কুষ্টিয়ায় তামাকের জমিতে বিষ, ৪ কৃষক সর্বশান্ত
Published: 17th, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার মিরপুরে শত্রুতা করে চারজন কৃষকের সাড়ে ১১ বিঘা তামাকের জমিতে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে জমির সমস্ত তামাক পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চারজন কৃষক সর্বশান্ত হয়ে গেছেন।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারী) বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শোলাবিলের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মিরপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কুড়িপোল গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে আব্দুর সাত্তারের চার বিঘা, মনোহার আলীর ছেলে আব্দুল হালিমের চার বিঘা, নুর মোহাম্মদের ছেলে সিরাজুল ইসলামের দুই বিঘা ও আজিজুল হকের দেড় বিঘা তামাকের ফসল ঘাস পোড়ানোর বিষ দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, “বিএটিবি কোম্পানি থেকে ঋণ ও বিঘাপ্রতি জমি ৩০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে তামাক চাষ করেছি। এ তামাক আর কিছুদিন পর ঘরে উঠবে। চার বিঘা তামাক চাষ করতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন দেনার দায়ে আমার মরা ছাড়া কোনো পথ নেই। আর তা না হলে দেশ ছেড়ে চলে যেত হবে। এখন আমি কী করব? ধার দেনা কী করে পরিশোধ করব? আমার আর কিছুই নেই।”
কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, “জেটিআই কোম্পানির কাছে ঋণ ও বিভিন্ন সমিতি থেকে লোন নিয়ে চার বিঘা জমিতে তামাক লাগিয়েছি। সকালে জমিতে এসে দেখি রাতে কে বা কারা ঘাস মারা বিষ দিয়ে আমাদের তামাক পুড়িয়ে দিয়েছে। কার কাছে অভিযোগ দেব? তামাক কোম্পানির লোকজন আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না। কৃষি অফিসারকে জানানো হয়েছে। তবে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।”
সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ঘাসমারা বিষ দিয়ে এ ক্ষতি সাধন করেছে। আমার দুই বিঘা জমির তামাক শেষ। একবিঘা জমিতে আবাদ করতে ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। ধার দেনা করে তামাক পোগানোর জন্য খড়ি কেনা হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা খুবই মুশকিল। মিরপুর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।”
আজিজুল হক বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। জমি লিজ নিয়ে তামাকের আবাদ করেছি। লোকজন সংবাদ দিলো যে তোমার জমিতে ঘাস মারা বিষ দিয়ে তামাক পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চারজন কৃষক পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এ তামাকের আবাদ করেছি। শত্রুতা করে জমিতে বিষ প্রয়োগ করে আমাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে। এখন আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
এ ব্যাপারে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “শোলাবিলের মাঠে চা কৃষকের সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করে তামাক নষ্ট করে দিয়েছে। ঘটনাটি আমি শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সাহায্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।
এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।