা বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়-মন ভরে উঠেছিল প্রবাসী জীবনের আনন্দ জয়গানে। এদিন শিশু কিশোরদের হাতে মুখ ও মুখোশ নিয়ে ছিল বৈশাখী মঙ্গলশোভা যাত্রা।
আয়োজকরা জানান, নবপ্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার কৃষ্টি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় স্বত্ত্বাকে তুলে ধরাই ছিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের মূল লক্ষ্য।