কাজের প্রতি অবাধ ‘প্রেমে’ই ভেঙেছে গার্দিওলার ঘর
Published: 17th, January 2025 GMT
স্প্যানিশ ম্যানেজার পেপ গার্দিওলার ঘর ভেঙে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এই খবরটা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই ধরে নিয়েছিল তৃতীয় কোন পক্ষের কারণেই ম্যানচেস্টার সিটি কোচের ৩০ বছরের দাম্পত্যজীবনে ফাটল ধরেছে।
এদিকে, তাদের মেয়ে মারিয়া গার্দিওলা তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ্যের পর মুখ খুলেছেন। তিনি বিচ্ছেদের ব্যাপারে সরাসরি কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলেও জানিয়েছেন, তাদের আয়েশি জীবনের জন্য সে বাবার ফুটবল ক্যারিয়ারের কাছে কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গার্দিওলার এক বন্ধু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, এই বিচ্ছেদের পেছনে নেই তৃতীয় কোন ব্যক্তি! তবে বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ গার্দিওলার ‘নিজের কাজের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্যতা’।
সময়টা ১৯৯৪। সেই সময় মাঠ কাঁপানো ফুটবলার গার্দিওলার প্রেমে পড়েন সাংবাদিক ও লেখিকা ক্রিস্টিনা সেরার। তাদের পরিচয় হয়েছিল বার্সেলোনার বিখ্যাত ডিজাইনার আন্তোনিও মিরোর শপে মডেলিং করতে গিয়ে। এরপর একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন তার। সুদীর্ঘ ২০ বছর পর ২০১৪ সালে এসে বার্সেলোনায় ক্রিস্টিনাকে সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন গার্দিওলা। ঠিক তার এক দশক পর তারা জীবনের আলাদা পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গার্দিওলার সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর দাবি, “আমি মনে করি তারা একে অপর থেকে দূরে চলে গেছেন। ক্রিস্টিনা পাঁচ বছর আগে বার্সেলোনায় চলে গিয়েছিল। এটি সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছে। আর গার্দিওলা তো সম্পূর্ণ কাজপাগল এবং সে তাদের পারিবারিক ফ্যাশন ব্যবসায় একদমই যুক্ত না থাকার কারণে তাদের সম্পর্কে এই সমস্যা হতে পারে।”
এদিকে, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মারিয়া পরিষ্কার করেননি কিছুই। তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট। এই বিচ্ছেদে পরকীয়ার রসালো কোন গল্প নেই। ২৪ বছর বয়সী মারিয়া তার বেড়ে ওঠাকে ‘বিশেষ তবে চ্যালেঞ্জিং’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাবার পেশাদার ক্যারিয়ারের জন্য তাদের পরিবারের সমগ্র ইউরোপেই ঘুরে বেড়াতে হয়েছে।’’
বর্তমানে লন্ডনে বসবাসরত মারিয়া অসম্ভব ফ্যাশন সচেতন। তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আছে প্রায় এক মিলিয়ন অনুসারী। তার চাকচিক্যময় জীবন এবং ফ্যাশনের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ মিলে তার ইন্সটাগ্রামের। তার এই জীবন যাপনের জন্য সে তার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলেননি।
মারিয়া বলেন, “বাবার ফুটবলই আমাদের জীবনের অনেক কিছু গড়তে সাহায্য করেছে। আমার ভাই-বোনেরা এত সুযোগ সুবিধায় বড় হওয়ার জন্য বাবার কাছে ঋণী।”
মারিয়া বাবা-মার বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে এড়িয়ে গেলেও গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তটি সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে এবং কোনো বাইরের কেলেঙ্কারি ছিল না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে গার্দিওলার স্ত্রী ক্রিস্টিনা তাদের ছোট মেয়ে ভ্যালেন্তিনাকে নিয়ে বার্সেলোনায় ফিরে যান পরিবারের বুটিক ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য। তবে ইংল্যান্ডে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তিনি।
তবে, দুজনের সম্পর্কে ফ্যাকাসে হতে শুরু করে গত বছর সেপ্টেম্বরে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ক্রিস্টিনা ম্যানচেস্টারে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এরপরও বড়দিনের ছুটিটা বার্সেলোনায় কাটিয়েছিলেন গার্দিওলা ও ক্রিস্টিনা। তবে তাতেও ঘর টেকেনি।
গার্দিওলা বার্সেলোনার দায়িত্ব ছাড়ার পর ২০১৩ সালে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেন। সেখানে থেকে ২০১৬ সালে চলে আসেন ইংল্যান্ডে। এই ৫৩ বছর বয়সী ম্যানেজার দীর্ঘদিন স্পেনের বাইরে থাকাটাই যে তার বৈবাহিক সমস্যার সূত্রপাত সেটা নিশ্চিত করেছে আরেকটি মাধ্যম।
স্পেনের দুই সাংবাদিক লোরেনা ভাসকেস ও লরা ফা একটি পডকাস্টে বলেন, গার্দিওলা ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ক্রিস্টিনা বিচ্ছেদের ব্যাপারে অগ্রসর হয়। তবে, তার আগের সময়ে সে ক্লাব ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
গার্দিওলা এবং ক্রিস্টিনার শারীরিক এবং মানসিক দূরত্ব তাদের সম্পর্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে এসবের পরও এই স্প্যানিশ ম্যানেজার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন। অতঃপর অনেকটা বাধ্য হয়ে ক্রিস্টিনা বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।
এই বৈবাহিক সম্পর্কের টানাপোড়ন প্রভাব ফেলেছে গার্দিওয়াল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি পারফরম্যান্সেও। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে লেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে জয়ের আগে গার্দিওলার অধীনে কঠিন সময় পার করেছিল সিটি। আর আগের ১৩ ম্যাচে মাত্র একবার জয়ী হয়েছিল তারা।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যাকে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে অনেক দেশ। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
বাংলাদেশের প্রধান দুই রপ্তানি বাজারের একটি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের একটি বড় অংশ রপ্তানি হয় দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি হয় প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার, যা প্রধানত তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তান ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন (৭৩৪ কোটি) ডলারে।
নতুন করে উচ্চ মাত্রায় এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ‘আজ খুব ভালো খবর’ থাকবে। এ সময় দর্শক সারি থেকে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এই দিনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ অভিহিত করেন ট্রাম্প। নতুন শুল্ক আরোপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প বলেন, এই দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।
ট্রাম্পের পাল্টা এই শুল্ক আরোপে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে।
অন্যান্য যেসব দেশের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
পাল্টা এই শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ‘বন্ধু শত্রুর চেয়ে খারাপ হয়’।
যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব গাড়ি উৎপাদন করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি সেদেশে বিক্রি হয়। আর জাপানে যেসব গাড়ি বিক্রি হয় সেগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি সেদেশে তৈরি হয়। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি বিক্রি হয় খুব সামান্য।
মার্কিন কোম্পানি ফোর্ড অন্যান্য দেশে খুব কম গাড়ি বিক্রি করে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, অন্য যে কোনো দেশে তৈরি মোটরযানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং এটা আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
শুল্ক আরোপের ঘোষণাকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, আজকের দিনকে আমেরিকান শিল্পের ‘পুনর্জন্ম’ এবং আমেরিকাকে ‘আবার সম্পদশালী’ করার দিন হিসেবে স্মরণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধার মুখে রয়েছে।
অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা আরও খারাপ অবস্থা তৈরি করেছে।
বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাসত্ত চুরিসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ করেছেন তিনি।