এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মাসখানেক পর ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। তেলের দাম ২-৭ টাকা বেড়েছে। চালের বাজার আগের মতো থাকলেও আলুর দাম কিছুটা কমেছে। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।

গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুল, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, ও তেজগাঁওয়ের কলমীলতা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

খুচরা পর্যায়ে গতকাল প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দিন দশেক আগে এর দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে।

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা কমেছে। অন্যদিকে সরবরাহ বেশি থাকায় সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম কমে ৪০-৫০ টাকায় নেমেছিল। তবে এতে পেঁয়াজ চাষিরা তেমন লাভ পাচ্ছিলেন না। এ কারণে চাষিরা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন।

ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে বর্তমানে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এ দাম ৩০-৪০ টাকা কম ছিল। 

কারওয়ান বাজারের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, সাধারণত মুরগির দাম কয়েক দিন পরপর ওঠানামা করে। কিন্তু এবার এক মাসের বেশি সময় ধরে এক জায়গায় দাম স্থির হয়ে আছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। গতকাল এক ডজন ডিম ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। তবে এর মাঝেও চালের দাম বাড়তি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে এখন মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, মাঝারি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং সরু চাল ৭০ থেকে ৭৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। 

টিসিবির হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালে ৩-৪ টাকা, মাঝারি চালে ২ টাকা ও সরু চালে ২-৪ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টিসিবির হিসাবের চেয়ে বাজারে চালের দাম আরও কিছুটা বেশি।

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুচরা দোকানগুলোতে এখনো চাহিদা অনুসারে তেল সরবরাহ করছেন না ডিলাররা। গতকাল ঢাকার চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে স্বল্পসংখ্যায় এক-দুটি ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, বোতলজাত সয়াবিন তেলের এই সরবরাহ-সংকট প্রায় দুই মাস ধরে চলছে। আর টিসিবির হিসাবে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২-৭ টাকা বেড়েছে।

সবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক কমেছে সবজির দাম। তবে কিছু সবজির মৌসুম না হওয়ায় নির্দিষ্ট সেই সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে বরবটি, করলা। এগুলোই এখন বাজারের সবচেয়ে বেশি দামি সবজি। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়। বাকিগুলোর দাম তুলনামূলক কম।

আজকের বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০, গোল বেগুন ৫০ টাকায়। এ ছাড়া ঝিঙা ৬০ টাকা কেজি, পেঁয়াজের ফুল প্রতি মুঠো ১০ টাকা, শসা ৪০ টাকা কেজি, শালগম প্রতি কেজি ২০, মূলা ২০ টাকা কেজি, টমেটো ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

আর বরবটি কেজিপ্রতি ৮০, করলা ৮০ টাকা, বিচিওয়ালা শিম ৬০ টাকা, সাধারণ শিম ৩০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ টাকা, আলু ৩০ টাকা কেজি, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, ক্ষিরা ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা এবং কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

সবজির দাম নিয়ে রাজধানীর মহাখালী বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী অনি আতিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাজারে এখন সবজির দাম তুলনামূলক কম। যে কারণে বেশি করে সবজি কিনতে পারছি। তবে দুই একটি সবজির দাম এখনও বাড়তি। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, এটার এখন মৌসুম না, সে কারণে দাম বেশি। বাকিগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সবজ র দ ম সরবর হ ২০ ট ক ৫০ ট ক ৬০ ট ক ৪০ ট ক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার: সিপিডি

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ ও মজুতদারি বা অযৈাক্তি মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী ও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।

আজ বুধবার ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৪-২৫: সংকটময় সময়ে প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা বলেন, সিপিডির পর্যবেক্ষণে পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, ডিম, রুই মাছ, হলুদ, গম, মসুর ডাল, চিনি, গরুর মাংস, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল এবং পাম তেলসহ ১৪টি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খল বিশ্লেষণে দামের ওঠানামা এবং অদক্ষতার জন্য বেশ কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে মজুতদারি, কমিশন এজেন্ট বা গুদাম পরিচালনাকারীদের আধিপত্য, অপর্যাপ্ত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি পদ্ধতি, উচ্চ উপকরণ খরচ, নিম্নমানের সংরক্ষণ এবং পরিবহন সুবিধা এবং সামগ্রিক সরবরাহকে প্রভাবিত করে এমন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, চালের বাজার ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত জটিল। সে কারণে সিপিডি চালের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে একটি অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে, বিশেষ করে মাঝারি-পাইজাম চাল। যার লক্ষ্য ছিল প্রধানত দামের যে অস্থিরতা তার মূল কারণগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করা।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, চাল সরবরাহ ব্যবস্থায় অসংখ্য বাজার এজেন্ট রয়েছে। বাজার মূল্যের ওপর গুদাম মালিকদের বা অটো রাইস মিলারদের উল্লেখযোগ্য আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। ফলস্বরূপ ধান চাষীরা প্রায়শই সঠিক দাম পান না। কিন্তু ভোক্তারা অযৌক্তিকভাবে উচ্চ মূল্যের সম্মুখীন হন, যার ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী কর্তৃত্ববাদী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে একটি অকার্যকর অর্থনীতি রেখে গেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঠিক করতে হবে। বেশ কিছু খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের বিশ্লেষণে মধ্যস্থতাকারীদের একটি জটিল নেটওয়ার্কের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

সিপিডি বলছে, অর্থনীতিতে মুল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে এবং নীতি সুদহারও বৃদ্ধি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উপর উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির বোঝা কমাতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহ-পক্ষীয় ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে, যেমন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করা এবং ঢাকার ভেতরে ও বাইরে ন্যায্য মূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠা করা। তবে দুঃখের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে চাঁদাবাজি, মজুদদারি বা অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তাই মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলি এখনও পর্যন্ত বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ শৃঙ্খলে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সাহসী এবং জরুরি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হার কমানো কঠিন হবে।

রাজস্ব প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে ২০২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.৭ শতাংশ যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৭.৭ শতাংশ অর্থাৎ এখানে উল্লেখযোগ্য অবনতি দেখা গেছে।

২০২৫ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি সময় ৪৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে যা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সামগ্রিকভাবে কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক। কর রাজস্বের দুটি উৎসেই (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত ও বহির্ভূত) একই চিত্র দেখা গেছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ওই সময়ে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। জুলাই-আগস্টের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে শ্লথগতি এর বড় কারণ। কর রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি বহুলাংশেই সরকারকে মূসক এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে ধাবিত করেছে। তবে আইএমএফের শর্তপূরণের চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান উচ্চ-মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ মোটেই কাম্য নয়। কারণ পরোক্ষ কর সকল ধরনের আয়ের মানুষের জীবনেই প্রভাব ফেলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা 
  • চড়া চালের দাম, কমেছে মুরগি ও আলুর
  • মানুষকে স্বস্তি দিন
  • থাই হাসপাতাল ছাড়ছে মিয়ানমারের শরণার্থীরা
  • ঢাবিতে কমল মেডি এইডের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প 
  • নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার: সিপিডি
  • ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত, জ্বালানি তেল উত্তোলন শুরু 
  • ট্যাংকলরি শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত, জ্বালানি তেল উত্তোলন শুরু 
  • ‘পানিযুদ্ধের’ পথে চীন-ভারত, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
  • ‘পানিযুদ্ধের’ পথে চীন ও ভারত, প্রবল ঝুঁকিতে বাংলাদেশ