ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা
Published: 17th, January 2025 GMT
মতিঝিলে হামলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় ইটপাটকেল ছোড়েন আন্দোলনকারীরা। তারা ব্যারিকেড ভেঙে মন্ত্রণালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ধশতাধিক আদিবাসী মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের দাবি, আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলে বাম ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মী অংশ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে।
এর আগে আদিবাসী লেখা-সংবলিত গ্রাফিতি প্রত্যাহারের পক্ষে-বিপক্ষে মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে সমাবেশ ডাকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ ও ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’। স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির বিরুদ্ধে গত বুধবার হামলার অভিযোগ ওঠে। ইতোমধ্যে সংগঠনের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এর প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভকারীরা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জড়ো হন। সেখান থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষা ভবনের সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। সেখানে আগে থেকে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকে রাখে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মিছিলটি পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে এসে সেটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় এক নারী শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হতে দেখা যায় তাদের। এতে এক পুলিশ সদস্য এবং এক আন্দোলনকারী নারী আহত হন।
ঢাকার শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, ‘কয়েকজন আদিবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বামসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। ছবি-ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্তের কাজ চলছে।’
‘আদিবাসী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রীসহ বাম সংগঠনের নেতাকর্মী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও’ করতে আসে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছিলাম, এভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে যাওয়া যাবে না। আপনাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে যেতে পারেন। কিন্তু তারা রাজি না হয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
হামলার প্রতিবাদ
এ হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ৪৬ নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে সই করেছেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে.
এদিকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ডাস চত্বর থেকে মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি ভিসি চত্বর ঘুরে রাজু ভাস্কর্য প্রদক্ষিণ করে মিলন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান-উত্তর জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমলানির্ভর নিপীড়ক রাষ্ট্রের বিপরীতে কার্যকর গণতান্ত্রিক ও মানবিক দেশ গড়তে হবে। স্বৈরতন্ত্রের সব ভিত্তি উচ্ছেদ করার মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে তা হতে পারে।’
বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বিবৃতিতে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে পুলিশের এমন ভূমিকা কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটা অন্তরায়।’
বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মানস নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রেজা পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর এ ধরনের আচরণ রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী আচরণকে মনে করিয়ে দেয়।’
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য বিপজ্জনক বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক হোসাইন আহমাদ জুবায়ের।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
মতিঝিলে গত বুধবার সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
এনসিটিবির সামনে হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তিন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া রাজশাহী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
নিন্দা জানাল সরকারও
মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে আদিবাসী জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই সঙ্গে এই হামলা তদন্তের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়, ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মতিঝিলে হামলার ঘটনায় স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের নাম উঠে এসেছে। এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ততার পাশাপাশি তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিপেটার নিন্দা জানিয়েছে তারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শনিবার সমাবেশ
হামলার প্রতিবাদে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংহতি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী-ছাত্র জনতা’। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও এনসিটিবিতে হামলার বিচার দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর পর রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে রোকেয়া হল-ভিসি চত্বর-কলাভবন-কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি-শাহবাগ হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
সমাপনী বক্তব্যে জগদীশ চাকমা বলেন, ‘এনসিটিবি যে গ্রাফিতি দিয়েছিল, সেটিতে পুরো বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছিল। কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটি মুছে দেওয়া হয়েছে। সেটি পুনর্বহাল করতে হবে।’
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র সমন বয়ক ভ স কর য গতক ল ব স গঠন র এনস ট ব ঘটন য় র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানে চেক ক্লিয়ারিংয়ে নতুন সময়সূচি
পবিত্র রমজান মাসে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে। এ সময়ে ক্লিয়ারিং হাউজে লেনদেনে আন্তঃব্যাংকের চেক নিষ্পত্তির নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস), স্বয়ংক্রিয় চেক নিকাশ ঘর (বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ-বিএসিএইচ বা ব্যাচ) এবং বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) এই তিন প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রমের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
এসব সেবার মাধ্যমে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বা অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে অর্থ পরিশোধ ও স্বয়ংক্রিয় চেক নিষ্পত্তি করে থাকে। বিএসিএইচ-এর মাধ্যমে হাই ভ্যালু চেক (৫ লাখ টাকার বেশি) এবং রেগুলার ভ্যালু চেক (৫ লাখ টাকার কম) নিকাশ ব্যবস্থা নিষ্পত্তি করা হয়। রমজান মাসে হাই ভ্যালুর চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে পাঠাতে হবে। এগুলো দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। আর যেকোনো রেগুলার ভ্যালুর চেক বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে ক্লিয়ারিং হাউজে পাঠাতে হবে। এসব চেক বিকাল ৩টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে।
আরটিজিএসের লেনদেন হবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। তবে গ্রাহক লেনদেন করতে পারবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, কাস্টমস ডিউটি ই-পেমেন্ট বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এবং আন্তঃব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার ও রিটার্ন লেনদেন আরটিজিএসের মাধ্যমে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পরিশোধ করা যাবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) সেবা আগের নিয়মে চলবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। রমজান মাসের পর বিএসিএইচ ও আরটিজিএসের লেনদেন সময়সূচি আগের নিয়মে চলবে।
বিএইচ