বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ ক্রিকেটারদের ২৫ শতাংশ টাকা শোধ করেছে দুর্বার রাজশাহী। আগামীকাল দুপুর ২টায় নির্ধারিত সময়ই মাঠে নামবে ফ্রাঞ্চাইজিটির ক্রিকেটাররা। যদিও পারিশ্রমিক নিয়ে তালবাহানার কারণে খেলায় মন নেই রাজশাহীর ক্রিকেটারদের।

এর আগে গতকাল পারিশ্রমিক না পাওয়ায় অনুশীলন বর্জন করেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। এমনকি আগামীকালের ম্যাচও না খেলার হুমকি দেন তারা। এরপর রাতেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে বৈঠক করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।

আজ সকালে ক্রিকেটাররা অনুশীলন করলেও টাকা পাওয়া নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না তারা। দিন গরিয়ে সন্ধ্যা হলেও ছিলো না টাকা দেওয়ার কোনো তথ্য। তবে অবশেষে রাত ১০টায় ক্রিকেটারদের টাকা দেওয়া শুরু করেছে মালিকপক্ষ।

টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, বিপিএল শুরুর আগে দলগুলো খেলোয়াড়দের মোট অর্থের অর্ধেক শোধ করবে। বাকি ৫০ শতাংশের ২৫ ভাগ টুর্নামেন্টের মাঝে এবং বাকিটা টুর্নামেন্ট শেষে পরিশোধ করতে হবে। দেরিতে হলেও পারিশ্রমিক দেওয়া শুরু করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। তবে দ্রুতই বাকি ২৫ ভাগ টাকা ক্রিকেটারদের শোধ না করলে আবারও বেঁকে বসতে পারেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল শ ধ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি আরব কি পারবে কূটনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে মুখোমুখি বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। আলোচনার মূল বিষয় ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ও কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা। রিয়াদের বিলাসবহুল রিটজ-কার্লটন হোটেলে চলছে এই বৈঠক। এর আগে সৌদি আরব ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়েছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সৌদি আরবের ভূমিকা বাড়ছে।

এই বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ এসেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। দ্বিতীয় মেয়াদে সৌদি আরবকে কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রস্থলে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এই আলোচনায় সফলতা আসুক বা না আসুক, আরব বিশ্ব এখন সৌদি আরবের কাছ থেকে আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করছে। বিশেষ করে, তারা চায় সৌদি আরব ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানেও বড় ভূমিকা পালন করুক।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত তিনবার সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে তিন বছর পর প্রথম বৈঠক হয়েছিল রিয়াদেই। এরপর ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আরেক দফা আলোচনা। এর আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল।

ট্রাম্প কেন সৌদি আরবকেই বেছে নিচ্ছেন? এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। ট্রাম্প প্রক্রিয়ার চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেন। সৌদি আরব রাশিয়া ও ইউক্রেনের বন্দী মুক্তিতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া দেশটি একাধিক পক্ষের আলোচনায় ‘সততার মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।

ট্রাম্পের জন্য এটা শুধু কূটনীতি নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প ভিন্ন পথে হেঁটেছিলেন। সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা প্রথম বিদেশ সফরে কানাডা যান। কিন্তু ট্রাম্প প্রথমেই গেলেন সৌদি আরবে। সেখানেই তিনি যুবরাজ সালমানের সঙ্গে ১০৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেন।

এই চুক্তি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ট্রাম্পের জামাতা ও ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর কুশনারের ব্যক্তিগত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাফিনিটি পার্টনারস’ দুই বিলিয়ন ডলার পেয়েছে সৌদির সরকারি বিনিয়োগ তহবিল (পিআইএফ) থেকে। এই থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্প সৌদি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে খুব গুরুত্ব দেন।

গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের কিছু বক্তব্য সৌদি আরবকে অস্বস্তিতে ফেললেও তিনি এখনো মনে করেন সৌদিরা এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে বড় বড় কূটনৈতিক আলোচনা সম্ভব। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে, সৌদি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কটা আদর্শ বা মূল্যবোধভিত্তিক নয়, বরং লেনদেনভিত্তিক। এই ধরনের সম্পর্কই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে তার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক বলে মনে করেন তিনি।

নিরপেক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় সৌদি আরবের কূটনৈতিক ভাবমূর্তি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চলমান আলোচনাগুলোর পেছনে রয়েছে রিয়াদের পূর্বাভিজ্ঞতা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনে আটক ১০ বিদেশিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটিই ছিল যুদ্ধ চলাকালে সবচেয়ে বড় বন্দিবিনিময়ের একটি উদাহরণ।

ইউক্রেন সংকটে সৌদি আরব ‘ইতিবাচক নিরপেক্ষতা’র নীতি গ্রহণ করায় দেশটি রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছে। রাশিয়ার সঙ্গে তেল উৎপাদন জোট ওপেক প্লাসে কাজ করা এবং ২০২৩ সালে আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে রিয়াদ প্রমাণ করেছে যে তারা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য এক কূটনৈতিক অংশীদার।

শুধু ইউক্রেন যুদ্ধই নয়, সৌদি আরব এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটে মধ্যস্থতার গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মিলে ২০১৮ সালে সৌদি আরব ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি করায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। সেই চুক্তিতে দুই দশকের পুরোনো যুদ্ধের অবসান ঘটে। তখন রিয়াদ ও আবুধাবি সরাসরি আলোচনার আয়োজন করে, আর্থিক সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়, নিরাপত্তাসহায়তা দেয় এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসায়।

২০২৩ সালে সৌদি আরব আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে সুদানের দুই যুদ্ধরত পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে ‘জেদ্দা ঘোষণা’ নামের একটি লিখিত চুক্তি করায়। সুদানের সেনাবাহিনী (SAF) ও আধা সামরিক বাহিনী RSF-এর মধ্যে এটিই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি। যদিও এই চুক্তি মাত্র সাত দিন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এনে দেয়, তবু এটি ভবিষ্যতের আলোচনার ভিত্তি তৈরি করেছে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে রিয়াদের ভাবমূর্তি আরও শক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চান রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হোক। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সামনাসামনি বৈঠকে বসতে আগ্রহী। সৌদি আরব এমন একটি সুযোগ করে দিতে পারে—একটি জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদে, সৌজন্যমণ্ডিত আতিথেয়তার পরিবেশে এ ধরনের বৈঠক আয়োজন করবার সক্ষমতা তাদের আছে।ওমান ও কাতারের কূটনৈতিক পরিচিতি

গত দুই দশকে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদস্যরাষ্ট্রগুলো আরও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে শুরু করেছে। এর ফলে তারা আঞ্চলিক কূটনীতিতে ক্রমেই বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এই প্রেক্ষাপটে কাতার এখন গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কাতারের বড় সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনার পথ সুগম করা।

ওমান বরাবরই নিরপেক্ষতার নীতি মেনে চলে। এই অবস্থান কাজে লাগিয়ে দেশটি কূটনৈতিক মহলে গোপনীয়, কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ২০১৫ সালের ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তির পেছনে থাকা গোপন আলোচনায় ওমানের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনআফগান তালেবান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক কি নতুন মোড় নিচ্ছে২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এসবের সাপেক্ষে সৌদি আরব এখনো এই কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন খেলোয়াড়। অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা বাড়লেও হামাস, তালেবান কিংবা হুথিদের মতো শক্তির সঙ্গে দীর্ঘদিনের কঠিন আলোচনায় ওমান ও কাতারের যে অভিজ্ঞতা আছে, সেই রকম ‘সংঘাতের ক্ষত’ সৌদি আরবের নেই।

এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ওমান ও কাতারকে বড় মূল্য দিতে হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর দৃষ্টিতে এসব গোষ্ঠী হয় নিষিদ্ধ, নয়তো তাদের স্বার্থবিরোধী। ফলে মাসকাট ও দোহাকে অনেক সময়ই কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সৌদি আরব তুলনামূলকভাবে ‘পরিষ্কার খাতা’—যার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আলোচনার আয়োজক হিসেবে সৌদি আরবকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি মধ্যস্থতা না করে সৌদি আরব বরং আলোচনার মঞ্চ প্রস্তুত করে দিচ্ছে। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত কৌশল। কারণ, তিনি চান রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তারা মুখোমুখি আলোচনা করুক। ভবিষ্যতে তিনি নিজেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসতে চান। আর সেই আলোচনার জন্য সৌদি আরব একটি দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ ও সৌজন্যপূর্ণ আতিথেয়তায় ভরপুর পরিবেশ দিতে প্রস্তুত।

নতুন ভূমিকা, নতুন দায়িত্ব

আলোচনার ফলাফল যা-ই হোক, সৌদি আরব এই আন্তর্জাতিক বৈঠকের আয়োজনকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে। এখন মনে হচ্ছে আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের ছাপিয়ে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে নেতৃত্বের জায়গায় উঠে আসছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রিয়াদের এই ভূমিকা ভবিষ্যতে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা পুনরায় শুরু হলে সৌদি আরবকে আলোচনার টেবিলে বসার সুযোগ এনে দিতে পারে। কয়েক বছর আগেও তা কল্পনার বাইরে ছিল। কমপক্ষে এই প্রক্রিয়া রিয়াদের অবস্থানকে আরও শক্ত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদি নিরাপত্তা ইস্যুতে সচেতন রাখবে। একই সঙ্গে এই আলোচনা আয়োজনের মাধ্যমে গাজা, লেবানন বা সিরিয়ার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর যে চাপ ছিল, তা কিছুটা সরিয়ে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে।

তবে এই নতুন ভূমিকার সঙ্গে এসেছে নতুন দায়িত্ব, ভার ও জবাবদিহি। শুধু আন্তর্জাতিক মহল নয়, আরব দুনিয়ার মানুষও এখন সৌদি আরবের কাছে চায় যে তারা আরও সক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক সংকট সমাধানে এগিয়ে আসুক। প্রয়োজনে বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী পদক্ষেপেও অংশ নিক।

এই কূটনৈতিক মর্যাদা সৌদি আরব স্বাগত জানালেও, তা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন হবে সাহস, সংকল্প, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং সমালোচনা সহ্য করার শক্তি। কারণ, এখন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখছে পৃথিবী।

নিল কুলিয়াম অ্যাসোসিয়েট ফেলো, মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা প্রোগ্রাম

চ্যাথাম হাউস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ