প্রবাসী পাত্র দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন কামাল আখন। কিন্তু ৯ মাস পার হতে না হতেই সেই মেয়েকে বেছে নিতে হয়েছে স্বেচ্ছামৃত্যু। এই শোক কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ভোলার চরফ্যাসনের বাসিন্দা কামাল। বুধবার বিকেলে তাঁর বাড়িতেই গলায় ফাঁস নেন বড় মেয়ে মেরিনা আক্তার মিতু (১৯)। এর আগে ভিডিওকলে তিনি সংযুক্ত করেছিলেন ওমান প্রবাসী স্বামী বেল্লাল হোসেনকে।
স্বজন জানিয়েছেন, বিয়ের পর কালো বলে নানা গঞ্জনা সইতে হতো মিতুকে। এমনকি, যৌতুক হিসেবে কিছু না দেওয়ায় উঠতে-বসতে তাঁকে কথা শোনাতেন শাশুড়ি কোহিনূর বেগম ও ননদ লাকী বেগম। স্বামী মোবাইল নম্বরে কল দিলেও কেড়ে নেওয়া হতো ফোন। নানা অপমানের শিকার হলেও স্বামীর কাছেও সান্ত্বনা পেতেন না। অপমান-অপদস্থ থেকে মুক্তি পেতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে পড়েন এই তরুণী।
মিতুর মামি মুনিরা বেগম বলেন, মিতুর বাবা কামাল আখন পেশায় দিনমজুর। কক্সবাজারে কাজ করেন তিনি। তাঁর বাড়ি চরফ্যাসনের এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেরিনা চরফ্যাসন ফাতেমা মতিন মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ৯ মাস আগে পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয় রসুলপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক বাবুল বেপারির ছেলে বেল্লালের সঙ্গে। বিয়ের কয়েক মাস পরই তিনি ফের প্রবাসে চলে যান।
মিতুর মা রহিমা বেগম অভিযোগ করেন, শাশুড়ি কহিনূর বেগম ও কলেজছাত্রী ননদ লাকী বেগমের ধারাবাহিক শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে তাঁর মেয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন। তারা প্রতি মুহূর্তে মিতুকে বুঝিয়ে দিতেন, প্রবাসী ছেলেকে ‘কালো মেয়ে’ বিয়ে করিয়ে তারা ঠকেছেন। নগদ টাকা, ফর্নিচারসহ প্রাপ্য উপহার সামগ্রী পাননি। এভাবে শ্বশুরবাড়িতে উপেক্ষা-অবহেলা আর উপহাসের পাত্রে পরিণত হন মিতু। যা সইতে না পেরে মঙ্গলবার বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
বুধবার বিকেলে স্বামী বেল্লালকে ভিডিওকলে রেখেই গলায় ফাঁস নেন মিতু। এর আগে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লেখেন, ‘আমার এই মৃত্যুর জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন দায়ী। শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর অত্যাচারে আমি জীবন দিতে বাধ্য হলাম।’ পুলিশ এটি জব্দ করেছে।
এদিকে মিতুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বসতঘরে তালা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। প্রতিবেশী মো.
নিজের দুঃখের কথা প্রতিবেশী আছমা বেগমের কাছে বলতেন মিতু। তিনি বলেন, বেল্লাল প্রবাসে চলে যাওযার পর থেকেই তাঁকে পাহারায় রাখত ননদ লাকী। স্বামীর সঙ্গে ফোনেও কথা বলতে দিতো না। বেল্লাল কল করলে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হতো। প্রতিবাদ করে একাধিকবার মার খেয়েছেন মিতু। তিনি ওই বাড়িতে গেলে মিতু এসব ঘটনা জানাতেন। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না।
আছমার ভাষ্য, সোমবার মিতুর বাড়ি থেকে শীতকালীন পিঠা পাঠানো হয় শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু পিঠা ভালো হয়নি বলে শাশুড়ি ও ননদ তাঁকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করেন।
এ ঘটনার সঙ্গে মিলে যায় মিতুর মা রহিমার বর্ণনায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার মিতু ফিরে আসার সময় তাঁর সঙ্গে পিঠাগুলো ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যৌতুক হিসেবে চাওয়া দুই লাখ টাকা ও ফার্নিচার না দেওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মিতুর ব্যবহৃত পোশাক-গয়না রেখে দেয়। তাঁর মেয়ে পড়াশোনা বন্ধ করতে চায়নি। এ নিয়েও নানা সময় অপদস্থ হয়েছে। কিন্তু কখনও তাঁর স্বামী বেল্লাল সান্ত্বনা পর্যন্ত দেয়নি। এই ক্ষোভে বেল্লালকে ভিডিওকলে রেখেই বুধবার বিকেলে গলায় ফাঁস নেন মিতু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিমা।
শশীভূষণ থানার ওসি মো. তারিক হাসান রাসেল বলেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ভোলার মর্গে পাঠায়। আপাতত অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে কারণ বলা যাবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্ত শেষে মিতুর লাশ বৃহস্পতিবার বিকেলে আনা হয় বাবার বাড়িতে। সন্ধ্যা ৬টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন হয়েছে। তারা এ বিষয়ে মামলার কোনো সিদ্ধান্ত তখনও নেননি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ