দ্রুত নির্বাচনের দাবি তোলায় বিএনপির কড়া সমালোচনা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিরোধিতারও সমালোচনা করেছেন তিনি। চরমোনাই পীর বলেছেন, ‘যারা নাকি নির্বাচন করতে অস্থির হয়ে গেছেন, পিআর পছন্দ করছেন না। মানুষ সজাগ হয়েছে। জরিপ করে দেখেন।’

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী যুব আন্দোলনের কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বইমেলার জন্য বাংলা একাডেমির অনুরোধে গণপূর্ত অধিদপ্তর উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করলেও সমাবেশ করে যুব আন্দোলন। তবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য সকালের পরিবর্তে বাদ জুমা সমাবেশ হয়। দুপুরে উদ্যান ছাপিয়ে আশপাশের সড়কও পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের জমায়েতে। শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। 

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে চরমোনাই পীর বলেন, অনেকে মনে করছে বড় তালগাছ হয়ে গেছেন। আসলে  পায়ের নিচে মাটি নেই। চাঁদাবাজ, দখলকারী, খুনিদের মানুষ দেখতে চায় না। গ্রামে একটা কথা আছে- গোদা পা দিয়ে লাথি মারলে শক্তি থাকে না। এটা  জানা হয়ে গেছে।

অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের নতুন কিছু দেওয়ার নেই বলে মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির। 
বিএনপি আওয়ামী লীগকেও নির্বাচনে চায়, এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেজাউল করিম বলেন, যারা হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, তাদের নির্বাচনের আনার আহ্বান কীসের ইঙ্গিত? মায়েদের কান্না এখনও শেষ হয়নি। আর তাদের নিয়ে এসে ক্ষমতা দখল করবেন। ভারতের দোসরদের খুশি করবেন!

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আবার আপনারা এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের ওপর স্টিম রোলার চালাবেন- তা হবে না। দেশের টাকা পাচার করবেন, বিদেশে বেগম পাড়া করবেন- মানুষ আর তা দেখতে চায় না। প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রেজাউল করীম বলেন, অভ্যুত্থানের হাজারো প্রাণের বিনিময়ে ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু আপনাদের কাজকর্মগুলো অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ। তা দেখে দুঃখ হয়।

সংবিধান সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষের সংসদ এবং নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণের সুপারিশ করেছে। এর বিরোধিতা করে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম বলেন, আসন কম-বেশি হোক সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হতে হবে। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর নারীদের জন্য কোটা রাখা যাবে না।

ফয়জুল করিম বলেন, যারা সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করেছেন, তারা ১৬ বছর কোথায় ছিলেন? রাখঢাক না রেখেই বলব, বিএনপি কোথায় ছিল? প্রতিবার ঈদের পর আন্দোলন হবে বলেছেন। কিছু করতে পারেনি। ছাত্র-জনতা আন্দোলনে যে অর্জন হয়েছে, তা ধ্বংসের চক্রান্ত করছেন। ৫ আগস্টের পরেও চাঁদাবাজি দখলবাজি চলছে। যারা বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, জনগণ তাদের আর ক্ষমতায় চায় না।

আতিকুর রহমান মুজাহিদকে যুব আন্দোলনের সভাপতি ও মানসুর আহমেদ সাকিকে সেক্রেটারি জেনারেল ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করিম। 

যুব আন্দোলনের সভাপতি নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নসহ ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য রাখেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ চরম ন ই প র চরম ন ই প র ক ষমত য় র জন য করব ন ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।

নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।

এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।

অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।

যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।

মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।

শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।

অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।

বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ