নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স (ফিমস) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানার বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং ও হেনস্তার অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এ ঘোষণা দেন একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৩৮ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া তারা গত রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগপত্রও জমা দেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ফিমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.

মেহেদী মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “গত রবিবার শিক্ষার্থীরা বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। পরে তারা ক্লাসও বর্জন করে। আমরা একাডেমিকভাবে বিষয়টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।”

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষিকার (ড. নাহিদ সুলতানা) বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অভিযোগ হচ্ছে, নম্বর টেম্পারিং, পর্দা নিয়ে হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ, ক্লাসরুমে এসে হুমকি-ধামকি দেওয়া এবং এক শিক্ষার্থীকে মোবাইলে হুমকি দেওয়া অন্যতম। এ অবস্থায় তারা ওই শিক্ষিকার ক্লাস করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে ভবিষ্যতে কেউ তাদের সুপারভাইজার হিসেবে চান না বলে জানিয়েছেন। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুধু নম্বর বৈষম্য নয়, ওই শিক্ষিকা পাঠদানের সময়ও অবজ্ঞাসূচক ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যা শিক্ষার্থীদের মনোবলে প্রভাব ফেলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

অভিযুক্ত শিক্ষিকা ড. নাহিদ সুলতানার বিরুদ্ধে দাঁড়ি রাখা নিয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বলেন, “দাঁড়ি রাখায় নাহিদ ম্যাম আমাকে প্রায়ই হেনস্তা করতেন। তিনি দাঁড়ি দেখে বলতেন তোমাকে জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতার মত লাগছে। আমাদের ব্যাচের সব শিক্ষার্থী এর সাক্ষী। তিনি সবার সামনেই এভাবে আমাদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লাঞ্ছিত করতেন। শুধু দাঁড়ি নয়, তিনি পর্দা নিয়ে হেনস্তা, মার্ক টেম্পারিং, ফোন করে হুমকি দেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।”

পর্দা করায় হেনস্তার শিকার হওয়া তাবাসসুম জাহান সানজি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ক্লাস টেস্ট চলাকালে আমাকে বিভিন্ন ব্যাক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করে সহপাঠীদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন। যেমন- আমি পর্দা কখন থেকে শুরু করলাম, কে আমাকে পর্দা করতে বলে, পর্দা করে দাদির মতো হয়ে থাকলে হবে নাকি? এমনকি আমার স্বামীর ব্যাপারেও নানা নেতিবাচক কথা বলে আমাকে সবার সামনে অপমান করে। এছাড়াও আমাকে ক্লাসে ইশারা-ইঙ্গিতে সবার সামনে অপমান করতেন।”

তিনি আরো বলেন, “পর্দার পাশাপাশি আমার পারিবারিক জীবন নিয়েও তিনি নানাভাবে আমাকে হেনস্তা করতেন। আমার বিয়ের পুরোপুরি পর্দা করা শুরু করি। ম্যাম সবার সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলতেন। তিনি বলতেন, ‘তোমার স্বামী তোমাকে বোরকা পরিয়ে দাদি বানিয়ে দেশে-বিদেশে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরবে।’ কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ তিনি এভাবে ক্লাসে আমাকে লাঞ্ছিত করতেন। একদিন তিনি আমার স্বামী দেশের বাইরে চলে গেছে জেনে বারবার ইনফ্লুয়েন্স করেন বেপর্দা হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘হাজবেন্ড চলে গেছে ভালো হইছে। খিমার টান দিয়ে আমাকে খুলে ফেলতে বলেন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিমস বিভাগের ১৬তম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, পর্দা করা নিয়ে আমাদের ব্যাচের একটি মেয়েকে প্রায় হেনস্তা করতেন নাহিদ সুলতানা ম্যাম। ক্লাসের মধ্যে সবার সামনে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতেন। মনে হচ্ছিল, পর্দা করা এবং দাঁড়ি রাখা বড় কোনো অপরাধ।  

অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। চেয়ারম্যান স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে, চেয়ারম্যান স্যার খতিয়ে দেখুক। আমি তো বর্তমানে ওই ব্যাচের (১৬ তম ব্যাচ) ক্লাসই পায় না। তাহলে ওরা আমাকে বয়কট করে কিভাবে? আমি এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করত ন বলত ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘কিছু লোকজনের অনুরোধে’ ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ‘বিব্রত’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা

১ মাস ৯ দিন আগে কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন। লাইসেন্স পেতে তিনি যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা একজন বিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি জেলার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আমি নিজেই বিব্রত। আমি শিক্ষক মানুষ, ঠিকাদারির কিছুই বুঝি না। গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় কিছু লোকজন আমাকে ধরল, এলজিইডিতে অনেক কাজটাজ আসতেছে, আপনার একটা লাইসেন্স থাকলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। এলাকার কিছু মানুষ আপনার লাইসেন্সে কাজ এনে করতে পারবে। এতে কিছু মানুষের কাজের ব্যবস্থাও হবে। আসলে বিষয়টি আমার ছেলে (উপদেষ্টা) কিছুই জানেও না। পরে এলাকার মানুষের বারবার অনুরোধের কারণে গত বছরের নভেম্বরে আমি ওই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এক মাস আগে লাইসেন্স পেয়েছি, কিন্তু এটা দিয়ে এক টাকার কাজও করিনি।’

বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা আর কেলেঙ্কারি হবে, বিষয়টি ভাবনাতেও ছিল না উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভুলের জন্য ছেলেকে (উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ) বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, কখনো চিন্তাও করিনি। এ ঘটনায় আমি নিজেই লজ্জিত।’

সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স পেয়েছেন উল্লেখ করে মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘যখন সবাই আমাকে ধরল একটা লাইসেন্স করার জন্য, তখন চিন্তা করলাম, দেশের নাগরিক হিসেবে একজন মানুষের অধিকার আছে ঠিকাদারি লাইসেন্স করার। আমিও সেই জায়গা থেকেই সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করেছি এবং নভেম্বরে আবেদনের পর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত ১৬ মার্চ লাইসেন্স পেয়েছি। আমি উপদেষ্টার বাবা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই আবেদন করেছি। যদি জানতাম বিষয়টি নিয়ে এত কেলেঙ্কারি হবে আর উপদেষ্টাকে বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, তাহলে কখনোই আমি এমন কাজ করতাম না। এ ছাড়া আমি আজ পর্যন্ত কোথাও ঠিকাদারি কাজের বিষয়ে জেলা ও উপজেলার কোথাও কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। কেউ বলতে পারবে না উপদেষ্টার বাবা হিসেবে এক টাকার ঠিকাদারি কাজ করেছি।’

আরও পড়ুনবাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স ছিল, জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ৫ ঘণ্টা আগে

এলজিইডি কুমিল্লার সূত্রে জানা গেছে, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর কুমিল্লার জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সের আবেদন করেন বিল্লাল হোসেন। গত ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকার ব্যাংক চালান দেওয়ার পর ওই দিন এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হিসেবে মো. বিল্লাল হোসেনের ওই লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন। তাঁর এই ঠিকাদারি লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়।

এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার রাতে মো. বিল্লাল হোসেন তাঁর ঠিকাদারি লাইসেন্সটি বাতিলের জন্য আবেদন করেন। তবে রাতে তিনি আবেদনটি হাতে পাননি। আজ সকালে আবেদনটি হাতে পেয়ে অফিসে গিয়ে প্রথমেই বিধি মোতাবেক সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া লাইসেন্সটি বাতিল করে কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এর আগে বিল্লাল হোসেন সব বিধি মেনেই ঠিকাদারি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। গত ১৬ মার্চ মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। তবে এখনো এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিল্লাল হোসেন অন্য কোনো নামেও ঠিকাদারি কাজ করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে আজ বিকেল পর্যন্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গতকাল রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চান আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে জানান যে তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। আর বিষয়টি তাঁকে জানান বলেও ওই গণমাধ্যমকর্মী তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন। এরপরই আজ আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়ে আসিফ মাহমুদ পোস্টে লেখেন, ‘আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তাঁর কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারেন। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।

বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সে জন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ
  • লেখক যখন শল্যচিকিৎসক
  • ফেরার ইঙ্গিত দিলেন শুভ
  • অন্য অভিবাসীদের আটকে দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান ট্রাম্প
  • আল্লাহর জন্য কাঁদার উপায়
  • মোহ কাঠের নৌকা: বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি
  • বৈচিত্র্যময় প্রতিভার মরিস ল্যাংলো ওয়েস্ট
  • জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
  • রিয়ালের আগ্রহ নিয়ে মুখ খুললেন অ্যালিস্টার 
  • ‘কিছু লোকজনের অনুরোধে’ ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ‘বিব্রত’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা