ভিডিও অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা মামলায় শেষ পর্যন্ত টিকটকের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালত। শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালত এই রায় দিয়েছে।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, চীনের মালিকানাধীন টিকটক প্ল্যাটফর্ম তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এর কারণে ক্ষুণ্ন হচ্ছে ব্যবহারকারীদের তথ্য-উপাত্তের নিরাপত্তা। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে গত বছর কংগ্রেসে একটি আইন পাস হয় এবং তাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্বাক্ষর করেন। আইনটিতে বলা হয়েছে টিকটকের মূল কোম্পানি, চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে, অর্থাৎ নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের আগের দিন, তার মার্কিন অপারেশন বিক্রি করতে হবে। নতুবা এটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করতে হবে।

টিকটক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে একটি। প্রায় ১৭ কোটি আমেরিকান এই অ্যাপ ব্যবহার করে - যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এদের মধ্যে অনেক তরুণও রয়েছে। 

আদালত জানিয়েছে, গত বছর কংগ্রেসে দ্বিদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হওয়া এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষরিত আইনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করেনি। 

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বাকস্বাধীনতার সরকারি সংকোচনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। আবেদনকারীর দাবি ছিল, সরকারের পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন।

আদালত বলেছে, “কোনো সন্দেহ নেই যে, ১৭ কোটিরও বেশি আমেরিকানের জন্য, টিকটিক অভিব্যক্তি প্রকাশের একটি স্বতন্ত্র ও বিস্তৃত পথ, সম্পৃক্ততার মাধ্যম। কিন্তু কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে টিকটকের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি এবং বিদেশি প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে তাদের সমর্থিত জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো মোকাবেলা করার জন্য এর বিচ্ছিন্নতা প্রয়োজন। পূর্বোক্ত কারণগুলোর জন্য, আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, চ্যালেঞ্জকৃত বিধানগুলো আবেদনকারীদের প্রথম সংশোধনীর অধিকার লঙ্ঘন করে না।”
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক আইন সংশোধনের দাবি

হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। আর এই তামাক ব্যবহার জনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। অথচ এটি প্রতিরোধযোগ্য। তাই প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যু কমাতে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি অবিলম্বে পাস করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আইনটিকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত করতে ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল–এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করে বলা হয়, সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ (ডিএসএ) নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (পয়েন্ট অব সেল) তামাকজাত পণ্য প্রদর্শনী (প্রোডাক্ট ডিসপ্লে) নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অগ্রগতি ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক সেমিনারে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে)। একইসঙ্গে ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে ৯ জন উপদেষ্টা ও তিন জন সচিবের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে। আমাদের দাবি, অধূমপায়ীদের সুরক্ষা ও তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত আইনটি পাস করা প্রয়োজন।

প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে পরিবারের অর্থনীতি ঠিক থাকে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সমাজের কোনো অংশেই অবদান রাখা যায় না। তাই তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এখনই বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধনের তাগিদ দেওয়া হয়।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এসিডিজি’র অভীষ্ট ৩.৪ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এফসিটিসি’র আলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন।’’

সেমিনারের প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের দেশে তামাক সেবনের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে বেশি। তামাকজনিত মৃত্যু আমাদের আতঙ্কিত করে তুলছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে দুটি হাতিয়ার একটি আইন, অন্যটি ট্যাক্স বৃদ্ধি করা। ট্যাক্স বাড়ানো হলে তামাকের ব্যবহার কমে আসে। এজন্যই তামাক কোম্পানিগুলো সব সময় আইন তৈরি ও ট্যাক্স বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এমতাবস্থায় অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান এবং নতুন প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস করতে হবে।’’

সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিকের বলেন, ‘‘নিকোটিন শিশু-কিশোর ও তরুণদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; মূলত মস্তিষ্কের সেই অংশে যা মনোযোগ, নতুন কিছু শেখা, মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। তাই আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে এখনই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।’’

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগ) শেখ মোমেনা মনি ও মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বিসিআইসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের এন্টি-টোব্যাকো অ্যাডভোকেসি’র মেম্বার সেক্রেটারি ডা. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইনসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক আইন সংশোধনের দাবি