ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে
Published: 16th, January 2025 GMT
সমকাল : আপনাদের ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই?
আহসান-উজ জামান : গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক ২০১৭ সাল থেকে ‘আপনার সাথে আপনার পাশে’ স্লোগান নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং
কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মিডল্যান্ড ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২৯ জেলা এবং ৭১ উপজেলায় ১৪০টি এজেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে আসছে।
মিডল্যান্ড ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টারের মাধ্যমে যে কোনো হিসাব খোলা, ফান্ড স্থানান্তর, নগদ জমা ও উত্তোলন, ঋণ বিতরণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ, ইউটিলিটি বিল গ্রহণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের টাকা উত্তোলন, ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড প্রদান করার পাশাপাশি মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়সহ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে এ অর্থ স্থানান্তর করা যায় এবং বিকাশ ও রকেট থেকে মিডল্যান্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। গ্রাহকরা যে কোনো এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টার থেকে প্রচালিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামিক ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়াও গ্রাহকরা ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিষেবা মিডল্যান্ড অনলাইন ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং পরিষেবা পেতে পারেন।
সমকাল : এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কীভাবে অবদান রাখছে?
আহসান-উজ জামান : এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ জনপদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি, আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বিতরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
সমকাল : এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও কী কী করণীয়
রয়েছে বলে মনে করেন? ব্যাংকগুলো আর কী করতে পারে?
আহসান-উজ জামান : এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ কিছু কাজ করতে পারে। নীতিমালা সহজীকরণ করা যেতে পারে। যেমন– এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা, লেনদেনের সীমা এবং শাখা সংক্রান্ত নীতিমালার ক্ষেত্রে আরও নমনীয়তা প্রদান, ব্যাংকগুলোর জন্য কর-সুবিধা বা বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, যাতে এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। এ ছাড়া এজেন্টদের জন্য ভর্তুকি বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রযুক্তি অবকাঠামোর উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ দরকার। যেমন– দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, সাইবার
নিরাপত্তা বিষয়ে নীতিমালা জোরদার করা। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য একটি শক্তিশালী মনিটরিং সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় সভা আয়োজন করা, এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়াতে গ্রাম এলাকায় ক্যাম্পেইন চালানো, স্থানীয় ভাষায় তথ্য প্রচার করে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে নানা উদ্যোগ নিতে পারে। যেমন– দক্ষ এজেন্ট নিয়োগ ও তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, গ্রাহকসেবা ও লেনদেন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এজেন্টদের সচেতন করা, এজেন্টদের জন্য সহজ-নিরাপদ প্রযুক্তি সরবরাহ, মোবাইল অ্যাপ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উন্নত করা, স্থানীয় গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সঞ্চয়, ঋণ, এবং বীমা সেবা চালু, কম খরচে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা ও বিশ্বাস অর্জনে তাদের কিছু করণীয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি, গ্রাহকসেবার মান উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া। এজেন্টদের জন্য আকর্ষণীয় কমিশন কাঠামো চালু করা যায়, যাতে তারা উৎসাহিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে ক্যাম্পেইন ও কর্মশালার আয়োজন করে জনগণকে
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা সম্পর্কে জানানো যেতে পারে।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসার ত্বরান্বিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং ব্যাংকগুলোর একসঙ্গে কাজ করা দরকার। নীতিমালার সহায়তা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সচেতনতার মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রত্যন্ত
অঞ্চলের মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করা সম্ভব।
সমকাল: ঋণ আদায়ের হার কেমন? আমানতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আহসান-উজ জামান: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ আদায়ের হার ভালো। কারণ মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কোনো নন-পারফর্মিং
লোন (এনপিএল) নেই। আমানতের ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদে প্রবল আগ্রহ আছে। তবে এজেন্ট মালিক এবং তাদের কর্মীদের কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সঠিক গ্রাহক নির্বাচন কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রান্তিক অঞ্চলের গ্রাহকরা সাধারণত বিভিন্ন এনজিও এবং সমবায় সমিতি থেকে ঋণ গ্রহণ করে, যা সিআইবি রিপোর্টে উল্লেখ না থাকায় গ্রাহকের ঋণের ইতিহাস বিশ্লেষণ করা কঠিন বলে বিবেচিত হয়।
সমকাল: নতুন বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
আহসান-উজ জামান: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল হিসাব খোলা, ডিজিটাল লোন প্রদান, ডিজিটাল ক্রেডিট কার্ড প্রদান এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবাসহ ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করছি। আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এতে কৃষি ও পল্লি ঋণের যথার্থ ব্যবহার এবং আদায় নিশ্চিত করা যাবে। প্রশিক্ষণের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হওয়ায় বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত সব এজেন্ট মালিক ও কর্মীকে ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত থাকবে, যাতে তারা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের ওপর সম্যক ধারণা পায়। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ বাড়াতে মিডল্যান্ড ব্যাংক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর র ব যবস থ র জন য পর ষ ব সমক ল গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ৪ বাসিন্দা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর আগে ওই যুবকদের গুলিতে স্থানীয় চার বাসিন্দা আহত হন। সোমবার রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকদের পরিচয় তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ। গুলিবিদ্দ স্থানীয় চার বাসিন্দা হলেন ওবায়দুল হক (২২), মামুনুর রশিদ (৪৫), নাসির উদ্দিন (৩৮) ও আব্বাস উদ্দিন (৩৮)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদে ডাকাত পড়েছে এমন প্রচারের পর লোকজন জড়ো হয়ে অটোরিকশায় করে আসা দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন।
এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই যুবককে আটকের আগে গুলির ঘটনায় আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে প্রচারের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এখনো ওই দুই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।