নেই দরজা-জানালা ও কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী। গ্রামীণ কাঁচা সড়কের পাশে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। তেমনি বর্ষা মৌসুমে শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে। এমনই পরিবেশে চলছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির দোছড়িপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এতে পড়াশোনায় মন বসে না শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী শতাধিক পরিবারের শিশুর মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে কার্বারি ও স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১৬ সালে দোছড়িপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। মাত্র চারজন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা বিদ্যালয়টিতে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০। এ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন পাঁচজন শিক্ষক। অভিভাবক ও স্থানীয়দের সহায়তায় নামেমাত্র সম্মানীতেই চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়তে থাকায় বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের পাশাপাশি নেই মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ। একটি কক্ষে চলছে দুটি শ্রেণির কার্যক্রম। নেই পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চের সুব্যবস্থা। শিক্ষার উপযোগী যে পরিবেশটুকু দরকার, তার ছিটেফোঁটাও নেই এ বিদ্যালয়ে। তার পরও চলছে কার্যক্রম। দোছড়িপাড়ার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই নানা ভোগান্তি সত্ত্বেও শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা। 
পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থী খুশি চাকমা, অর্জিত চাকমা ও রুপান্ত চাকমা জানায়, বৃষ্টি এলে তাদের গায়ে পানি পড়ে, জামাকাপড়সহ বইখাতা ভিজে যায়। দরজা-জানালা ভাঙাঘরে তাদের পড়াশোনায় মন বসে না।
আলাপকালে চতুর্থ শ্রেণির আদর্শি চাকমা, রাজশ্রী চাকমা ও পরমি চাকমা জানাল, তারা সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মতো পাকা স্কুলভবনে পড়ার স্বপ্ন দেখে।
দূরবর্তী শিক্ষার্থী রতন বিকাশ চাকমা, সাধী কুমার চাকমা ও সুবধন চাকমা তাদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলে, কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলে নিয়মিত আসা যায় না। তার মধ্যে স্কুলের পরিবেশও খারাপ। এতে তাদের মন বসে না।
একাধিক অভিভাবকের ভাষ্য, দোছড়িপাড়ার অধিকাংশ পরিবারের লোকজন খেটে খাওয়া ও অসচ্ছল। তাদের পক্ষে উপজেলা সদরের উন্নত স্কুলে সন্তানের পড়াশোনা করানো সম্ভব নয়। তাই বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পড়াশোনা যেমনই হোক, এটিই তাদের ভরসা। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।  
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, নামেমাত্র বেতনে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুনা দুর্গম এ জনপদে বেড়ে 
ওঠা বহু শিশু-কিশোর শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে পড়ে নিরক্ষর থেকে যাবে। যেদিন বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হবে, সেদিন তাদের সুদিন ফিরবে বলে তারা আশাবাদী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেমন্ত চাকমা জানান, দুর্গম এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তেমন বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না। অবিলম্বে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করার দাবি জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা নিয়ে বিদ্যালয়টি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কিন্তু জরাজীর্ণ অবস্থা ও শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া মুশকিল। বিদ্যালয়ে পাকা ভবন ও মানসম্মত শৌচাগারের খুবই প্রয়োজন বলে জানান বিদ্যালয়ের সভাপতি দেবরণ চাকমা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার চৌধুরী বলেন, উপজেলার বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠানো উন্নয়নসহ জাতীয়করণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে 
অবহিত করা হয়েছে। জাতীয়করণ কার্যক্রম চালু হলে ওই বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হবে বলে তিনি আশাবাদী। 
মানিকছড়ির ইউএনও তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব সরক র পর ব শ উপজ ল অবক ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই

নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।

এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’

গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।

দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ