কক্সবাজারে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী হত্যা মামলার তিন আসামি আদালতে দায় স্বীকার করেছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আসামিরা বলেন, গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। কক্সবাজার হোটেল সিগাল পয়েন্টের সামনের বালুচরে সৈকতে বসানো চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী ওরফে টিপু (৫৪) এবং ঋতু নামের এক তরুণী। রাত ৮টার দিকে চেয়ার ছেড়ে তারা দু’জন সৈকত থেকে হেঁটে সিগাল হোটেলের দিকে যাচ্ছিলেন। ঋতু রব্বানীর আগে আগে আগে হাঁটছিলেন। পেছনে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলেন গোলাম রব্বানী।

জবানবন্দিতে তারা বলেন, ঋতুর ইশারায় আগ থেকেই গোলাম রব্বানীকে নজরদারিতে রাখেন শেখ শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে পাপ্পুসহ চারজন। সৈকত থেকে পাকা সড়কে ওঠার জন্য গোলাম রব্বানী যখন ঝাউবাগানের ভেতরে চলে আসেন, তখন সামনে এগিয়ে যান শেখ শাহরিয়ার। তারপর রাতের অন্ধকার থেকে পেছন দিক থেকে রাব্বানীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে একটি গুলি করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটে পড়েন রব্বানী। এরপর গোলাম রসুলকে (২৫) সঙ্গে নিয়ে শেখ শাহরিয়ার রিকশায় উঠে চলে যান কক্স কুইন রিসোর্টে। আর ঋতু ও রিয়াজ নামের অপর দুজন সরে পড়েন অন্যদিকে।

জবানবন্দি দেওয়া তিনজন হলেন ঋতু (২৪), শেখ শাহরিয়ার ইসলাম (২৭) ও গোলাম রসুল (২৫)। আসামিরা সবাই খুলনার বাসিন্দা।

এর আগে গত সোমবার রাতে মৌলভীবাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় তাদের আদালতে তোলা হয়। 

গত বুধবার কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, চাচা শহীদুলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে পাপ্পু সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানীকে হত্যা করেছেন। অন্য দুই আসামি ঋতু ও গোলাম রসুলও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। হত্যার জন্য আসামিরা কক্সবাজারকে উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেন।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ঋতু সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতে, শাহরিয়ার ইসলাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদের আদালতে এবং গোলাম রসুল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো.

আসিফের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া জবানবন্দি শেষ হয় রাত ৯টায়।

জবানবন্দি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান। তিনি বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।’

উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সৈকতে সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় রব্বানীকে। তাঁর বাড়ি খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার দৌলতপুরে। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল, জিয়া-জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি

১৯৭৫ সালের নভেম্বরে পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থানের মধ্যে নিহত কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পর করা মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাতে তৎকালীন সেনাপ্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মেজর (অব.) মো. আবদুল জলিল ও মেজর (অব.) আসাদ উজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি জানিয়ে তাঁদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে এ হত্যাকাণ্ডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) দায় পেলেও মৃত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগপত্র দেননি তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ঢাকা মেট্রোর পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম। তাঁর এই প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হলে দৃশ্যত এ মামলার যবনিকাপাত হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অস্থিরতার মধ্যে ৩ নভেম্বর সামরিক বাহিনীতে এক অভ্যুত্থান ঘটে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। তখন বন্দী করা হয়েছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। চার দিন পর ৭ নভেম্বর আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে মুক্ত করা হয় জিয়াউর রহমানকে। সেদিনই দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে (বর্তমানে জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ) নিহত হন খালেদ মোশাররফ, নাজমুল হুদা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার।

কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পর ২০২৩ সালে মামলা করেন তাঁর মেয়ে নাহিদ ইজাহার খান। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মেজর জলিলকে। হুকুমের আসামি করা হয় জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহেরকে।

নাজমুল হুদা মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরে একটি সাবসেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেছিল, সে মামলার আসামিদের একজন ছিলেন তিনি।

৪৭ বছর পর মামলা

নাজমুল হুদা হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পর ২০২৩ সালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান। মামলায় মেজর (অব.) জলিলকে প্রধান আসামি করা হয়। হুকুমের আসামি করা হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা আবু তাহেরকে।

মামলায় নাহিদ ইজাহার অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা (নাজমুল হুদা) নিহত হওয়ার সময় তিনি ও তাঁর ভাই ছোট ছিলেন। তাঁরা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, সহকর্মী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুসন্ধানে জানতে পারেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে নাজমুল হুদার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ এবং এ টি এম হায়দার অবস্থান করছিলেন। নাজমুল হুদা সকালে নাশতা করার সময় দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে একটি ফোন আসে। এরপর দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা নাজমুল হুদাসহ তিন কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে যান।

গত ৩০ নভেম্বর মেজর নাজমুল হুদা হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে তিনজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাঁদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।সিকদার মহিতুল আলম, তদন্ত কর্মকর্তা

এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা আবু তাহেরের নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকেরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় নাজমুল হুদাসহ তিনজনকে হত্যা করেন বলে এজাহারে দাবি করা হয়।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে আসামি করে এ মামলা করার সময় নাহিদ ইজাহার সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। বিএনপি তখন মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিল, এর পেছনে সরকারের কারসাজি থাকতে পারে।

মেজর এম এ জলিল ও জিয়াউর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশৃঙ্খলতায় পণ্ড মেসিকে ঘিরে কলকাতার আয়োজন
  • টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব
  • দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে মাস্ক পরা যুবক, এরপর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন
  • চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল, জিয়া-জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি
  • তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর
  • হাদিকে গুলি: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল
  • রণবীরের হাঁটুর বয়সি নায়িকা সারাকে কতটা জানেন?
  • শত বছরের পুরোনো বিমানবন্দরে হচ্ছে ৩ হাজার কোটি ডলারের শহর
  • চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা কেটেছে
  • ‘এরপর তাঁর পালা’: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রোকে ট্রাম্পের হুমকি