টিউলিপ বংশের অভ্যাস বাদ দিতে পারেননি: রিজভী
Published: 17th, January 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঙ্গে বংশের সম্পর্ক টানলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার ভাষ্য, যুক্তরাজ্যের একজন এমপি দুর্নীতি করেছেন এমন উদাহরণ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এটা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিকের রক্ত তো শেখ পরিবারের। তিনি লন্ডনে বড় হয়েছেন, সেখানে লেখাপড়া করেছেন। ওখানে লেখাপড়া করে এমপি হওয়ার পরও তার বংশগত যে অভ্যাস তা তিনি বাদ দিতে পারেননি। তাই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণগুলো এখন বেরিয়ে আসছে।
শুক্রবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এটিএম খালেদের শাহাদাত বার্ষিকীর আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে শেখ হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার ভাগ্নি টিউলিপ ৫০০ কোটি ডলার ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক থেকে সেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এসব গণমাধ্যমে এসেছে।
এটিএম খালেদ হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, এতদিন চলে গেল হত্যার বিচার এখনও হয়নি কেন? এ দায় আপনাদের কৃষিবিদদেরও আছে। আমাদের সবার আছে। এ রকম একজন প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার হলো না, এটা অত্যন্ত কষ্টের বিষয়।
কৃষিবিদ রাশেদুল হাসান হারুন ও জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামিম, কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক কৃষিবিদ শাহাদাত হোসেন বিপ্লব প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি আরও ৩০ বছর বাঁচতে পারতাম, কিন্তু মরতে চাই’: কেন স্বেচ্ছায় মরতে চান এই কানাডীয়
একটি নাট্যশালার মঞ্চে বসে আছেন এপ্রিল হাবার্ড। ওই মঞ্চে অনেকবার পারফর্ম করেছেন তিনি। চলতি বছরের শেষ দিকে সেখানেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন এই নারী।
প্রাণঘাতী কোনো রোগে আক্রান্ত নন এপ্রিল। তবে ৩৯ বছর বয়সী এই পারফরমার ও বার্লেস্ক শিল্পী কানাডার ক্রমবর্ধমান উদার আইনের অধীন সহায়তামূলক মৃত্যুর (স্বেচ্ছায় কারও সহায়তায় যন্ত্রণাহীন মৃত্যু) অনুমোদন পেয়েছেন।
কানাডার নোভা স্কশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর হ্যালিফ্যাক্সের বাস স্টপ নাট্যশালায় বিবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এপ্রিল। ছোট্ট ওই নাট্যশালার আসনসংখ্যা এক শটিরও কম।
এপ্রিল বলেন, তাঁর আসন্ন ৪০তম জন্মদিনের ‘কয়েক মাসের মধ্যে’ তিনি ওই নাট্যশালার মঞ্চে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পরিকল্পনা করছেন। এ সময় তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের একটি ছোট দল উপস্থিত থাকবে।
এপ্রিল বড় একটি আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পরিকল্পনা করেছেন। এটিকে তিনি ‘উদ্যাপনের’ মুহূর্ত বলে মনে করছেন। একজন পেশাদার চিকিৎসক তাঁর রক্তপ্রবাহে একটি প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবেন। তিনি চান, মৃত্যুর সময় তাঁর ভালোবাসার মানুষেরা যাতে তাঁকে ঘিরে থাকে ও জড়িয়ে থাকে। তাঁদের সমর্থন নিয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি।
এপ্রিল জন্ম থেকেই স্পাইনা বিফিডা নামের মেরুদণ্ডের একটি জটিল রোগে আক্রান্ত। তাঁর মেরুদণ্ডের গোড়ায় একটি টিউমার ধরা পড়েছে। তিনি জানান, ওই টিউমারের কারণে তাঁকে অবিরত কাহিল করে দেওয়া যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে।
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শক্তিশালী ব্যথানাশক নিচ্ছেন এপ্রিল। তিনি ২০২৩ সালের মার্চে মরার জন্য চিকিৎসা সহায়তার (মেইড) আবেদন করেছিলেন। শরীরে এই রোগ নিয়ে তিনি কয়েক দশক বাঁচতে পারবেন। এরপরও আবেদন করার সাত মাসের মধ্যেই তাঁকে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ অনুমতি পাওয়া সম্ভব।
এপ্রিল বলেন, ‘আমার ভোগান্তি ও যন্ত্রণা ক্রমে বাড়ছে। আমার জীবনযাত্রার সেই মান নেই, যা আমাকে সুখী ও পরিপূর্ণ করে তুলতে পারবে।’
এপ্রিল যেখানে আছেন, সেখান থেকে তিন হাজার মাইল দূরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের পার্লামেন্ট সদস্যরা সহায়তায় মৃত্যুকে বৈধ করার প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। তাঁরা ২০২৪ সালের নভেম্বরে নীতিগতভাবে এ পরিকল্পনার সমর্থনে ভোট দিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে আইনসভার উভয় কক্ষে আরও ভোটের প্রয়োজন।
সমালোচকেরা বলছেন, কানাডা ‘পিচ্ছিল ঢালু জায়গার’ মতো। এর অর্থ হলো, একবার আপনি সহায়তায় মৃত্যুর আইন পাস করলে এটি অনিবার্যভাবে পরিধি বাড়াবে ও এর সুরক্ষাও কম থাকবে।
সহায়তায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উদারব্যবস্থা রয়েছে কানাডায়। নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও এই মৃত্যুর আইন আছে। ২০১৬ সালে তারা মেইড চালু করে। প্রাথমিকভাবে অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার গুরুতর ও দুরারোগ্য শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এটি চালু করা হয়েছিল। ২০২১ সালে সহায়তায় মৃত্যুর জন্য প্রাণঘাতী রোগ থাকার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর দুই বছরের মধ্যে কানাডা সরকার শারীরিক নয়; বরং শুধু মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও মেইড উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
মেইডের বিরোধীরা বলছেন, প্রতিবন্ধী ও জটিল সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মৃত্যুকে একটি আদর্শ বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২৩ সালে কানাডায় মেইডের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সে হিসাবে প্রতি ২০ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে মেইডের মাধ্যমে। ২০১৬ সাল থেকে দেশটিতে সহায়তায় মৃত্যুর হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ। যাঁরা এই মৃত্যু বেছে নিয়েছেন, তাঁদের গড় বয়স ৭৭ বছর।
হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত একজন চিকিৎসক বা নার্স প্রাণঘাতী ডোজ সরবরাহ করেন। এরিক থমাস নামের এক চিকিৎসকের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে। তিনি ৫৭৭ জন রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে সাহায্য করেছেন।
কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব মেইড অ্যাসেসরস অ্যান্ড প্রোভাইডারসের সভাপতি ডা. কোনিয়া ট্রাউটনও আইনটি চালু হওয়ার পর থেকে শত শত রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, মেইডের ক্ষেত্রে সব সময় একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তিনি মেইডের অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তাঁর কাছে জানতে চান যে ওই দিনই তিনি মৃত্যুবরণ করতে চান কি না। এ প্রক্রিয়ায় রোগীরাই সব সময় নির্দেশনা দেন ও কাজটি সম্পন্ন করার অনুমতি দেন।