গাজায় যুদ্ধবিরতি: চুক্তির অন্তরালের নায়ক যারা
Published: 16th, January 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্য থেকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফের একটি ফোনকল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সহযোগীদের বিস্মিত করেছিল। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কাতারের রাজধানী দোহা থেকে উইটকফ ঘোষণা দেন, তিনি ইসরায়েলে যাচ্ছেন এবং নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তখন ইহুদিদের অবকাশের দিন সাব্বাত শুরু হয়ে গেছে।
নেতানিয়াহুর সহযোগীরা বললেন, অবকাশের দিনে তিনি শুধু একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন; সেটা নেতানিয়াহুর ইচ্ছামতো কোনো সময়ে। তখন ট্রাম্পের দূত ৬৭ বছর বয়সী আইনজীবী উইটকফ তাদের প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সকালের দিকেই তিনি দেখা করতে চান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠক ছিল ‘উত্তেজনাপূর্ণ’। স্টিভেন উইটকফ যে বার্তা পৌঁছে দিলেন, তা হলো– প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ রয়েছে। তিনি জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি যুদ্ধবিরতি চান। ট্রাম্প চান গাজায় যুদ্ধ শেষ হোক। তাঁর হাতে আরেকটি কাজ আছে। ওই বৈঠকের বর্ণনা দিতে গিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা চ্যানেল ১৪-কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্পের পক্ষ থেকে উইটকফ এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন; তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে একটি চুক্তি চেয়েছেন।
শুধু উইটকফই নন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চুক্তির জন্য কাজ করেছেন আরও অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, মিসর, তুরস্ক ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা এতে ছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছিলেন; একটি সমঝোতায় পৌঁছতে হামাস ও ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিলেন।
গত সোমবার তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান ইব্রাহিম কালিন আঙ্কারায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেন। সব কিছুকে ছাপিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট– ট্রাম্প ও তাঁর বিশেষ দূত উইটকফের চেষ্টা। গত বুধবার বিকেলে দোহায় যখন চুক্তির বিষয়টি দৃশ্যমান, তখন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার জানান, তিনি তেল আবিবে ফিরে যাচ্ছেন। ওই দিনই ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে চুক্তিতে তাঁর কৃতিত্বের ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণেই এ মহাকাব্যিক চুক্তিটি হয়েছে। এটা পুরো বিশ্বের জন্য এই বার্তা যে, তাঁর প্রশাসন শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে; পাশাপাশি সব মার্কিনির সুরক্ষায় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে। সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প বলেন, এটা ভেবে তিনি রোমাঞ্চিত যে, মার্কিন ও ইসরায়েলের জিম্মিরা বাড়ি ফিরবেন, তারা তাদের পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে পুনর্মিলিত হবেন। যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তিনি এটাকে তাঁর প্রশাসনের কূটনৈতিক সাফল্য বলে বর্ণনা করেন।
এর আগে বহুবার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হামাসের প্রতিনিধিরা মিসরের রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনায় বসেন। এসব আলোচনায় ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগুলো ভেস্তে যায়। দৌড় শুরু হলেও তা চূড়ান্ত রেখায় পৌঁছায়নি। এসবের মধ্যেই হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের রাজধানী তেহরানে হত্যা করে ইসরায়েল। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে; যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করে গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। শপথের আগেই তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির মাধ্যমে বড় ধরনের সাফল্য দেখালেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস ১ হাজার ২০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে। পরে ইসরায়েল গাজায় সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি চালায়। এতে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি। হতাহতের অধিকাংই নারী ও শিশু।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ছয় সপ্তাহের জন্য সাময়িকভাবে বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার (২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (১ মার্চ) গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবনায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আরো পড়ুন:
সৌদি আরবে পৌঁছালেন মার্কো রুবিও
গাজা পুনর্গঠনে ৫৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ লাগবে: জাতিসংঘ
সাময়িকভাবে বাড়ানো যুদ্ধবিরতির এই মেয়াদে পড়েছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস ও ইহুদিদের পাসওভার উৎসব। গাজাসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে শনিবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। আর ইহুদিদের উৎসবটি শুরু হবে ১২ এপ্রিল। চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাবটি দেন। প্রস্তাবের অধীনে গাজায় এখনো হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের অর্ধেক প্রথম দিনে মুক্তি পাবেন। এই জিম্মিদের মধ্যে জীবিত ও মৃত উভয়ই থাকবেন।
তবে ইসরায়েলের সবশেষ এই পদক্ষেপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তাদের চাওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয়, হতে হবে স্থায়ী সমাধান।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছিল।
ঢাকা/ফিরোজ