শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে হাওরপারের নারীরা
Published: 17th, January 2025 GMT
মৌসুমের সঙ্গে বদলে যায় প্রকৃতির রূপ। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে হাওরপারের মানুষের সংগ্রামী জীবন। কখনও হাওরে পানি না থাকলে সমস্যা, কখনও আবার জলাবদ্ধতায় বিপত্তি। প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্য মেনে নিয়ে এখানকার মানুষ জীবন ও জীবিকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরুষরা যখন হাওরে মাছ শিকার এবং মৌসুমে আমন ও বোরো ফসলের আবাদে সবচেয়ে বেশি সময় দেন, তখন নারীরা সংসারের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি সহায়ক উপার্জনের উৎস সৃষ্টি করেন সবজি চাষ ও গবাদি পশু পালনে।
হাওরাঞ্চলের নারীদের এই গৎবাঁধা জীবনের প্রাচীর ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নারী শিক্ষার প্রসারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে হাওরপারে নারীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
উপজেলাজুড়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৮৮ সালে তাহিরপুর উপজেলা সদরে যাত্রা শুরু হয় তাহিরপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৩ সালে এমপিওভুক্ত এবং ১৯৯৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয় বিদ্যালয়টি। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৯৭ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন ইয়াহিয়া তালুকদার। তিনি জানান, শুরুর সময় বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৩২০ জন। সর্বমোট নগদ তহবিল ছিল তখন ৫০০ টাকা। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি কলেজে উন্নীত হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অধ্যক্ষের পদে পদায়ন হয় তাঁর। কলেজে উন্নীত হওয়ার আগে হাওরপারের অনেক দরিদ্র নারী শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সুযোগ ছিল না। বর্তমানে সেই সমস্যা নেই। প্রতিবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সন্তোষজনক ফলাফলের কারণে উপজেলাজুড়ে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এই কলেজের। বর্তমানে এর ছাত্রী সংখ্যা প্রায় এক হাজার।
কঠিন সময়ে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরে থাকা বিদায়ী অধ্যক্ষ ইয়াহিয়া তালুকদার জানান, ৫০০ টাকা নিয়ে শুরু হওয়া সেই তহবিল এখন লাখ টাকার কোটায়। প্রতি মাসে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেসরকারি বেতন দেওয়া হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সোনালী ব্যাংক তাহিরপুর শাখার একটি হিসাবে নগদ জমা রয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সেখানে তিনটি দ্বিতল ভবন ও একটি টিনশেড ভবন রয়েছে। উপজেলা সদরে অবস্থিত হওয়ায় জাতীয় দিবস ছাড়াও উপজেলার সব আয়োজন ও উদযাপনের প্রাণকেন্দ্র এই কলেজ।
তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটির ভবন ও আবাসন সংকট থাকার কারণে ছাত্রীদের পাঠদান কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা দরকার।
উপজেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শনির হাওরপারের ঠাকুরহাটি গ্রামের বাসিন্দা অধ্যক্ষ ছায়াদুল কিবরিয়া জানান, ২০১৬ সালের আগে তাহিরপুর উপজেলা সদরে নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানই ছিল না। দাদি, নানি ও মায়েদের মতো এই অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের নারীরাও হয়তো গৎবাঁধা জীবনে বাঁধা পড়ত এই প্রতিষ্ঠান না থাকলে। হাওর এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত। বিদ্যালয়টি কলেজে উন্নীত হওয়ায় হাওরপারের নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছে। এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় ঝরে পড়া নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
ইউএনও আবুল হাসেম জানান, তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন যথাযথভাবেই করা হয়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। স্থানীয় অভিভাবকরা এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। রাজধানী বা নগর অঞ্চলের জন্য বিশেষ কিছু না হলেও হাওরাঞ্চলের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিহার্য।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের আত্মা শুদ্ধ করতে হবে, ঈমান ঠিক করতে হবে : মাজেদুল
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেছেন, আমরা অনেকেই নামাজ পড়ি, কিন্তুু সুদখাই, আমরা নামাজ পড়ি ঘুষখাই, আমরা নামাজ পড়ি নেশার সাথে জড়িত, আমরা নামাজ পড়ি মাদক ব্যবসা করি, আমরা নামাজ পড়ি আবার অন্যেও হক মেরে খাই, আমরা দুর্বল মানুষের উপর জুলুম করি, আমি মনে করি আমাদের এই নামাজ কোন কাজে আসবে না।
আগে আমাদের আত্মাশুদ্ধ করতে হবে, ঈমান ঠিক করতে হবে। আমার মনের ভিতরে এমন বাসনা আনতে হবে যে আমি নামাজ পড়বো মানুষের হক মেরে খাবোনা, আমি নামাজ পড়বো সুদ খাবোনা, আমি নামাজ পড়বো ঘুষ খাবোনা, আমি দুর্বলের উপর জুলুম করবোনা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি দক্ষিনপাড়া যুব ও কিশোর সংঘের উদ্যোগে কবরবাসীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় ১৫তম বার্ষিক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, আজকে আমারা এখান থেকে ওয়াজ শুনে গেলাম জামাতের সাথে ফজর নামাজ পড়লাম না, তাহলে এই ওয়াজ শুনে আমাদের কোন ফয়দা হবে না। আমরা এখানে এসেছি শিখতে, আমরা এখান থেকে শিখবো এবং তা পালন করবো। আমি জানি এই এলাকায় অনেকেই অসহায়দের উপর জুলুম করে, অনেকেই মাদক ব্যবসা করে।
আল্লাহতালা যদি আমাকে কোনদিন সুযোগদেন আমি কিন্তুু আপনাদের ছাড়বো না, নেশার সাথে আমি কোন আপোষ করবোনা। নেশার ব্যবসা যারা করে তাদের সাথে আমি কোন আপোষ করবোনা, তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। আমি যতোদিন বেচে থাকবো আপনাদের সেবা করে যাবো, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যতোদিন বেচে থাকবো এলাকার উন্নয়নে কাজ করবো।
বাইতুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি হাজী বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে ওয়াজ করেন মাওলানা গাজী সোলাইমান আল-কাদরী। বিশেষ বক্তা হিসেবে ওয়াজ করেন হযরত মাওলানা মুফতি বেলাল আহমদ ও হাফেজ মাওলানা মুফতি মোঃ আমানুল্লাহ।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাইতুল আতিক জামে মসজিদের সভাপতি মোঃ ওমর আলী, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এড্যাঃ মাসুদুজ্জামান মন্টু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক কামরুল হাসান শরীফ, ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান, হাজী নুরুল ইসলাম ও লোকমান হোসেন প্রমূখ। মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা মিজানুর রহমান।