বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নায়িকা হিসেবে প্রথমে যে নামটি উচ্চারিত হবে, সেটি সুচিত্রা সেন। কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করলে সুচিত্রা সেনকে আপন মহিমা, আভিজাত্য ও গৌরবে উপস্থাপন করা যায়? স্বপ্ননায়িকা, মহানায়িকা, কিংবদন্তি যেভাবেই ডাকা হোক না কেন, একজন পরিপূর্ণ সুচিত্রা সেনকে অনিঃশেষ অখণ্ডতায় আবিষ্কার করা সহজ নয়। বাংলা চলচ্চিত্রের গৌরবময় ইতিহাসের স্বর্ণালি অধ্যায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর আগমনে উজ্জ্বল হয়েছে। এই অনেকের ভিড়ের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন একেবারেই স্বতন্ত্র। মায়াভরা মুখ আর নির্মল হাসিতে বাংলা চলচ্চিত্রে রোমান্টিক ধারার সূচনা করেছিলেন সুচিত্রা সেন। অভিনয়, সৌন্দর্য, সততা, নিষ্ঠা আর একাগ্রতার পরিপূর্ণ প্যাকেজ ছিলেন ইতিহাসের এই মহানায়িকা। সুচিত্রা সেনই ছিলেন বাঙালির সেরা স্বপ্ন। যে স্বপ্নের প্রতিটি ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু না পাওয়া বাঙালির সব পাওয়ার স্বাদ ও সাদা-কালো জীবনের রঙিন হয়ে ওঠার কাহিনি। তিনি ছিলেন বাঙালির জীবনযাপনে ম্যাজিক-সম্মোহনের রুপালি রূপকথা। তাঁর চাহনি, কটাক্ষ, হাসি, অভিনয় প্রতিভায় মগ্ন হয়েছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা। সুচিত্রা সেন শাশ্বত বাঙালি নারীর এক মূর্ত প্রতীক, যাঁর চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট আবহমান নারী সৌন্দর্যের প্রতীক। 

সুচিত্রার শাড়ি পরা বা চুল বাঁধার ধরন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কলকাতা, ঢাকাসহ সারাদেশের বাঙালি সমাজে আভিজাত্য এবং ফ্যাশন সচেতনতার প্রতীক। চলচ্চিত্রে অভিষেকের সঙ্গে সঙ্গে নায়িকা থেকে মহানায়িকা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। চলচ্চিত্রে আসার আগেই তাঁর বিয়ে হয়েছিল। সে কথা অকপটে স্বীকার করেই চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছেন; যা এখনকার কোনো নায়িকাই করতে পারবেন না! তৎকালীন বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সেনভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে নানা রজনীকান্ত সেনের বাড়িতে ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সুচিত্রা সেনের জন্ম। তাঁর দাদার বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায়। ফলে সুচিত্রার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনার গোপালপুর মহল্লার হিমসাগর লেনের একতলা পাকাবাড়িতে। সুচিত্রা সেন অভিনীত প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ [১৯৫২]। এক অজানা কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন। শুধু বাংলা ছবিতেই নয়, হিন্দি ছবিতেও অভিনয়ে সুখ্যাতির প্রমাণ রেখেছিলেন সুচিত্রা সেন।

১৯৭৮ সালের পর অভিনয় জীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন সুচিত্রা সেন। ‘প্রণয়পাশা’ ছবিতে কাজের পর হঠাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান সুচিত্রা সেন। দীর্ঘকাল অন্তরালে থাকার পরও বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তাঁর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। বাঙালির কাছে নায়িকা শব্দের সমার্থক সুচিত্রা সেন। আজ এই মহানায়িকার মৃত্যুবার্ষিকী। আনন্দ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ