বাংলাদেশে পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি প্রত্যাহার, নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত শিক্ষার্থী ও ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের এক সংগঠনের বিক্ষোভ চলাকালে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে।

এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার আরেকদল শিক্ষার্থী বুধবারের হামলার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তত তিন থেকে চারজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন তারা।

এদিকে বুধবারের হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত একজন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

কেন আন্দোলন?

নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামের একটি একটি সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়ে বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে সরকার সেটি বাতিল করে। এরপর পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ সংস্করণ থেকে সেটি সরিয়ে নতুন একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়। এ পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

বুধবার হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী

বুধবার হামলা নিয়ে যা বলছেন শিক্ষার্থীরা

পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ এই ব্যানারে শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুরে এনসিটিবির সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন। তবে তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের আরেকটি গ্রুপ সেখানে অবস্থান করছিল বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী।

আন্দোলনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ববি বিশ্বাস বিবিসিকে বলেন, ‘সেখানে আমাদের আগেই তারা স্ট্যাম্প, লাঠি নিয়ে অবস্থান করছিল। স্ট্যাম্পের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা গিয়ে পৌঁছানোর পর তারা আক্রমণাত্মক স্লোগান দেওয়া শুরু করে। আমাদের দিকে তেড়ে আসতে শুরু করে।’

তার দাবি, প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও কয়েক মিনিটের মাথায় তারা একজনের দিকে হাতে থাকা স্ট্যাম্প ছুড়ে মারে। এরপরও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তারা। তখনও আমরা কোনো ধরনের উত্তেজনা দেখাইনি। কিছুক্ষণ পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, সেখানে বসে পড়বো। আমরা বসার পরে পুলিশদের সরিয়ে ওরা এসে আমাদের আক্রমণ শুরু করলো, যাকে যেভাবে পেরেছে মেরেছে। তাদের বয়স পঞ্চাশ বা তারও বেশি বলে মনে হয়েছে বলেন আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী ববি বিশ্বাস। তিনি দাবি করেন, যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদের কেউই শিক্ষার্থী নয়। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র দাবি

মতিঝিলে নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে। যারা বুধবার ওই একই সময়ে এনসিটিবির সামনে সমাবেশ আন্দোলন করছিলেন। তবে তারা পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ দেওয়া এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের অভিযোগে পাঠ্যপুস্তক কমিটির সদস্য রাখাল রাহার অপসারণ এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে তদন্ত কমিটি গঠন না হওয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ ইয়াকুব মজুমদার বিবিসিকে জানান, বুধবারের এনসিটিবি ঘেরাও ও বিক্ষোভ কর্মসূচি তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি।

ইয়াকুব বলেন, গত ১২ জানুয়ারিতে এ সংগঠনটি পাঁচ দফা দাবিতে মতিঝিলে এনসিটিবি ঘেরাওয়ের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। সেদিন এনসিটিবি তাদের দাবি মেনে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়। পরে সেদিন রাতেই পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠা থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতিটি বাদ দেওয়া হয়। তার দাবি, এর মাধ্যমে তাদের আংশিক দাবি পূরণ করে এনসিটিবি।

তিনি আরও বলেন, পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহাকে অপসারণ ও তদন্ত কমিটির দাবি পূরণ না হওয়ায় তিন দিন আগেই বুধবারের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। সেদিন সকালে এনসিটিবির সামনে শান্তিপূর্ণভাবে এ সংগঠনের কর্মীরা অবস্থান নেয়। তাদের সমাবেশ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে আনুমানিক ১২টার দিকে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ তাদের আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন।

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা যখন ভেতরে যাই, আমাদের কালক্ষেপণ করানো হয়। উনাদের মিস ম্যানেজমেন্টের জন্য এটা হয়। আমরা জানি, ওই সময় উপজাতিরা আসতেছে। পুলিশকে বলা ছিল, আমাদের ১৫ মিনিট সময় দেন। আমরা কথা বলবো, কথা বলে আমরা আমাদের সমাবেশ সরিয়ে নেব। তখন উনারা এসে উনাদের সমাবেশ করতে পারবেন। পুলিশের সঙ্গে এটা কথাই ছিল।’ কিন্তু এনসিটিবির ভবনে যাওয়ার পর একবার চেয়ারম্যান, পরে সচিবের কথা বলে তাদের সময় নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইয়াকুব আরও বলেন, প্রথমে আমাদের পাঁচতলায় নেওয়া হয়। পরে আবার ছয় তলায় এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন দুইজন কর্মকর্তা এবং রাখাল রাহার সঙ্গে আলোচনায় বসানো হয় এবং তারা এর প্রতিবাদ করেছেন। তারা মোট ছয়জন এনসিটিবি ভবনে যান।

একপর্যায়ে সংঘর্ষের খবর পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা নিচে নামি। নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু আমরা আমাদের সমাবেশ বন্ধ করি। শাপলা চত্বরের দিকে যাই। এর মধ্যে যে কী হয়েছে, ওই সময়ে এক্সাক্টলি আমরা জানতাম না। এই সংগঠনের কেউ হামলার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘এরপরে হামলার ঘটনাটা দেখলাম। বিশেষ করে একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। এটাতো কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বলেছিলাম, নেতৃত্ব থেকে যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়। সহিংসতা করতে আসলে এনসিটিবির সঙ্গে কথা বলতাম না। আমরা যদি খুব তাড়াতাড়ি করে আসতে পারতাম তাহলে হয়তো সংঘর্ষটা এদিকে কখনো যেতে পারতো না।’

যারা এ হামলা করেছে তাদের শাস্তি দাবি করে ইয়াকুব বলেন, এখানে ভিডিও ফুটেজগুলো স্পষ্ট, যারাই এটা করুক; এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করি আমরা। হামলায় জড়িতদের যেসব ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, তাদের চেনেন না বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘পত্রিকায় যাদের আমি দেখেছি, ব্যক্তিগতভাবে তাদের আমি চিনতে পারছি না। সেখান থেকে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই ফ্রাস্ট্রেটেড।’

হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিজেদের সংগঠনের অনেক নেতাও আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ কারা?

কবে এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠা- এমন প্রশ্নে যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব মজুমদার জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূস জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি ‘আদিবাসী’ শব্দটি উচ্চারণ করার প্রেক্ষাপটেই এই সংগঠনের উৎপত্তি। এর ঠিক পরদিনই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহল একটা প্রতিবাদ জানাই। ওইটার থেকেই আসলে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি ব্যাপারটা উঠে আসে। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কোথাও দেওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়াকুব মজুমদার জানান, এই সংগঠনের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তবে তিনি এখন শিক্ষার্থী না হলেও ঢাবির রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট বলে জানান যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে সংগঠনে কমিটির সদস্যসংখ্যা কতজন সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট করা হয়নি বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আমাদের কমিটির সদস্যটা আসলে এখনো ফাইনালাইজ করা হয়নি। আমরা চাচ্ছিলাম, কয়েক দিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে কমিটিটা ফাইনালাইজ করবো। এখনো করা হয় নাই।’

আহ্বায়কসহ কতজন সদস্য সেটিও সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি। বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে জানান, আরও কয়েকজনকে রাখার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।

এটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়’ দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি মানেই তো বুঝতে পারছেন, মানে সর্বভৌমত্বের ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। এর আগে যেমন সেন্টমার্টিন নিয়ে কাজ করেছিলাম।’

হামলায় অভিযুক্ত একজন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য

এনসিটিবির সামনে হামলায় আহত হয়েছেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গাসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির সোশাল মিডিয়া কার্যক্রমে সেটি স্পষ্ট বলে দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন প্রতিনিধির জাতিগত বিভাজন জিইয়ে রাখা ও ন্যক্কারজনক হামলায় জড়িত থাকা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয় দাবি করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিকে অতি দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান করা হয়েছে।

এদিকে, এ বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে মোবাইলে ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি। সদস্যসচিব আখতার হোসেনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার আবার সংঘর্ষ

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় হাইকোর্ট মাজার ও শিক্ষাভবনের সামনে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয় পুলিশের। শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমবেত হয়ে সচিবালয়ের দিকে এগোতে গেলে সেখানেই তাদের বাধা দেয় পুলিশ।

‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ছুড়ে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে।

পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের জানান, শুরুতে আন্দোলনকারীদেরকে অনুরোধ করা হয়েছিলো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলায় ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘যখনই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলছে, তখন আমরা জলকামান ব্যবহার করছি, যাতে না যেতে পারে। তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য হালকা হাওয়া দিছি। সাউন্ড গ্রেনেড দেওয়া হইছে, যাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়। এটুকুই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের উদ্দেশ্য কাউরে মারা না, কারও ক্ষতি বা কোনো কিছু না। বরঞ্চ ওদের দাবির সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।’

কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

বুধবার দুপুরে হামলার ঘটনার পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকার এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টায় প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে বুধবার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার এই হামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অপরাধীদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে এবং শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। সব অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকার বলছে, বাংলাদেশে সহিংসতা, জাতিগত বিদ্বেষ এবং ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এ ঘটনার পর রাতেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুইজন উপদেষ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বুধবার রাতে এক পোস্টে এ কথা জানান। আইন উপদেষ্টা আহত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ছবি শেয়ার করে পোস্টে লিখেছেন, ‘এই ঘটনার অবশ্যই বিচার হবে। দুইজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে।’

আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে একটি পোস্টে জানিয়েছেন, ‘ঘটনার তদন্ত করা হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস ট ব গ র প ত র কর প ঠ যবইয় ন ম র এক কর ন ত ন দ র ওপর সরক র র উপদ ষ ট স গঠনট স ঘর ষ ঘটন র তদন ত ঘটন য় র একট

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু

বাংলাদেশ প্রথম নির্বাচিত নারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট চন্দনা গ্রামের বাসিন্দা শামসুন্নাহার চৌধুরী মারা গেছেন।

শুক্রবার আছর নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, সন্তানসহ আত্মীয়স্বজন ছাড়াও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহেরের স্ত্রী তিনি।

তিনি চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ও দেওরগাছ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ বার চেয়ারম্যান নির্বাহিত হন। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালে প্রথম মিরাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারা দেশে তখন তিনিই ছিলেন প্রথম নারী ইউপি চেয়ারম্যান। সেই থেকে রাজনীতিতে জড়ান। ১৯৯৩ সালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

শামছুন্নাহার চৌধুরী ৩ বার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। পেয়েছেন অতিশ দীপঙ্কর জয়িতাসহ নানা পুরস্কার। হয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন নারী উন্নয়নে।

তার মৃত্যুতে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ