যাঁর চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট আবহমান নারী সৌন্দর্যের প্রতীক
Published: 17th, January 2025 GMT
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নায়িকা হিসেবে প্রথমে যে নামটি উচ্চারিত হবে, সেটি সুচিত্রা সেন। কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করলে সুচিত্রা সেনকে আপন মহিমা, আভিজাত্য ও গৌরবে উপস্থাপন করা যায়? স্বপ্ননায়িকা, মহানায়িকা, কিংবদন্তি যেভাবেই ডাকা হোক না কেন, একজন পরিপূর্ণ সুচিত্রা সেনকে অনিঃশেষ অখণ্ডতায় আবিষ্কার করা সহজ নয়। বাংলা চলচ্চিত্রের গৌরবময় ইতিহাসের স্বর্ণালি অধ্যায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর আগমনে উজ্জ্বল হয়েছে। এই অনেকের ভিড়ের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন একেবারেই স্বতন্ত্র। মায়াভরা মুখ আর নির্মল হাসিতে বাংলা চলচ্চিত্রে রোমান্টিক ধারার সূচনা করেছিলেন সুচিত্রা সেন। অভিনয়, সৌন্দর্য, সততা, নিষ্ঠা আর একাগ্রতার পরিপূর্ণ প্যাকেজ ছিলেন ইতিহাসের এই মহানায়িকা। সুচিত্রা সেনই ছিলেন বাঙালির সেরা স্বপ্ন। যে স্বপ্নের প্রতিটি ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু না পাওয়া বাঙালির সব পাওয়ার স্বাদ ও সাদা-কালো জীবনের রঙিন হয়ে ওঠার কাহিনি। তিনি ছিলেন বাঙালির জীবনযাপনে ম্যাজিক-সম্মোহনের রুপালি রূপকথা। তাঁর চাহনি, কটাক্ষ, হাসি, অভিনয় প্রতিভায় মগ্ন হয়েছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা। সুচিত্রা সেন শাশ্বত বাঙালি নারীর এক মূর্ত প্রতীক, যাঁর চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট আবহমান নারী সৌন্দর্যের প্রতীক।
সুচিত্রার শাড়ি পরা বা চুল বাঁধার ধরন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কলকাতা, ঢাকাসহ সারাদেশের বাঙালি সমাজে আভিজাত্য এবং ফ্যাশন সচেতনতার প্রতীক। চলচ্চিত্রে অভিষেকের সঙ্গে সঙ্গে নায়িকা থেকে মহানায়িকা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। চলচ্চিত্রে আসার আগেই তাঁর বিয়ে হয়েছিল। সে কথা অকপটে স্বীকার করেই চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছেন; যা এখনকার কোনো নায়িকাই করতে পারবেন না! তৎকালীন বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সেনভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে নানা রজনীকান্ত সেনের বাড়িতে ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সুচিত্রা সেনের জন্ম। তাঁর দাদার বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায়। ফলে সুচিত্রার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনার গোপালপুর মহল্লার হিমসাগর লেনের একতলা পাকাবাড়িতে। সুচিত্রা সেন অভিনীত প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ [১৯৫২]। এক অজানা কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন। শুধু বাংলা ছবিতেই নয়, হিন্দি ছবিতেও অভিনয়ে সুখ্যাতির প্রমাণ রেখেছিলেন সুচিত্রা সেন।
১৯৭৮ সালের পর অভিনয় জীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন সুচিত্রা সেন। ‘প্রণয়পাশা’ ছবিতে কাজের পর হঠাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান সুচিত্রা সেন। দীর্ঘকাল অন্তরালে থাকার পরও বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তাঁর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। বাঙালির কাছে নায়িকা শব্দের সমার্থক সুচিত্রা সেন। আজ এই মহানায়িকার মৃত্যুবার্ষিকী। আনন্দ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্ঘটনায় আহত অভিনেত্রী খুশি, চোখের ওপর পড়েছে ১০ সেলাই
দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বুধবার সকালে রমনা পার্ক থেকে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি আহত হন। অভিনেত্রীর ছেলে সৌম্য জ্যোতি সমকালকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বুধবার সকালে আম্মু রমনা পার্কে হাটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার সময় গলির মধ্যে একটি অটোরিকশা তাকে ধাক্কা দিলে আম্মু ছিটকে পড়ে যায় এবং তার ঠিক চোখের ওপর জখম হয়। পরে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন তিনি আপাতত ভালো আছেন।’
এদিকে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান শাহনাজ খুশি। সেখানে তিনি বলেন, ‘বেশি না, মাত্র ১০টা সেলাই পড়েছে। এ আর এমন কি বলেন? চোখটা অন্ধ হয় নাই, হয় নাই ব্রেইন হ্যামারেজের মত শেষ অবস্থা! সেটাই তো অনেক বেশি পাওয়া! এ তেমন কিছু না, চোখের উপরের সেনসেটিভ জায়গায় মাত্র ১০ টা সেলাই লেগেছে! আমি যে প্রাণে বেঁচে আছি এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাছে শুকরিয়া আদায় করছি!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু যে মায়েরা/বাবারা ছোট্ট বাচ্চাটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে স্কুলে আসেন অথবা নানান প্রয়োজনে রাস্তায় যান, তাদের সতর্ক করতে পোস্টটা দিলাম। আমি হয়ত ভেঙেচুরে বেঁচে গেছি। কোন বাচ্চা এ আঘাত নিতে পারবে না! ব্যাটারি চালিত অসভ্য/বর্বর যানবাহনটি এবং তার অসভ্য চালক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। যদিও আমি গলির ভেতরের রাস্তায়, প্রাতঃ ভ্রমণ শেষে অতি সর্তকতার সাথেই একেবারে কিনার দিয়ে হেঁটে ফিরছিলাম! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বীরদর্পে চলে গেছে! ওরা মেধাবী যান চালক, কারো জীবনের ক্ষতির তোয়াক্কা করে না! আপনার এবং আপনার সন্তানের দায়িত্ব একান্তই আপনার। আজ চারদিন পরও মাথার অর্ধেকে কোন বোধশক্তি নাই!
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘জানি না স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবো কিনা, সেটা যদিও ফিরি রক্তাক্ত সেই পথে পড়ে থাকা সকালের ট্রমা অনেককাল ভুলবো না! কাতর অবস্থায় বিছানায় পরে থেকে বারবার একটা প্রশ্ন মনে আসছে, এই যে যত্রতত্র কুপিয়ে জখম, ট্রেন-বাস, রিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে দিনেরাতে ছিনতাই। কার কাছে চাইব আমাদের সন্তানদের নিরাপদ পথচলা।’