রেস্তোরাঁ মালিকদের আন্দোলনের মুখে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে এ খাতে আগের মতোই ৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকছে। পাশাপাশি ই-বুকেও ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া পোশাক, মিষ্টি এবং মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ভ্যাট কমে ১০ শতাংশ হতে পারে। হজযাত্রীর বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার ও মোবাইল ইন্টারনেটে বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হবে। ভ্যাট কমানোর আলোচনায় রয়েছে ওষুধ খাতও। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেস্তোরাঁর ভ্যাট প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআরের মূসক আইন ও বিধি বিভাগের দ্বিতীয় সচিব বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়ের কথা বিবেচনা করে ভ্যাট ৫ শতাংশ রহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, রোববারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। আরও কয়েকটি পণ্যের বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে ওষুধ, পোশাকসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর যে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তা রিভিউ (পর্যালোচনা) করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সচিবালয় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। নতুন আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই ও ডিসিসিআইসহ শিল্প মালিকরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর মধ্যে রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। আর মিষ্টান্ন ভান্ডারের ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাকের আউটলেটের ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।
ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সেদিনই বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে বৃহস্পতিবার সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে ঢাকার রেস্তোরাঁ খাতের কয়েকশ মালিক ও কর্মচারী নিয়ে এনবিআর ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন বলেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ও জনস্বার্থ এবং পণ্যমূলের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি বিবেচনা না করে সিদ্ধান্তে অটল থাকায় সমিতি বাধ্য হয়ে মানববন্ধন করেছে। তাই বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এনবিআরের মূসক আইন ও বিধি শাখা বুধবারই ভ্যাট পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে সমিতির সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিল। সেখানে স্পষ্ট কিছু না থাকায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এ মানববন্ধন করা হয়।
এদিকে গতকাল এনবিআরের এক আদেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ক্ষেত্রে শুধু ই-বুকের স্থানীয় সরবরাহ ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীর জন্য পুস্তকের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে ই-বুক সেবা সর্বজনীন ও সহজলভ্য করতে শুধু ই-বুকের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে সংবাদপত্র, পত্রিকা, সাময়িকী ও জার্নালের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে না।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে পোশাক, মিষ্টিসহ আরও কিছু পণ্যে ভ্যাট পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পোশাক খাতের ওপর ভ্যাট কিছুটা কমানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট ১৫ শতাংশের বদলে ১০ শতাংশ হতে পারে। আগে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৫। একইভাবে মিষ্টির ওপর ভ্যাটের হার কমিয়ে ১০ শতাংশ হতে পারে। মিষ্টির দোকানের ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
এ ছাড়া নন-এসি হোটেলের ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এটি আগে ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপের ভ্যাটেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রেও ভ্যাট ১০ শতাংশ হতে পারে।
হজ পালনে খরচ কমাতে হজযাত্রীর বিমান টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি আকাশপথের যাত্রায় সব ধরনের দূরত্ব আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এ ছাড়া আইএসপিতে সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। মোবাইল ইন্টারনেটে যে বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে, তাও বাতিল হতে পারে।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিকাশ–রকেট–ডেবিট কার্ডে কেন মেট্রোরেলের রিচার্জ সুবিধা চালু হচ্ছে না
ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে। গণপরিবহনের এই বাহনটি ধীরে ধীরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যস্ত সময়ে ভিড়ের কারণে অনেক যাত্রী উঠতেও পারছেন না। এখন দৈনিক যাত্রী সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগোচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। কিন্তু এখনো টিকিট বা পাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। স্থায়ী পাসে টাকা শেষ হয়ে গেলে নতুন করে টাকা ভরার জন্য (রিচার্জ) এখনো স্টেশনে গিয়ে লাইন দিতে হয়। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই ঘরে বসে টাকা রিচার্জ করা যাচ্ছে।
মেট্রোরেল পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকিট সরবরাহ বৃদ্ধি ও ঘন ঘন ট্রেন পরিচালনা করা গেলে যাত্রী আরও বাড়বে। ঘরে বসে স্থায়ী র্যাপিড বা এমআরটি পাস রিচার্জ করা গেলে যাত্রীদের দুর্ভোগও কমে যাবে।
প্রশ্ন হচ্ছে—যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, টিকিট সরবরাহ ও রিচার্জ সহজীকরণ বিষয়টি সরকারি দপ্তরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কিন্তু স্থায়ী বা র্যাপিড পাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। স্থায়ী পাসের রিচার্জ আরও সহজ করার কাজটিও ডিটিসিএর হাতে রয়েছে। ফলে দুই সংস্থার ঠেলাঠেলিতে দুই বছরেও টিকিট কাটা ও রিচার্জ সহজ করা যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরেই ডিএমটিসিএলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত মাসের শেষের দিকে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষজ্ঞ ফারুক আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেল