জাবিতে ২ পক্ষের উত্তেজনায় ছাত্রদলের সভা পণ্ড
Published: 16th, January 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির পদবঞ্চিত ও পদধারীদের মধ্যকার হট্টগোলের কারণে পণ্ড হয়েছে প্রথম মতবিনিময় সভা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে এ সভা শুরু হয়।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক বৃহস্পতিবার বিকালে সভা আহ্বান করে শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি। সভায় পদবঞ্চিতরা শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে দীর্ঘদিনের ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করা ও ছাত্রলীগ কর্মীদের পদায়নের কারণ জানতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় পদবঞ্চিতদের সঙ্গে সদ্যগঠিত কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাকর্মীদের কয়েকজনও যোগ দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি স্লোগানের পর মতবিনিময় সভাটি পণ্ড হয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান বিনিময় চলছে। এ সময় ঘটনাস্থলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আসলে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর সভা স্থগিত ঘোষণা করেন।
এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হওয়ার পর অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষের একটি জানালার গ্লাস ভাঙা ও কাচগুলো নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে উভয় পক্ষই ভাঙচুরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন।
পদবঞ্চিতদের দাবি, আওয়ামী দুঃশাসনের কঠিন সময়ে তারা রাজনীতি করেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু নবগঠিত কমিটিতে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। উল্টো দুঃসময়ে যাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি, যারা ছাত্রলীগ করেছে, তাদের দিয়ে পকেট কমিটি করা হয়েছে।
পদবঞ্চিত নেতা আবদুল কাদের মারজুক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্টিম রোলার সহ্য করে আমরা যারা দীর্ঘ এক যুগ ধরে রাজনীতি করে আসছি, তাদের উপেক্ষা করে পকেট কমিটি দেওয়া হলো। এ কমিটি আমরা মানি না। আমাদের বঞ্ছিত করা হয়েছে। কেন বঞ্ছিত করা হয়েছে, তা আমাদের মাথায়ই ধরে না। ৫ আগস্টের পর যারা একটা প্রোগ্রামও করেনি, তারাও পদ পেয়েছে। অথচ আমাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।”
সদ্যঘোষিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সেলিম রেজা বলেন, “এ কমিটিতে আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করা অনেক সহযোদ্ধা কোন পরিচয় পাননি। যারা দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, হামলা-মামলা সহ্য করে রাজপথে থেকেছেন, তাদের পরিচয় না দেওয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। এজন্য আজ আমরা সভাটি বর্জন করেছি।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “আমরা ধারণা করছি গুপ্ত সংগঠনের ইন্ধনে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত সভা বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আমাদের একটা অংশ আছে, যাদের মধ্যে না পাওয়ার বেদনা আছে। কিন্তু আমরা মনে করি তৃতীয় কোন শক্তির ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সেখানে নির্দেশনা আছে, কারো বিরুদ্ধে যদি ছাত্রলীগ বা শিবিরে সংশ্লিষ্ট থাকার অকাট্য প্রমাণ থাকে, আমরা তাদের অব্যাহতি দিয়ে দেব।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘ছাত্রদলের দুই পক্ষের উত্তেজনার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে আসি। এসে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজির কারণে চালের দাম বাড়ছে
কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম বাড়ার জন্য বিএনপির কয়েকজন নেতার চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন দলটির একাংশের নেতাকর্মী। তাদের কেউ সম্প্রতি গঠিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে পদবঞ্চিত, কেউ আবার প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ-পদবি পাননি।
একই সঙ্গে জেলাজুড়ে চাঁদাবাজি, হাটঘাট দখল, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণও বর্তমান কমিটির নেতারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই নেতারা মসজিদের জায়গা ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) জমি দখলেরও অভিযোগ করেন।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে দলের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। এর আয়োজন করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি। কর্মশালায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এ কর্মসূচি সামনে রেখে অবমূল্যায়িত ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মী দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সকাল ১০টা থেকে শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে কর্মশালা শুরু হয়। অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে শহরের ইসলামিয়া কলেজ মাঠে জড়ো হয়ে শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শহরের এনএস রোড ঘুরে তারা সাড়ে ১২টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে যান। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন নেতাকর্মী সেখানেই স্লোগান শুরু করলে হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
এ সময় কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেহাবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে যান। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীর কেউ কেউ জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে প্রধান ফটকের সামনেই সমাবেশ করেন তারা। বেলা সোয়া ১টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে তারা চলে যান।
এর আগে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মী। ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল অনশন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আইনজীবী শামিমুল হাসান অপু বলেন, দলের নিবেদিতপ্রাণ ও আওয়ামী দুঃশাসনের হামলা-মামলা, নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতাদের কারণে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব চলছে। তারা মসজিদের জায়গা দখল করছেন, চালের মোকামেও চাঁদাবাজি করছেন। এ কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শামিমুল হাসান অপু আরও বলেন, জেলা বিএনপির নতুন নেতারা কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, সারের ব্যবসা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বিএনপির কমিটিতে ঢুকিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এই কমিটি মানি না।’
নতুন কমিটির নেতারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করছেন বলে অভিযোগ করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদ। তিনি বলেন, তারা নিজেদের মতো চলে। ‘মামা-ভাগ্নে কমিটি’ বাতিল না হলে তীব্র আন্দোলন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান পিন্টু। কমিটি বাতিল না হলে বিক্ষোভ-হরতালের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে কুষ্টিয়া অচল করে দেওয়ার সতর্কবার্তা দেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজল মাজমাদার।
এদিকে চালের দাম বেড়ে যাওয়া ও চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘আমি কর্মশালায় আছি। তারা (বিক্ষুব্ধ নেতারা) যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। এসব কথার কোনো সারমর্ম নেই।’