জীর্ণ শ্রেণিকক্ষে পড়ায় মন বসে না শিক্ষার্থীদের
Published: 17th, January 2025 GMT
নেই দরজা-জানালা ও কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী। গ্রামীণ কাঁচা সড়কের পাশে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। তেমনি বর্ষা মৌসুমে শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে। এমনই পরিবেশে চলছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির দোছড়িপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এতে পড়াশোনায় মন বসে না শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক পরিবারের শিশুর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে কার্বারি ও স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১৬ সালে দোছড়িপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। মাত্র চারজন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা বিদ্যালয়টিতে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০। এ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন পাঁচজন শিক্ষক। অভিভাবক ও স্থানীয়দের সহায়তায় নামেমাত্র সম্মানীতেই চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়তে থাকায় বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের পাশাপাশি নেই মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ। একটি কক্ষে চলছে দুটি শ্রেণির কার্যক্রম। নেই পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চের সুব্যবস্থা। শিক্ষার উপযোগী যে পরিবেশটুকু দরকার, তার ছিটেফোঁটাও নেই এ বিদ্যালয়ে। তার পরও চলছে কার্যক্রম। দোছড়িপাড়ার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই নানা ভোগান্তি সত্ত্বেও শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা।
পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থী খুশি চাকমা, অর্জিত চাকমা ও রুপান্ত চাকমা জানায়, বৃষ্টি এলে তাদের গায়ে পানি পড়ে, জামাকাপড়সহ বইখাতা ভিজে যায়। দরজা-জানালা ভাঙাঘরে তাদের পড়াশোনায় মন বসে না।
আলাপকালে চতুর্থ শ্রেণির আদর্শি চাকমা, রাজশ্রী চাকমা ও পরমি চাকমা জানাল, তারা সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মতো পাকা স্কুলভবনে পড়ার স্বপ্ন দেখে।
দূরবর্তী শিক্ষার্থী রতন বিকাশ চাকমা, সাধী কুমার চাকমা ও সুবধন চাকমা তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলে, কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে নিয়মিত আসা যায় না। তার মধ্যে স্কুলের পরিবেশও খারাপ। এতে তাদের মন বসে না।
একাধিক অভিভাবকের ভাষ্য, দোছড়িপাড়ার অধিকাংশ পরিবারের লোকজন খেটে খাওয়া ও অসচ্ছল। তাদের পক্ষে উপজেলা সদরের উন্নত স্কুলে সন্তানের পড়াশোনা করানো সম্ভব নয়। তাই বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পড়াশোনা যেমনই হোক, এটিই তাদের ভরসা। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, নামেমাত্র বেতনে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুনা দুর্গম এ জনপদে বেড়ে
ওঠা বহু শিশু-কিশোর শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে পড়ে নিরক্ষর থেকে যাবে। যেদিন বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হবে, সেদিন তাদের সুদিন ফিরবে বলে তারা আশাবাদী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেমন্ত চাকমা জানান, দুর্গম এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তেমন বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না। অবিলম্বে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করার দাবি জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা নিয়ে বিদ্যালয়টি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কিন্তু জরাজীর্ণ অবস্থা ও শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া মুশকিল। বিদ্যালয়ে পাকা ভবন ও মানসম্মত শৌচাগারের খুবই প্রয়োজন বলে জানান বিদ্যালয়ের সভাপতি দেবরণ চাকমা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার চৌধুরী বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠানো উন্নয়নসহ জাতীয়করণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে
অবহিত করা হয়েছে। জাতীয়করণ কার্যক্রম চালু হলে ওই বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদী।
মানিকছড়ির ইউএনও তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব সরক র পর ব শ উপজ ল অবক ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যায়ক্রমে সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধনভুক্ত সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি মেনে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হবে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বৈঠক শেষে বিকেলে চারটার দিকে শাহবাগে এই কথা জানান কারিগরি মাদ্রাসা বিভাগের যুগ্ম সচিব এসএম মাসুদুল হক।
তিনি জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ছয় দফা দাবি মন্ত্রণালয় মেনে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। দাবি ছিল, একাডেমিক স্বীকৃতি বন্ধ আছে; সেটা জুন থেকে চালু হবে। ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তকরণ ২০২৫ সাল থেকেই শুরু। প্রাথমিক পর্যায়ে যে ১৫১৯টি অনুদানভুক্ত প্রাথমিক স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে, সেগুলোসহ অন্যান্য সকল মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হবে।
এ সময় শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি।
যুগ্ম সচিব জানান, ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হবে। তার এই আশ্বাসে শাহবাগ ছেড়েছেন শিক্ষকরা।
ঢাকা/রায়হান/এনএইচ