দেশে এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে এই অবস্থায় ভাইরাস থেকে বাঁচতে ৬ ধরনের জটিল রোগীকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ৬টি জটিল রোগ হলো-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি (দীর্ঘস্থায়ী অবরোধক ফুসফুসীয় ব্যাধি), অ্যাজমা ও ক্যান্সার।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে এক বিশেষ সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

তারা বলছেন, একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া এই রোগ শনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আর আক্রান্তরা লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেলে রোগটি ভালো হয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

৩০ সেকেন্ড হাঁটলে কি ক্যালোরি খরচ হয়?

শীতে কুসুম গরম পানি পান করলে শরীরে যা ঘটে

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা.

মো. শাহিনুল আলম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সহকারী অধ্যাপক ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত ও ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী।

এ সময় অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, “এইচএমপিভি একটি পুরাতন ভাইরাস। এই ভাইরাসের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। হাত ধোয়া ও মাস্কের ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে।”

অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, “এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।বিশেষ করে যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।”

অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্ক নয়। এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও উচ্চমাত্রার ঝুঁকি রয়েছে এমন সব রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।”

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত বলেন, “হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস এক ধরনের আরএনএ ভাইরাস যা সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এটি অন্যান্য ফ্লু যেমন-ইনফুলুয়েঞ্জা রেস্পিরেটরি সিনসাইশিয়ালের মতোই একটি ভাইরাস।সর্বপ্রথম নেদারল্যান্ডে ২০০১ সালে এইচএমপিভি মানুষের শরীরে শনাক্ত হয় এবং বাংলাদেশে প্রথম ২০১৭ সালে এইচএমপিডি সংক্রমণ শনাক্ত হয়।”

তিনি বলেন, “এটি আসলে মারাত্মক কোনো ভাইরাস নয়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথা এসব লক্ষণ নিয়ে আসতে পারে, এছাড়া চামড়ায় র‌্যাশ এবং কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি, অ্যাজমা অথবা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ আছে তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে খুব সহজেই এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেমন-বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সাবান, পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে নিতে হবে, আর টিস্যু না থাকলে হাতের কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি কাশি দিতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে ইত্যাদি। সাধারণত শীতকাল ও বসন্তকালে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।”

এইচএমপিভি একটি সংক্রামক রোগ এবং যেভাবে এটি ছড়ায়, তার সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে করোনার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার মতোই হাঁচি, কাশি, আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি অবস্থান, করমর্দন এবং স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এ রোগটি।

তবে, ভাইরাসটিকে নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে অভিমত চিকিৎসক ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এর প্রতিরোধের সঙ্গে করোনা বা কোভিডের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাদৃশ্যও রয়েছে। চীনের যেসব হাসপাতালে এইচএমপিভি রোগীরা ভর্তি হয়েছেন, তাদের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ ব্যবহার না করে প্রচলিত ওষুধই দেওয়া হচ্ছে।

রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো হলো-নিয়মিত দিনে কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কোনো কিছু স্পর্শ করার পর হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এইচএমপ ভ সতর ক থ ক আতঙ ক ত স ধ রণত

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতাকে আ.লীগ নেতার ফুলেল শুভেচ্ছা, শোকজ

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মান্নানকে আওয়ামী লীগ নেতা ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এমন অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করার অভিযোগে তুলে তাকে শোকজ করে জেলা বিএনপি। বুধবার দুপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু ও সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ সাক্ষরিত শোকজের চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, আপনি বোদা উপজেলা বিএনপির নব-গঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত ফ্যাসিস্ট দোসরদের দ্বারা আপনাকে অভিনন্দিত করার সম্মিলতি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এহেন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা চিঠি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।

জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল বোদা উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল মান্নান। ২১ এপ্রিল রাতে বোদা পৌরসভার বন্ধুদের সংগঠন বোদা ফ্রেন্ডস ক্লাবে সংগঠনটির সদস্য হিসেবে তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সাবুল বিএনপি নেতা মান্নাকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবির সূত্র ধরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমরা তাকে নোটিশ পাঠিয়েছি।’

বোদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বোদা ফ্রেন্ডস ক্লাবে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এ নিয়ে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চিঠি পেয়েছি। আমি জবাব দেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ