ম্যানুয়েল উগার্তে বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে যখন নিজেদের জালে বল জড়ালেন তখন ম্যানইউকে চোখ রাঙাচ্ছিল ৯১ বছরের পুরোনো এক লজ্জার রেকর্ড। এই সময়ের মাঝে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে টানা ৩ ম্যাচের বেশি হারের নজির ছিল না। তবে তরুণ তুর্কি আমাদ দিয়ালোর অনবদ্য হ্যাটট্রিকে সাউথাম্পটনের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৩-১ ব্যবধানে জিতে লজ্জার হাত থেকে বাঁচে ইউনাইটেড। ম্যাচ জিতলেও রেড ডেভিলদের পর্তুগীজ কোচ দলের পারফরম্যান্সে সন্তষ্ট নয়।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এখন টেবিলের তলানির দল সাউথাম্পটন। আগের ২০ ম্যাচে যাদের জয় ছিল মাত্র একটি, গোল হজম করেছিল ৪৪টি! এমন দলের বিপক্ষে প্রথমার্ধে পিছিয়ে যায় স্বাগতিক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এমনকি প্রথম গোলের দেখা পেতে হিমশিম খেতে হলো। একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রথম জয় পেতে যাচ্ছে সাউথাম্পটন।

ম্যাচের এমন অবস্থাতে জাদু দেখাতে শুরু করেন দিয়ালো। ম্যাচের ৮২ মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান। এরপরও মনে হচ্ছিল ম্যাচ ড্রর দিকেই যাচ্ছে। তবে ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে বা ‘ফার্গি টাইমে’ আরও দুই গোল করে বসেন উইঙ্গার দিয়ালো। এই ২২ বছর বয়সী আইভোরিয়ান তার হ্যাটট্রিক আদায় করেন ১২ মিনিটের মাঝে। 
কদিন আগেই দিয়ালোকে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করিয়েছিলেন আমোরিম। হ্যাটট্রিক করে যেন তারই প্রতিদান দিল এই মৌসুমে ৯ গোল ও ৭ অ্যাসিস্ট করা এই উইঙ্গার। আয়ভোরিয়ান তরুণ তুর্কিকে নিয়ে কোচের মুখে তাই প্রশংসার ধ্বনি, “সে (দিয়ালো) দুর্দান্ত খেলেছে। প্রয়োজনের মুহূর্তে এমন একটা ক্লাবের জন্য হ্যাটট্রিক করাটা একজন তরুণ ফুটবলারের জন্য দারুণ ব্যাপার।”

আরো পড়ুন:

এন্ড্রিকের জোড়া গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল

ইয়ামালই এই মুহূর্তে সেরা তবে মেসির পরে 

এই ম্যাচটা হারলে নিশ্চিতভাবে ম্যানইউর ম্যানেজম্যান্টের সমালোচনার তীর ধেয়ে আসত পর্তুগিজ কোচের দিকে। তবে দিয়ালো তাকে সেই ঝামেলা থেকে আপাতত বাঁচিয়ে দিয়েছেন। দলটির মালিক স্যার জিম র‍্যাটক্লিফের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আমোরিম জানান, “ম্যাচের ফলাফল আলাপকে সহজ করেছে। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো।” অন্যদিকে শেষ মুহূর্তের অসাধারণ জয়ের পরও নিজেদের সমালোচনা করতে পিছ পা হলেন না ৩৯ বছর বয়সী এই কোচ, “আমরা ভালো খেলিনি। প্রথমার্ধে, আমরা খুব হাই প্রেস করার চেষ্টা করেছিলাম, যা আমাদের ভুগিয়েছে।”

ব্যর্থতায় ভরা মৌসুমে এবারের লিগে মাত্র সপ্তম জয় পেল ইউনাইটেড। সেই সঙ্গে পাঁচ ড্রয়ে ২১ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে ১২ নম্বরে উঠেছে তারা।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল পর ত গ ল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মাইক্রোবাসে গান বাজাতে বাজাতে প্রকৌশলীকে হত্যা 

হা-মীম গ্রুপের ‘দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার’ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আহসান উল্লাহকে হত্যার লোমহর্ষক তথ্য উঠে আসছে। ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসে উচ্চ শব্দে গান শুনতে শুনতে প্রথমে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। হাত-পা বাধা বেঁধে আহসানকে গাড়ির পেছনের অংশে নিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। এরপর পা দিয়ে বুক ও শরীরের নানা অংশে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে খুনিরা। পরে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাশ গুম করে। নিহতের পিঠ ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাইক্রোবাসের ভেতরকার চিৎকার ও গোঙানির শব্দ যাতে বাইরে না পৌঁছে এ জন্য চার ঘণ্টা উচ্চ শব্দে গান ছেড়ে রাখা হয়। আদালতে আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

২৩ মার্চ হত্যার শিকার হন হা-মীমের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার আহসান। আশুলিয়ার কর্মস্থল থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে আহসানের গাড়ি চালক সাইফুল ইসলাম ও তার বন্ধু নুরুন্নবীও রয়েছেন। তারা এরই মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ইসরাফিল ও সুজন ইসলাম আরও দু’জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তুরাগ থানা পুলিশ। জড়িতদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও টার্গেট করার কারণ উঠে এসেছে।  

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে চালক সাইফুল দাবি করেন- ১২ মার্চ হত্যার ছক চূড়ান্ত করা হয়। এটি বাস্তবায়নের পূর্ব পরিচিতি নুরুন্নবীকে ভাড়া করেন তিনি। এক সময় নুরুন্নবী ও সাইফুল একসঙ্গে গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। পুরো মিশন সফল করতে ইসরাফিল ও সুজনকে ম্যানেজ করেন নুরুন্নবী। ঘটনার দু’দিন আগে তুরাগ এলাকা রেকি করেন তারা। আহসানকে নিয়ে অফিস থেকে ফেরার পথে কোথায় প্রস্রাব করার নাম করে গাড়ি থামাবেন তা দেখিয়ে দেন। সাইফুল অন্যদের টোপ দেন- গাড়িতে আহসানকে জিম্মি করা গেলে অনেক টাকা আদায় করা সম্ভব হবে।

ছক মোতাবেক তুরাগ এলাকার পূর্ব নির্ধারিত স্পটে বিকেল ৪টার দিকে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন চালক। এরপর তার তিন সহযোগী মাইক্রোবাসে উঠে পড়েন। যাদের আগে থেকে ভাড়া করেন সাইফুল। তাদের মধ্যে দু’জন গাড়ির পেছনের আসনে আহসান উল্লাহ’র পাশে, অন্যজন বসেন চালকের বাম পাশের আসনে। প্রশ্রাব করার নাম করে মাইক্রোবাস থেকে নেমে যাওয়ার পর সাইফুল ফের গাড়িতে ফিরে নতুন নাটক সাজান। তিনি সহযোগীকে দেখে না চেনার ভান করে বলে উঠেন- ‘আপনারা কারা আমার গাড়িতে উঠেছেন।’ তারা কোনো উত্তর দেননি। এরপরই আহসানের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। চোখ বাঁধা হয়নি। বাজানো হয় উচ্চ শব্দে গান। চারজনের কথোপকথন ও কর্মকাণ্ড দেখে অল্প সময়ের মধ্যে আহসান বুঝতে পারেন তারা সবাই একে অপরের পরিচিত। প্রাণে বাঁচতে আহসান তাদের ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার কথা জানান। তবে তারা সাড়া দেননি। 

বেড়িবাঁধ, গাবতলী, দিয়াবাড়ি রেলস্টেশন, ১৬ নম্বর সেক্টরে ঘুরাতে থাকেন। খুনের আগে গাবতলী এলাকায় আহসানকে ইফতার করান তারা। এরই মধ্যে তার ব্যাংকের কার্ড থেকে দু’টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ৫০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করেন জড়িতরা। এরই মধ্যে একটি নম্বর সাইফুলের স্ত্রীর নামে নিবন্ধন করা। আরেকটি নম্বর তার বোনের।  আরও ১০ হাজার টাকা কার্ড থেকে তুলে নেয় তারা। এছাড়া নগদ ২৫ হাজার টাকা লুট করে। সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার হাতিয়ে নেওয়া হয়। তার মধ্যে নুরুন্নবীকে মাত্র এক হাজার ও ইসরাফিলকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। সুজন কোনো টাকা পায়নি। ভাগের টাকা সবাইকে পরবর্তীতে দেওয়া হবে জানান সাইফুল। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেন নুরুন্নবী। তখন সাইফুল সহযোগীদের বলেন- হত্যা না করলে একজনও বাঁচব না। এরপর অন্যরা তাদের হত্যা মিশনে সহযোগিতা করেন। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা জানান, আহসানকে হত্যার কারণ হিসেবে দু’টি বিষয়ের কথা এখন পর্যন্ত দাবি করছেন চালক সাইফুল। প্রথমত- গত আগস্টে সামান্য দুর্ঘটনায় সাইফুলের মাইক্রোবাসের কিছু ক্ষতি হয়েছিল। এরপর সাইফুল নিজ উদ্যোগে ইন্সুরেন্স থেকে মেরামত বাবদ টাকা আদায় করতে সহায়তা করেন। তার ধারণা ছিল ওই টাকা থেকে একটি ভাগ আহসান তাকে দেবেন। তবে সেটা না দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল তার। আবার মাসে ১৯ হাজার টাকা বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার মনক্ষুন্ন ছিলেন তিনি। সাইফুলের ভাষ্য- এ ক্ষোভ থেকে মালিককে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের ফন্দি আঁটেন।  

র‌্যাব-১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিক বিন হালিম সমকালকে বলেন, অফিস থেকে বাসায় না ফেরায় তুরাগ থানায় জিডি করেছিল পরিবার। এরপর শুরু হয় তদন্ত। একে একে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। তুচ্ছ কারণে নৃশংসভাবে প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়েছে। 

জানা গেছে, ২৫ মার্চ দিয়াবাড়ির ১৬ নমম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের রাস্তার পাশ থেকে আহসানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর র‌্যাব ছায়াতদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে গাইবান্ধা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ২৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে নূরন্নবী ও গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ইসরাফিলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যব। সবশেষে ধরা হয় সুজনকে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরহাদুজ্জামান নবীন বলেন, ছুরি, স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, ভিকটিমের মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য ছুরি রাখা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ