স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি বলেছেন, “খেজুর গুড় যশোরবাসীর নিজস্ব শিল্প। যশোর জেলা খেজুর গুড় ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। সারা দেশে যশোরের খেজুর গুড়ের চাহিদা রয়েছে। তাই ভোক্তাদের নির্ভেজাল খেজুর গুড়ের নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় গুড় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন গাছি তৈরি করতে হবে।”

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) যশোরের চৌগাছায় উৎসব মুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে তিন দিনের গুড় মেলা। এই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসিমুল গণি। চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। 

এর আগে গত ধবার (১৫ জানুয়ারি) চৌগাছা উপজেলা চত্ত্বরে গুড় মেলা শুরু হয়। ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

গাছিদের গুড়-পাটালির পসরায় জমজমাট মেলা

ফরিদপুরে কমে যাচ্ছে খেজুর গুড়ের উৎপাদন

নাসিমুল গণি বলেন, “চৌগাছার মানুষ গুড় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মেলার আয়োজন করেছে। আমি এই উপজেলারই একজন। এজন্য আমি এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। মেলায় আগত গাছিরা তাদের উৎপাদিত খাঁটি গুড় ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করার জায়গা পেয়েছে। ক্রেতারাও খাঁটি গুড় কিনতে পারছেন।” 

আরো পড়ুন: গাছিদের গুড়-পাটালির পসরায় জমজমাট মেলা

সভাপতির বক্তব্যে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, “যশোর থেকে কৃষি পণ্যবাহী বিশেষ ট্র্রেনে রাজধানী ঢাকায় যশোরের খেজুর গুড় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।”  

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আ.

খ.ম কবিরুল ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক, যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুস্মিতা সাহা।

শুক্রবার মেলার শেষ দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শেষ সময়ে একটু কম দামে গুড় কিনতে এসেছিলেন অনেকেই। তবে মেলার জমজমাট সমাপনী অনুষ্ঠানে নজর ছিল বেশিরভাগ দর্শনার্থীর। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। 

এবারের মেলায় প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামের গাছি আব্দুর রাজ্জাক। দ্বিতীয় পুরস্কার সাত হাজার টাকার চেক পেয়েছেন একই উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের গাছি আবুল গাজি। তৃতীয় পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের গাছি মিজানুর রহমান। ১১টি ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ১১জন গাছিকেও পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী সব গাছিদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।

ঢাকা/রিটন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লার বিজয়পুরের যে হাটে অর্ধশত বছর ধরে বিক্রি হয় ‘শ্রম’

সোমবার বেলা ১১টা। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে বিজয়পুর রেলগেট এলাকায় যেতেই চোখে পড়ল কয়েক শ মানুষের জটলা। সেখানে কেউ ক্রেতা, কেউ বিক্রেতা। একটু কাছে যেতেই চোখে পড়ল ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দর-কষাকষি চলছে। তবে সেখানে কোনো পণ্য নেই, এরপরও বেচাকেনা যেন জমজমাটভাবেই চলছে। কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, এখানে বিক্রি হয় মানুষের শ্রম।

সেখানে থাকা ব্যক্তিদের কারও হাতে কাঁধের ভার, আবার কারও হাতে কাস্তে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ‘শ্রম বিক্রি’ করতে এসেছেন তাঁরা। বর্তমানে বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। এই সময়ে ‘শ্রম বিক্রির হাট’ জমজমাট হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজার লাগোয়া রেলগেট এলাকার এই শ্রম বিক্রির হাট অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। বোরো ধান রোপণ ও কাটার সময় শ্রমিকদের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ফলে বোরো মৌসুমসহ বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা আসেন। হাটে কুমিল্লা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে গৃহস্থরা আসেন কৃষিশ্রমিক নেওয়ার জন্য।

হাটে আসা বিজয়পুর এলাকার গৃহস্থ আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি পাশের এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই এখানে মানুষের হাট দেখে আসছি। এই হাটে সারা বছরই লোক বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে ধান কাটার সময়ে লোকের দাম বেশি। যেমন আজকে লোক নিলাম ৯০০ টাকা দিয়ে। তাঁর থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি তিন বেলা খাবার দিতে হবে। সেই হিসাবে একজন শ্রমিকের পেছনে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা খরচ পড়বে, যা অনেক বেশি।’

বোরো ধান কাটার সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় মজুরি বেশি হয়। এতে খুশি শ্রমিকেরা। অন্যদিকে গৃহস্থরা বলছেন, কৃষিশ্রমিকদের এক দিনের খরচ প্রায় দেড় মণ ধানের দামের সমান।

বোরো মৌসুমসহ বছরের বিভিন্ন সময় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজার লাগোয়া রেলগেট এলাকার এই শ্রম বিক্রির হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকেরা আসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জব্বারের বলীখেলা ঘিরে জমজমাট মেলা
  • কুমিল্লার বিজয়পুরের যে হাটে অর্ধশত বছর ধরে বিক্রি হয় ‘শ্রম’