সংবিধান সংস্কার কীভাবে গণভোট না সংসদে?
Published: 17th, January 2025 GMT
সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে– তা নিশ্চিত নয়। কমিশনপ্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব করেছেন। সেগুলো হলো– গণপরিষদ, গণভোট কিংবা কী কী সংস্কার হবে তা রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে চূড়ান্ত করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন করা।
কমিশনপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ সমকালকে বলেছেন, এই তিনটির মধ্যে কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা ঠিক করবে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো। কমিশন সুপারিশে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব করেছে মাত্র। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে তৈরি হবে অভ্যুত্থান সনদ।
এর ভিত্তিতে হবে পরবর্তী নির্বাচন।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এর শেষে বলা হয়েছে, ‘জনগণের সম্মতি নিয়ে আমরা এই সংবিধান জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করছি।’ এর মাধ্যমে গণভোটকে বোঝানো হয়েছে কিনা– এ প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেছেন, এগুলো প্রস্তাব মাত্র। চূড়ান্ত হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যে।
বিএনপি চায় নির্বাচিত সংসদে হবে সংবিধানের সংস্কার। দলটির নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে জানিয়েছেন, কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকবে– কোন কোন সংস্কার করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ তা আমলে নিয়ে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে।
জামায়াতে ইসলামী চায় নির্বাচনের আগেই সংস্কার হোক। নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন এবং পরবর্তী সংসদ গঠিত হবে। দলটির আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে সংস্কার না হলে, পরবর্তী সময়ে তা নাও হতে পারে। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা ছাত্র নেতৃত্বের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি চায় গণপরিষদের মাধ্যম সংবিধানের সংস্কার করা হোক। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর গণপরিষদই সংসদে রূপান্তরিত হবে।
কার প্রস্তাব কতটা আছে সুপারিশে
সংস্কার কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের আটটি ভাগে ৫৯ দফা সুপারিশ করেছে। বিএনপি কমিশনকে ৬২ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী ১৮ দফা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি ৬৯ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। বিএনপির অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রয়েছে কমিশনের সুপারিশের।
জামায়াতের প্রধান প্রস্তাব ছিল এক কক্ষের সংসদ এবং আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন। বিএনপি দুই কক্ষের সংসদ এবং উচ্চকক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে গঠনের প্রস্তাব করেছিল। নাগরিক কমিটিও উচ্চকক্ষ চেয়েছিল। এসব প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রয়েছে কমিশনের সুপারিশের।
বিএনপি প্রধানমন্ত্রী পদ পর পর দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছিল। জামায়াত এবং নাগরিক কমিটির প্রস্তাব ছিল কেউ জীবনে দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কমিশনও তাই সুপারিশ করেছে। নাগরিক কমিটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এবং সংসদের মেয়াদ কমিয়ে চার বছর করার প্রস্তাব করেছিল। কমিশনও একই সুপারিশ করেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাব করেছিল বিএনপি এবং জামায়াত; তা রয়েছে কমিশনের সুপারিশে। প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাসের কথা বলা হয়েছে।
বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অর্থবিল ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে শিথিলের সুপারিশ করেছে কমিশন। নাগরিক কমিটি ৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ চাইলেও, জামায়াত শিথিলের প্রস্তাব করেছিল। বিএনপির প্রস্তাব ছিল, আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয় বাদে অন্য সব প্রশ্নে দলীয় সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। দলের প্রস্তাবের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন।
একমাত্র নাগরিক কমিটিই প্রস্তাব করেছিল, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব সংসদের উভয় কক্ষে অনুমোদিত হলেও, গণভোট লাগবে। গণভোট ছাড়া ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও সংবিধান সংশোধনের একই পথ দেখানো হয়েছে।
বিএনপি এবং জামায়াত– উভয় দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশন নির্বাচনকালীন সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদি অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ করেছে। সংবিধানের পুনর্লেখন চাওয়া নাগরিক কমিটির প্রস্তাব ছিল, প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা এবং রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না। এ সুপারিশ রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
সব দল এবং সংগঠনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা এবং অধস্তন আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের একক নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব করেছিল। সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও তা রয়েছে।
কোন দল কী বলছে
বিএনপি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা প্রকাশ করে। এর পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেওয়া বিএনপির প্রস্তাব ৩১ দফারই সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কার প্রতিশ্রুতির বিস্তারিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলটির সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষণের পর মতামত জানাবেন। একই অভিমত জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
আনুপাতিক পদ্ধতির সংসদের প্রস্তাব সুপারিশে না থাকার বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। কমিশন সুপারিশ করেছে মাত্র। জামায়াত সরকার ও রাজনৈতিক দলের আলোচনায় আনুপাতিক পদ্ধতি চাইবে। অনেক দলই তা চায়। জামায়াত ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ভবিষ্যতে আর যাতে স্বৈরাচার না তৈরি হয়, এ লক্ষে প্রস্তাব দিয়েছিল। তার প্রতিফলন কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। সুপারিশে জামায়াত সন্তুষ্ট কিনা– এ প্রশ্নে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন দলীয় ফোরামে আলোচনা-পর্যালোচনার পর মতামত জানানো হবে।
নির্বাচনের আগে না পরে, কখন সংস্কার হবে– এ প্রশ্নের মতো বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কীভাবে সংস্কার হবে, তা নিয়েও ভিন্ন ভাবনা রয়েছে। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার হলে, তা টেকসই হবে। তা না হলে কমপক্ষে একটি লিখিত রাজনৈতিক চুক্তি বা সনদ থাকতে হবে, যে দলই ক্ষমতায় যাক নতুন সংসদ সংবিধান সংস্কার করবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, তারা সুপারিশ পর্যালোচনা করে মতামত জানাবেন।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড.
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংসদের মেয়াদ চার বছরে সীমিত করা, এগুলো নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হবে। কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে দুই কক্ষের ভিন্নমত কীভাবে সুরাহা হবে, তা বড় বিষয়। অন্যান্য দেশে প্রায়ই এ নিয়ে সংকট দেখা দেয়।
শাহ্দীন মালিক সংবিধানের চেয়ে জোর দিয়েছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত গণতন্ত্রের দেশে লিখিত সংবিধান নেই। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে জেঁকে না বসে, তার জন্য ভালো সংবিধান অপরিহার্য নয়। যেমন– ১৯৯৩ সালে প্রণীত রাশিয়ার সংবিধানে অনেক ভালো বিধান যুক্ত হলেও সেখানে এখন পুতিনের একক শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দেশের সাংবিধানিক নাম এবং মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে শাহ্দীন মালিক বলেছেন, ভারতের মূলনীতিতে সমাজতন্ত্র ছিল না। এটি যুক্ত করা হলেও কোনো মূলনীতি বাতিল করা হয়নি। মীমাংসিত বিষয়গুলো যদি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে অনেক কিছুই অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। এটা রাষ্ট্র বা জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদের অভিমত, বর্তমান সরকারের সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা নেই। সংস্কার কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তা কার্যকরে অবশ্যই সংসদ কার্যকর থাকতে হবে। সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকতে হবে। তাঁর মতে, তিন ধরনের সুপারিশ জনগণ চায়। অর্থাৎ জনপ্রিয় ইস্যু, যেমন– কেউ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা। এসব সুপারিশের জন্য কমিশন ধন্যবাদ পেতে পারে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। কমিশন সদস্যদের ভাষ্য, সব ধর্ম বর্ণ ভাষা জাতি লিঙ্গ ও বিশ্বাসের সহাবস্থান নিশ্চিত করবে বহুত্ববাদ, যা ধর্মনিরপেক্ষতার চেয়ে অনেক উদার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। তবে মনজিল মোরসেদ বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে অস্বীকারের চেষ্টা করা হয়েছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, বর্তমান সরকারের মূল কাজ দ্রুততম সময়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করা। যা কিছু সংস্কার প্রয়োজন, তা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার সংবিধান অনুযায়ী করবে। সুপারিশ ভালো-মন্দ যাই থাকুক, তা নির্বাচিত সরকার গ্রহণ না করলে এর ভিত্তি নেই। তবে এসব সুপারিশ পরবর্তী সরকারের জন্য রাখা যেতে পারে।
বিচার-বিশ্লেষণ করবে ইসি
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা বিশ্লেষণ করবে। নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ এ কথা জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁও কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যত দ্রুত ঐকমত্যে আসবে, তত দ্রুত কাজ করা সহজ হবে।
গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেছেন, সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন হলে সুষ্ঠু ভোট করতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে কমিশন।
সংবিধান সংস্কারে সংশোধনীর প্রশ্ন থাকলেও নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন-সংক্রান্ত সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ সব স প র শ সরক র র র ক ষমত ব এনপ র পরবর ত ঐকমত য কম ট র র জন য সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
টিউশন শেষে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের তৎপরতায় চার ঘণ্টার মধ্যে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীর নাম শাকিল আহমেদ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সহ-সভাপতি।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কুমিল্লা শহর থেকে ফেরার পথে কয়েকজন অপহরণকারী তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা পুলিশের সহযোগিতায় প্রায় চার ঘণ্টা পর কুমিল্লার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে শাকিলকে উদ্ধার করেন। এসময় এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়।
এবিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মুহসিন জামিল বলেন, রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে আমরা জানতে পারি সবুজকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আটকে রেখে টাকা দাবি করছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা সবুজের মাধ্যমে ফোন দিচ্ছে। তারপর আমরা ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাঈদ ভাইকে জানালে ওনারা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর থেকেই পুলিশ সবুজের লোকেশন ট্রেস করতেছিল। পরবর্তীতে পুলিশ ও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪ ঘণ্টা পর একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে সবুজকে উদ্ধার করি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মাদ রাশেদুল হাসান বলেন, সবুজের বিষয়টি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাঈদ আমাকে অবগত করে। সাথে সাথে ওসি কোতোয়ালিকে ফোন দিয়ে তা জানানো হয়। আমাদের মহানগর কমিটির একটি টিম কান্দিরপাড় অঞ্চলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সবুজের লোকেশন শনাক্ত করা হয়। পুলিশ, বিভাগীয় চেয়ারম্যান মোরশেদ কাজেম স্যার, বৈবিছা-র সদস্যবৃন্দ, সবুজের সিনিয়র-জুনিয়র-ব্যাচমেট সবার তৎপরতায় আনুমানিক রাত ৩টায় সবুজকে উদ্ধার করতে আমরা সমর্থ হই।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিন থেকে পাঁচজনের একটি চক্র শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে। পরে রাত আড়াইটার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে, বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।