যেকোনো ছোটগল্প অথবা উপন্যাসে শুরু ও শেষ করার প্রক্রিয়া রহস্যময়। কথাশিল্পী সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাকরণ মেনে আখ্যানের সূচনা বা সমাপ্তি নির্ধারণ করেন না। তাহলে কীভাবে একটি গল্প শুরু হয়; শেষ-ই বা হয় কী করে? সৃজনশীলতার কুহকে মোড়া প্রশ্নটির উত্তর সন্ধান...
মৌখিক পরীক্ষা চলছে... সেই সেমিস্টারে আমি পড়িয়েছি ভিক্টোরিয়ান উপন্যাস কোর্স। সহকর্মী এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলেন প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস উপন্যাসের প্রথম লাইন, মানে ওপেনিং চ্যাপ্টারের ওপেনিং সেনটেন্স কী। আমি মনে মনে একটু চমকালাম, কারণ আমার নিজেরই মনে পড়েনি সেই মুহূর্তে। জীবদ্দশায় একজন মানুষ কয়টি উপন্যাস পড়ে? হাজারখানেকও যদি হয়, কয়টির প্রথম লাইন আর তার মনে থাকে? আমার নিজের সর্বকালের প্রিয় উপন্যাস দ্য গড অব স্মল থিংসের প্রথম লাইন অবশ্য মনে আছে, ‘মে ইজ আ হট মান্থ ইন আয়েমেনেম’, কিন্তু সেই ২০০৪-০৫ সালে পড়া মাস্টারপিসের প্রথম লাইন মনে পড়ছিল না কিছুতেই।
সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের কপাল মন্দ, বহু কিছু তাদের মনে রাখতে হয়, মুখস্থ করতে হয়, পরীক্ষা পাসের জন্য। যদিও আমি নিজে ছাত্রজীবনে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন কখনও হইনি কোনো মৌখিক পরীক্ষায়। এই মানবজীবনে বহু কিছুর জন্যই আমি ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিই, সম্ভবত এটিকেও সেই তালিকায় যুক্ত করা উচিত। আমার এক বান্ধবী ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কবিতার প্রথম পঙ্ক্তি মনে করতে না পেরে ভর্ৎসনার শিকার হয়েছিল। বটেই তো, ইংরেজি সাহিত্যে একটা ডিগ্রি নিয়ে কেউ বের হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর এলিয়টের বিশ্বজয়ী কবিতার লাইন তার মনে থাকবে না, এ কখনও হয় নাকি? মজার ব্যাপার হলো, ভাইভা বোর্ডে তার এই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার জন্যই হোক আর যেজন্যেই হোক, প্রায় দেড় দশক কেটে গেছে, তবু আমরা কেউ ভুলিনি এপ্রিল ইজ দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থ। ২০২৪-এর এপ্রিলের ২৮ তারিখ কড়কড়ে রোদে বাসের ভেতর থেকে এক গোলাপি বোরকা পরা মেয়ের হেঁটে যাওয়া দেখে তার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম এই লাইন লিখে। পরদিন, মানে ২৯ তারিখে যেদিন সেই সিজনের উষ্ণতম দিন ছিল, ২৯ এপ্রিল, আমার ছেলের বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলেন। এপ্রিলের নিষ্ঠুরতা আমাদের জীবনে অক্ষয় হয়ে গেল।
চাই বা না চাই, কিছু কবিতার প্রথম লাইন আমাদের মনেই থাকে। হয়তো গল্প বা উপন্যাসের ক্ষেত্রে তা ততটা সত্যি নয়। উপন্যাসের ক্ষেত্রে মনে থাকে ইমেজারি, যে বিবরণ দিয়ে লেখক আখ্যান শুরু করেন সেই দৃশ্যকল্প মনে থাকে, শব্দ-বাক্য ধরে না হলেও। আমার মনে আছে সালমান রুশদির দ্য গ্রাউন্ড বিনিথ হার ফিট উপন্যাসের শুরুটা। ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, মানে ভ্যালেন্টাইনস ডের দিনে নায়িকা লাপাত্তা হয়ে যান মেক্সিকোর টেকিলা নামে এক জায়গা থেকে। রুশদি এই তারিখ বেছে নিয়েছেন খুব সংগত কারণেই, ভেবেচিন্তে। সেদিন আয়াতুল্লাহ খোমেনি তাঁর মাথার দাম ধরে ফতোয়া জারি করেছিলেন। সাহিত্যিক জীবনের অভিশাপময় অধ্যায় শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী বা হতে পারত?
কিছু উপন্যাসের শুরুর লাইন হয় ঠিক সেই উপন্যাসের মতোই বিখ্যাত। ক্ল্যাসিক উদাহরণ আনা কারেনিনা, যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর সকল সুখী পরিবার একই রকম হয় কিন্তু অসুখী পরিবারগুলোর অসুখের কারণ থাকে ভিন্ন ভিন্ন। হয়তো যারা কখনও আনা কারেনিনা পড়েননি, তারাও জানেন এই বিখ্যাত কোটেশন। বাংলা সাহিত্যের অধিকাংশ পাঠকই হয়তো মনে করতে পারবেন পুতুলনাচের ইতিকথার শুরুর দৃশ্যটি। বজ্রপাতে মৃত্যুর মতো ভয়ানক ঘটনা দিয়ে শুরু করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত উপন্যাসের মূলকথাটিই আগেভাগে বোঝাতে চেয়েছেন পাঠককে। দৈবের সামনে, নিয়তির সামনে মানুষ যে কত অসহায় আর শক্তিহীন সামর্থ্যহীন ক্রীড়নক ছাড়া কিছু নয়, সেকথা স্পষ্ট হয়ে যায় প্রথম অধ্যায়েই।
শুরুর সঙ্গে শেষের সংযোগে সাধারণত বৃত্ত পুরো হয়, আখ্যান তার পূর্ণতা পায়, পাঠক পান তাঁর কাঙ্ক্ষিত তৃপ্তি। তবে আধুনিককালে লেখা উপন্যাসে তো আর ভিক্টোরিয়ান আমলের মতো ক্রনোলজির বালাই নেই। শুরুও মাঝখান থেকে হতে পারে আবার শেষ হয়ে যেতে পারে ঘটনা পরম্পরায় মাঝামাঝি ঘটা কোনো ঘটনা দিয়ে। ধরা যাক দ্য গড অব স্মল থিংসের কথাই।
শুরু হয়েছে এস্থার কাছে তেইশ বছর পর রাহেলের ফিরে আসা দিয়ে, আর শেষ হয়েছে তাদের মায়ের প্রেমিকের সঙ্গে রাত্রির রদেভ্যুতে মিলিত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে। ঘটনাপ্রবাহ হিসাব করলে এর কোনোটিই শুরু কিংবা শেষ নয়। বরং বলা যায়, আমেরিকা থেকে যমজ ভাইয়ের কাছে রাহেলের ফিরে আসাটা ছিল শেষের দিকের গল্প, যা আগেই বলে দেন অরুন্ধতী রয়। মিলান কুন্ডেরার দি আনবেয়ারেবল লাইটনেস অব বিয়িং উপন্যাসের শেষটুকুও তাই, অসম্ভব সুন্দর সেই প্রজাপতির রাতের বর্ণনা উপন্যাসকে পূর্ণতা দেয় কিন্তু আদতে কাহিনির শেষ সেখানে নয়। এলিফ শাফাকের দ্য বাস্টার্ড অব ইস্তাম্বুলের শুরুর দৃশ্যে জেলিহা নামে উনিশ বছরের অবিবাহিত মেয়ে যাচ্ছে ডাক্তারের চেম্বারে গর্ভপাত করাতে, আর শেষ দৃশ্যে উনিশ বছর পর সেই মেয়ের পেটের অবৈধ সন্তানটিই তার অস্বীকৃত পিতার শবযাত্রা নিয়ে যায়, দুই দিনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছিল। লেখকের বয়ানে আর চরিত্রদের বরাতে আমরা জানতে পারি ওপর থেকে যা আসে সবই আল্লাহর রহমত, বৃষ্টিকে কখনও গাল দিতে নেই।
উপন্যাস, আমরা জানি, যে কোনো একটা গল্পের বর্ধিত রূপ নয়। মহাকাব্যের মতো উপন্যাসেরও থাকে প্রচুর শাখা-প্রশাখা, যেগুলোকে আমরা সাবপ্লট বলি; আবার মূল বা শিকড়ে থাকে একটি আপ্তবাক্য, আমরা অন্তর্দৃষ্টি নামে অভিহিত করি যাকে। সেই অন্তর্দৃষ্টি কিংবা জীবনবোধের সারাংশই অনেক সময় উপন্যাসের উপসংহার হিসেবে আসে। অন্তত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’র ক্ষেত্রে আমার তো মনেই হয়েছে– ‘দুঃখ রইলো মনে, ভালোবেসে মিটল না সাধ, জীবন এত ছোট কেনে?’ এই লাইনটির ওপর ভিত্তি করেই লিখিত হয়েছে সম্পূর্ণ আখ্যানটি। শুধুমাত্র বাক্য নয়, দৃশ্যকল্পের কথাও যদি ধরি, খোয়াবনামার শেষ দৃশ্যের সংলাপ ‘হেঁসেল জ্বলিচ্ছে’ মনের ভেতর গেঁথে গেছে আমার। চোখ বুজলেই আমি দেখতে পাই অসংখ্য জোনাকির জ্বলা-নেভার দৃশ্য আর ছোট মেয়ের সেই আলোকে চুলো ভাবার ছবি।
বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ হুমায়ূন আহমেদ একবার এক ননফিকশনে লিখেছিলেন তাঁর কৃষ্ণপক্ষ উপন্যাসের শেষটুকু নিয়ে। কোনো এক পাঠক নাকি তাঁকে বলেছেন যে শেষ দৃশ্যে অরুর মেয়ের বিয়েতে বরের হলুদ পাঞ্জাবি পরে উপস্থিত হবার ব্যাপারটা তাঁর ভালো লাগেনি, হিন্দি ছবির মতো মেলোড্রামা মনে হয়েছে। অথচ এই দৃশ্য দিয়েই লেখক চেয়েছিলেন মানবজীবনের অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারের দিকে ইশারা করতে। যে অদেখা নিয়তি কিংবা ভবিতব্যের সামনে মানুষ অসহায় আর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে, সেই অজানার প্রতিই ছিল লেখকের মূল আকর্ষণ। যারা উপন্যাসটি পড়েননি তাদের জন্য বলতে চাই, অরু পালিয়ে মুহিবকে বিয়ে করেছিল আর বিয়ের দিন মুহিব পরে এসেছিল হলুদ পাঞ্জাবি, অরুর ইচ্ছা ছিল সেটা সে পুড়িয়ে দেবে। পালিয়ে বিয়ে করার পরদিনেই এক সড়ক দুর্ঘটনায় মুহিব নিহত হয় আর বাপের বাড়ির ল্যান্ডলাইনের কী এক দুর্বিপাকে পড়ে অরু সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পর্যন্ত জানতে পারেনি, যেতে পারেনি হাসপাতালেও। বহু বছর পর অরুর মেয়ের বিয়েতেও যখন বর হলুদ পাঞ্জাবি পরে উপস্থিত হয় আর কনের বোন সেই পাঞ্জাবি পোড়ানোর আয়োজন করে তখন শেষ হয় কাহিনি।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসকে অনেকেই উপন্যাস পদবাচ্য বলতে রাজি হন না, হয়তো আসলেই তাঁর কিছু কাজ সেই অর্থে উপন্যাস হয়ে ওঠেনি, নভেলা বললেই ঠিক হবে। কিন্তু আখ্যান লিখতে গিয়ে যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা তিনি করেছেন, বোধকরি বাংলাদেশে আর কেউ ততটা করেননি। বিশেষত সাই ফাই কিংবা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের ক্ষেত্রে তিনি শেষ ধাপে গিয়ে চমক দিতেন। দ্বিতীয় মানব কিংবা অনন্ত নক্ষত্র বীথি হতে পারে এ ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যদি স্পেকুলেটিভ ফিকশনকে আপনি উচ্চমানের সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা না করতে চান, তাহলে অবশ্য সেটা ভিন্ন তর্ক। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, উপন্যাসের শেষটা হয়তো শুরুর চেয়ে বেশি জরুরি। হুমায়ূন আহমেদ শুরু করতেন সাদামাটাভাবে, শেষও করতেন অনেক সময় যাকে বলে ওপেন এন্ডেড কিংবা অমীমাংসিতভাবেই। কিন্তু মনে দীর্ঘস্থায়ী দাগ কাটার ক্ষেত্রে, উপন্যাসের শুরুর চেয়ে শেষ হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব রাখত বলে মনে হয়।
শুধু হুমায়ূন আহমেদই নয়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলোর শেষটিও অপূর্ব ছিল, মনে আছে ভূমিসুতা আর ভরতের পাশাপাশি বসে থাকার কথা। জায়গাটা গঙ্গার ধার ছিল কিনা তা এতদিন পরে আর মনে নেই যদিও। সেই সময়ের শেষটা কষ্টের ছিল, সত্যিকার অর্থেই মহাকাব্যের মতো বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় ছড়ানো সেই আখ্যানের সকল ঘটনা মনে থাকবে না কারোই। কিন্তু শুরুতে সিংহবাড়ির বউয়ের সন্তান প্রসব সংক্রান্ত জটিলতার ব্যাপারটা ভোলার মতো নয়। পরে জেনেছি এই রামকমল সিংহের কনিষ্ঠ পুত্রের চরিত্রটি আসলে মহাভারতের অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহের আদলে গড়া। ইতিহাসভিত্তিক আরেক প্রিয় উপন্যাস সি অব পপিজের শেষটা মোটেই তৃপ্তিদায়ক নয়। সব কয়জন প্রটাগনিস্টের আইবিস জাহাজে উঠে যাওয়ার পর বই শেষ। অমিতাভ ঘোষ ইচ্ছে করেই হয়তো একে ক্লিফহ্যাংগারে এনে শেষ করেছেন, তিনি আগেই জানতেন পরের খণ্ড রিভার অব স্মোক তাঁকে লিখতেই হবে। ট্রিলজির শেষ বই ফ্লাড অব ফায়ার আমি এখনও পড়িনি, তাই এর উপসংহার নিয়ে কিছু বলব না আর। একটা ছোট্ট এনেকডোট দিয়ে শেষ করি, এই গল্পটা বলার লোভ সামলাতেই পারছি না আসলে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য আমি পড়েছিলাম বেশ দেরিতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। জননী, পুতুলনাচের ইতিকথা কিংবা পদ্মানদীর মাঝি বহু আগে পড়া হয়ে গেলেও ওটি বাদ রয়ে গেছিল কেন জানি। পড়া শেষ করেছিলাম বাড়িতে বসে। ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়ে মহা উচ্ছ্বসিত হয়ে রফিক স্যারকে বলতে গেলাম.
আমার উপন্যাস পাঠের অভিজ্ঞতা বলে, আখ্যানের আসলে শুরুই আছে, শেষ নেই। যেভাবে ইলিয়াডের শেষ দৃশ্যে হেক্টরের শবদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার পরে আকিলিজের পরিণতির জন্য যেতে হয় আরও দূরে, যুদ্ধজয়ের পরে আগামেমননের জন্য অপেক্ষা করে ক্লাইটেমেনেস্ত্রার লুকানো ছুরি, ঠিক তেমনই সকল আখ্যান শুধুমাত্র শেষ করতে হবে বলেই ইতি টানা হয়... আসলে আখ্যান কখনো শেষ হয় না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ম য় ন আহম দ শ ষ কর শ ষ হয় কর ছ ল র জন য পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
কখনও বলিনি আমি আর অভিনয় করব না: নাঈম
নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক নাঈম। তবে এখন অভিনয়ে নেই। নানা ইস্যুতে আছেন আলোচনায়। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমায় ‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এ সংলাপকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। সংলাপ ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। নিজের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে আছি। সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসা নিয়েই জীবন চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ভাইরাল হলো ‘‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি, এটার সঙ্গে তো আপনিও আলোচনায় এলেন...
দেখুন, ফিল্ম অনেক বড় বিষয়। প্রায় তিন দশক আগেও একটি সিনেমার ডায়ালগ নিয়ে মানুষ এখনও আলোচনা করছে। ‘চাচা, হেনা কোথায়? তার একটি দৃষ্টান্ত। গত এক মাস হলো আমি শুধু দেখছি, কীভাবে এটা পুরো দেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এটার দ্বারা প্রমাণ হয়, ভালো সিনেমা, ভালো সংলাপ ও ভালো শিল্পী কতটা দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকেন। বিশেষ করে ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমার নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী বাপ্পারাজ-শাবনাজসহ পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাই। শাবনাজ যেহেতু এখন আমার জীবনসঙ্গী। সেই সূত্র ধরেই হয়তো আলোচনায়।
বাপ্পারাজ-শাবনাজ জুটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা তো পুরো দেশের মানুষের জানা। বাপ্পারাজের মতো অভিনেতা পাওয়া কঠিন। আমার স্ত্রী হিসেবে বলব না, ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমাসহ সব সময়ই ও ভালো অভিনয় করেছে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। তারা দু’জনই এককথায় অসাধারণ অভিনয়শিল্পী।
দর্শক তো এখনও আপনাকে অভিনয়ে চায়। অভিনয়ে ফেরার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সেটা নির্ভর করবে নির্মাতা ও প্রযোজকের ওপর। তারা যদি আমার ইমেজ, স্টাইল ও প্রেজেন্টেশন নিয়ে ভেবে গল্প বানান আর আমার যদি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই করব। একটা সময় আমি সিনেমা থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। তবে আমি কখনও বলিনি যে, আমি অভিনয় করব না কিংবা সিনেমা নির্মাণ করব না। এখনও আমার ইচ্ছে করে ভালো গল্প নিয়ে একটা সিনেমা বানাব। সিনেমা তো আমার ভেতরে। আমি তো কাজ করতে চাই। ক্যামেরার পেছনে বা সামনে; একটা সময় অবশ্যই আমি করব। তবে সময়টা বলতে পারছি না।
আমাদের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?
অনেক ধরনের মানুষ নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে হয়। এখানে নির্মাতা, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ অনেক বিষয় মাথায় রেখে চিন্তা করতে হয়। একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াবে কীভাবে; এটা নিয়ে আমার একটা চিন্তা থাকতে পারে। আমার একার উদ্যোগ বা চিন্তা দিয়ে হবে না। এ ক্ষেত্রে সবার সমান প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তা হলে একটা ইন্ডাস্ট্রি আপনা আপনিই এগিয়ে যাবে।
আপনি তো সাংস্কৃতিক পরিবারের ছেলে...
হ্যাঁ, আমি নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রপৌত্র। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। উপমহাদেশে ১৯৩৮ সালে কিন্তু ঢাকার নবাব পরিবার থেকেই প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। তখন আমাদের পরিবার থেকেই ছিল নির্মাতা, নায়ক ও ক্যামেরাম্যান। অর্থাৎ আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি, এটা ছিল একটা সাংস্কৃতিকমনা পরিবার।
সিনেমা হল সংকট নিয়ে কী বলবেন?
আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে তো দর্শক সিনেমা হলে আসবে। ভালো সিনেমা না বানিয়ে দর্শকদের বলব আপনারা হলে আসছেন না কেন? এটা তো ঠিক না। আগে আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে। হল এমনিতে বাড়বে। এখানে সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কারও একার প্রচেষ্টায় হবে না।
সিনেমার স্বর্ণযুগ কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। ‘না’ বলে আমার কাছে কথা নেই। তবে টাইম লাগে। সবাই মিলে একযোগ হয়ে যদি একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পারি, তাহলে সব সম্ভব।
ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন কিন্তু আপনি গ্রামে চলে গেলেন কেন?
ঢাকায় আমার দাদার বাড়ি আর টাঙ্গাইল নানার বাড়ি। ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। গ্রামের মাটির সঙ্গে তো প্রতিটা মানুষ জড়িত। আমরা বিভিন্ন বিভাগের মানুষ। কর্মজীবনে আমাদের ঢাকায় থাকতে হয়। ঈদের ছুটিতে আমরা কীভাবে বাড়ি চলে যায়! তো কোনো সময় আমি চিন্তাও করিনি যে বিদেশে স্থায়ী হবো। সব সময় ভেবেছি, এ দেশেতে আমার জন্ম, এ দেশের মাটিতে যেন আমার মৃত্যু হয়।