গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে এক নারীর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। তার নাম নিয়ামুল হোসেন মিলন। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক।

চাঁদা দাবি করা পাঁচ মিনিটের একটি কলরেকর্ড ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী শিল্পী বেগম ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা-রামপুর গ্রামের মৃত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সঙ্গে থেকে প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করেন। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। তবে, কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। পরে জানা যায় প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছেন ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়া। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমের কাছে গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন।

ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডে ওই বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, দারোগার কাছে আমি আপনার ছেলেসহ দুজনের কথা বলছি। আড়াই লাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি-এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে। তারা অ্যাকশনে যাইতে বলছে। তিন জনকে আড়াই লাখ টাকা ছাড়া হবে না। আজ সকাল ১০টার ভেতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে। এ সময় অপর প্রান্ত থেকে মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষ। আমি আড়াই লাখ টাকা কোহানে (কোথায়) পাবো। আমার ভিটাবাড়ি বেঁচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি এক লাখ টাকা দিতে পারব। এ সময় ওই বিএনপি নেতা বলেন, মোবাইল এত কথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।

মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়ার বলেন, ‘‘নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল হোসেন মিলন মাহাবুবের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।’’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন বলেন, ‘‘প্রতিদিন ওই নারী আমার বাড়িতে এসে কান্নাকাটি করত। পরে মানবিক কারণে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলছে, ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে মামলা যেন না হয়। সেইটা দিতে বলেন মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে আমি তাই তাদের কাছে বলছি। আমি নিজের কথা বলিনি।’’

এ বিষয়ে কোটালীপাড়ার থানার এসআই (সাবেক কাশিয়ানী থানা) গৌতম কুমার সেন বলেন, ‘‘মিলন সাহেবকে আমি চিনি। তবে তার সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোনো বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়তো নিজে ফেঁসে গিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’’

কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

শফিউদ্দিন বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার শিল্পী বেগম চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় নিয়ামুল হোসেন মিলন নামের এক জনকে আসামি করা হয়েছে। দ্রুতই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।’’

এ ঘটনায় নিয়ামুল হেসেন মিলনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. সেলিম বলেন, ‘‘মামলা যেহেতু হয়েছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহর বলেন, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছেন। একটি চাঁদাবাজ গোষ্ঠী বিএনপির লেবাসে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করছে। মূলত এরা বিএনপির প্রকৃত লোক না। পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি রাখা প্রয়োজন। কারণ পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এরা চাঁদা দাবি করে যতটা জেনেছি। এরা দল ও দেশের শত্রু। এর পেছনে কোনো গডফাদার আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চাঁদাবাজ যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ সুপারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এরা পুলিশেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।’’

ঢাকা/বাদল/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভয় দ খ য় ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।

এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ