Samakal:
2025-04-05@18:13:26 GMT

কাজের নামে ‘অকাজ’ ২০০ কোটি অপচয়

Published: 17th, January 2025 GMT

কাজের নামে ‘অকাজ’ ২০০ কোটি অপচয়

খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩৮০ কোটি টাকা। দুই বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ গত সাড়ে চার বছর শুধু খোঁড়াখুঁড়িতেই সীমাবদ্ধ। যান চলাচলের উপযোগী করতে সড়কটিতে দৃশ্যমান কোনো কাজ না হলেও এর মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কে কাজের নামে ‘অকাজ’ করে ২০০ কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। গত চার বছর এ সড়কে ভোগান্তি নিয়ে চলতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কের কোথাও মানসম্মত কাজ হয়নি। দু-এক জায়গায় আগের কার্পেটিংয়ের ওপর নতুন কার্পেটিং করা হলেও সেখানে দেখা দিয়েছে ফাটল।   
কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় ও সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, অবহেলিত জনপদের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার 
প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। অনভিজ্ঞ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় তারা মানসম্মতভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সরকারি টাকার অপচয়ই হয়েছে শুধু, 
কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।   
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ খুলনা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর সঙ্গে বরাদ্দ বাড়িয়েও ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ছিল ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। পরে তা বেড়ে  ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজারে দাঁড়ায়। পাঁচ প্যাকেজে বিভক্ত এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ৬৪ কিলোমিটার সড়ক মজবুত ও ঝুঁকিপূর্ণ  ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ। এ ছাড়া ১০০ মিটার নদী শাসনের কাজও ছিল এ প্রকল্পের আওতায়। তবে নির্দিষ্ট কোনো কাজই শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।  
দেখা গেছে, ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ কাজ অসমাপ্ত রেখে সড়কের কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়েছে। নির্মাণ শেষ হওয়া কার্পেটিংয়ের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে ভারী যানবাহনের চাকায় দেবে গেছে। সড়কের দুই পাশে গাইডওয়াল, প্যালাসাইডিংও মাটির চাপে বেঁকে যেতে দেখা গেছে। কয়রা সদর থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত বাঁকের ৩৪ স্থানে কাজ ফেলে রাখায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পরপর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যান চালকদের। বাঁকের স্থানগুলোতে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সে স্থান দিয়ে আন্দাজনির্ভর চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও। 
এ পথে যাতায়াতকারী চালকরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সড়কটি দিয়ে ভালোভাবে যাতায়াত করা গেলেও এখন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। সড়কের পুরোনো কার্পেটিং তুলে দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে নতুন কর্পেটিং করা হলেও সেখানে পিচ উঠে গেছে। বর্তমানে ৬৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কে নির্বিঘ্নে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। 
বাসচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঠিকাদার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। এক কিলোমিটার কোনোমতে চলতে পারলেও, দুই-তিন কিলোমিটার চলতে হচ্ছে হেলেদুলে। এভাবে ৬৪ কিলোমিটার রাস্তায় দুই-তিন কিলোমিটার পরপর দুর্ভোগ নিয়ে চলতে হয়। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নজরুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে সড়কের ভাঙাচোরা স্থানে খোয়া ফেলে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। অন্য কাজ কখন কীভাবে করা হবে জানি না। 
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ যতটুকু করেছে, তা যৌথভাবে পরিমাপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে। 
মানসম্মত কাজ না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০০ কোটি ছাড় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, প্রকল্পের পাঁচ প্যাকেজের মধ্যে তারা তিনটি ওয়ার্ক প্যাকেজের (ডব্লিউপি) কাজ যথাযথভাবে করেছেন। সে হিসাবে আগের 
যিনি প্রকল্প পরিচালক ছিলেন, তিনি অর্থ 
ছাড়ের সুপারিশ করেন। এ মুহূর্তে ওই 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে দরপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ২০০ ক ট সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদের পর খাবার ও যাতায়াত খরচ বাঁচাতে যা করবেন

ঈদের আয়োজনে বোনাস তো বটেই, মাসের রোজগারেরও একটা বড় অংশ খরচ হয়ে যায় অনেকের। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে কারও কারও হয়তো জমানো টাকাতেও হাত দিতে হয়েছে। খাবারদাবার, পোশাক, যাতায়াত, সবার জন্য উপহার কেনার মতো বহু খাতেই খরচ করা হয় ঈদের সময়। সাদাসিধে মধ্যবিত্ত সংসারে তাই ঈদের পরপরই খরচের লাগাম টেনে ধরতে হয়। এ মাসের প্রায় পুরোটাই তো বাকি। আকস্মিক বিপদের কথা মাথায় রেখে কিছুটা সঞ্চয় করাও প্রয়োজন। এ সময় সংসারের জন্য একটা বাজেট করে নেওয়া দারুণ ব্যাপার। তাহলে বাড়তি খরচ কমানো সহজ হয়। রোজকার যাতায়াত ও খাবারদাবারের জন্য যে খরচটা হয়, তা কমিয়ে আনার কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক। 

আরও পড়ুনখাবারের অপচয় ও ব্যয় কমাবেন যেভাবে১১ মার্চ ২০২৪খাবারদাবার

কম খরচে খাবারদাবারের আয়োজন প্রসঙ্গে বলছিলেন টাঙ্গাইলের সরকারি কুমুদিনী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান

কম পদ রান্না করে কীভাবে পরিবারের সবার পুষ্টির চাহিদা মিটবে, তা নিয়ে ভাবুন। একই পদে নানা ধরনের উপকরণ যোগ করলে কম পদেই রান্নার ঝামেলা মিটে যাবে। তাতে খরচও কম হবে। মাছ-মাংস ছাড়াও কিন্তু নানা রকম ডাল, বীজ, শাকসবজি, বাদাম প্রভৃতি থেকে পুষ্টি পেয়ে যাবেন। তবে অন্তত শিশু, কিশোর-কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য ডিম-দুধের ব্যবস্থা রাখতে চেষ্টা করুন; মাছ-মাংস রাখতে পারলেও ভালো। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির শারীরিক সমস্যার কারণে বিশেষ ধরনের খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হলে সেটির ব্যবস্থাও রাখুন।

অবশ্যই এমন পদ রান্না করুন, যাতে কম তেল প্রয়োজন হয়।

যা খাওয়া যায়, তা অপচয় করবেন না। লাউ বা মিষ্টিকুমড়ার মতো বিভিন্ন সবজির খোসা দিয়ে ভাজি বা ভর্তা করতে পারেন। তাতে সামান্য চিংড়ি যোগ করলে মুখরোচক হবে।

এমন পরিমাণে রান্না করুন, যেন রয়ে না যায়। তবু যদি খাবার রয়েই যায়, পরদিন তা যেকোনোভাবে কাজে লাগিয়ে ফেলুন। যেমন পাতলা খিচুড়ির মতো করা যায়। এতে শুকনা মরিচ বা পাঁচফোড়নের বাগার দিলে বাসি ভাবটা থাকবে না।

উৎসবের সময়ের কিছু খাদ্যপণ্য রয়ে যেতে পারে ঘরে। সেসব কাজে লাগান।

স্থানীয় কৃষকদের থেকে সরাসরি খাদ্যপণ্য কিনতে পারেন। খরচ কম পড়বে। গ্রামের বাড়ি থেকে কম দামে শাকসবজি কিনেও আনতে পারেন। বাসায় সবজি পরিষ্কার করে নিয়ে বড় টুকরা করে কেটে হালকা ভাপিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলে অনেক দিন পর্যন্ত খাওয়া যায়। তবে তাতে কিছু ভিটামিন নষ্ট হবে। তাই এসব খাওয়ার সময় লেবু এবং কাঁচা সালাদও খাবেন। তাহলে পুষ্টির চাহিদা মিটবে।

আরও পড়ুনখরচ কমিয়ে ৭ দিনই যেভাবে পুষ্টিকর খাবার খাবেন০৬ নভেম্বর ২০২৪যাতায়াত

গণপরিবহনে যাতায়াত করুন। কিছু পথ হাঁটুন। রিকশায় যে পথ যেতে ৩০-৪০ টাকা খরচ হয়, সেই পথটুকুই না হয় হাঁটুন যাওয়া-আসার দুই সময়ে। এভাবে মাসে বেশ কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে। শরীরও সুস্থ থাকবে। দূরের পথে যাতায়াতেও কিছু পথ হেঁটে এগোলে খরচ কমবে। বেশি দূরত্বের পথে এমন কাউকে সঙ্গী করে নিন, যিনি একই গন্তব্যে যাবেন। ভাগাভাগি করে ভাড়া মেটালে খরচ কম হবে। তবে খুব ভালোভাবে চেনেন, এমন মানুষের সঙ্গেই কেবল এই ভাগাভাগি করুন।

আরও পড়ুনখরচ কমাতে চান, কিন্তু সঙ্গী মানছেন না?০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পচবে না কোনো কৃষিপণ্য
  • ঈদের পর খাবার ও যাতায়াত খরচ বাঁচাতে যা করবেন