Samakal:
2025-03-03@14:31:14 GMT

কাজের নামে ‘অকাজ’ ২০০ কোটি অপচয়

Published: 17th, January 2025 GMT

কাজের নামে ‘অকাজ’ ২০০ কোটি অপচয়

খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩৮০ কোটি টাকা। দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ গত সাড়ে চার বছর শুধু খোঁড়াখুঁড়িতেই সীমাবদ্ধ। যান চলাচলের উপযোগী করতে সড়কটিতে দৃশ্যমান কোনো কাজ না হলেও এর মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কে কাজের নামে ‘অকাজ’ করে ২০০ কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। গত চার বছর এ সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের কোথাও মানসম্মত কাজ হয়নি। দু-এক জায়গায় আগের কার্পেটিংয়ের ওপর নতুন কার্পেটিং করা হলেও সেখানে দেখা দিয়েছে ফাটল।   
কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় ও সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, অবহেলিত জনপদের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার 
প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। অনভিজ্ঞ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় তারা মানসম্মতভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সরকারি টাকার অপচয়ই হয়েছে শুধু, 
কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।   
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ খুলনা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর সঙ্গে বরাদ্দ বাড়িয়েও ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ছিল ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। পরে তা বেড়ে  ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজারে দাঁড়ায়। পাঁচ প্যাকেজে বিভক্ত এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ৬৪ কিলোমিটার সড়ক মজবুত ও ঝুঁকিপূর্ণ  ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ। এ ছাড়া ১০০ মিটার নদী শাসনের কাজও ছিল এ প্রকল্পের আওতায়। তবে নির্দিষ্ট কোনো কাজই শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।  
দেখা গেছে, ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ কাজ অসমাপ্ত রেখে সড়কের কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়া কার্পেটিংয়ের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে ভারী যানবাহনের চাকায় দেবে গেছে। সড়কের দুই পাশে গাইডওয়াল, প্যালাসাইডিংও মাটির চাপে বেঁকে যেতে দেখা গেছে। কয়রা সদর থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত বাঁকের ৩৪ স্থানে কাজ ফেলে রাখায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পরপর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যান চালকদের। বাঁকের স্থানগুলোতে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সে স্থান দিয়ে আন্দাজনির্ভর চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও। 
এ পথে যাতায়াতকারী চালকরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা গেলেও এখন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। সড়কের পুরোনো কার্পেটিং তুলে দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে নতুন কর্পেটিং করা হলেও সেখানে পিচ উঠে গেছে। বর্তমানে ৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কে নির্বিঘ্নে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। 
বাসচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঠিকাদার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। এক কিলোমিটার কোনোমতে চলতে পারলেও, দুই-তিন কিলোমিটার চলতে হচ্ছে হেলেদুলে। এভাবে ৬৪ কিলোমিটার রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার পরপর দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হয়। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নজরুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে সড়কের ভাঙাচোরা স্থানে খোয়া ফেলে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। অন্য কাজ কখন কীভাবে করা হবে জানি না। 
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ যতটুকু করেছে, তা যৌথভাবে পরিমাপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে। 
মানসম্মত কাজ না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০০ কোটি ছাড় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, প্রকল্পের পাঁচ প্যাকেজের মধ্যে তারা তিনটি ওয়ার্ক প্যাকেজের (ডব্লিউপি) কাজ যথাযথভাবে করেছেন। সে হিসাবে আগের 
যিনি প্রকল্প পরিচালক ছিলেন, তিনি অর্থ 
ছাড়ের সুপারিশ করেন। এ মুহূর্তে ওই 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে দরপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ২০০ ক ট সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

এবার ১২ হাজার শিক্ষার্থীকে ইফতার করালো রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যায়নরত ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (৩ মার্চ) দ্বিতীয় রোজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে কেন্দ্রীয় মসজিদে আসতে শুরু করেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে এবং মসজিদ সংলগ্ন বাগানে তারা ইফতারির জন্য সারিবদ্ধভাবে বসেন। এ ছাড়াও নারীদের জন্য মসজিদের বাগানে আলাদাভাবে ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়। এতে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

আরো পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণইফতার আয়োজন করে অভিনব প্রতিবাদ

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ভোটগ্রহণ জুনে

ইফতারে অংশগ্রহণ করতে আসা ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আজকের আয়োজন অনেক ভালো ছিল। এখানে সবার সঙ্গে ইফতার করতে এসে খুবই ভালো লাগছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটা দিন মনে হচ্ছে ঈদের মতো। প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ বলেন, “গতকালের তুলনায় আজকের আয়োজন অনেক ভালো। কাল সব এলোমেলো ছিল। কিন্তু আজকের আয়োজন গোছালো হয়েছে। এত মানুষের সঙ্গে আগে কখনো ইফতার করিনি। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে এখানে মেলা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য।”

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার ইফতেখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমখ।

সার্বিক বিষয়ে জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “আমরা আজ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতার আয়োজন করেছি। যা গতকালের তুলনায় তিনগুণ। আমরা আশা করছি আজ সব ঠিকঠাক মতো হবে। এজন্য সবার সাহায্য প্রয়োজন, যাতে কোন উশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।”

প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রোজার প্রথমদিন রবিবার (২ মার্চ) ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু আয়োজনের তুলনায় অধিক রোজাদার উপস্থিত হওয়ায় ইফতারে সঙ্কট দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করে নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ