ভারতের বিএসএফ কর্তৃক কুড়িগ্রাম সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানী হত্যাসহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সকল বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করার দাবিতে লং মার্চ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কলেজমোড় থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ গ্রামে ফেলানীর বাড়ি পর্যন্ত এ লং মার্চ কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক ড.

আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক জাহিদ আহসান, সমন্বয়ক রকিব মাসুদসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়াও লং মার্চে ফেলানীর বাবা নুর ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

এদিন সকাল ১১টার দিকে জেরা শহরের কলেজ মোড়ে ‘মার্চ ফর ফেলানী’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কুড়িগ্রাম জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয় সারজিস আলম বলেছেন, “আর যদি আমার কোনো ভাই বা আমার কোনো বোন আমাদের ওই সীমান্তে আমাদের তারকাঁটায় লাশ ঝুলে থাকে তাহলে কাঁটাতারকে লক্ষ্য করে আজকের মার্চ ফর ফেলানীর মত লং মার্চ করা হবে। আর যদি পরবর্তীতে আমাদের সেই মার্চ তাঁরকাটাকে উদ্দেশ্য করে হয়, তাহলে আমাদের লক্ষ্য তারকাঁটাকে ভেদ করে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর যাবে।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশকে একটি কথাই বলতে চাই, এই যে সীমান্ত হত্যা, তারকাঁটা দেওয়ার নামে জোর করে বাধা দেওয়ার জন্য যে প্রয়াস তা রুখে দেওয়ার জন্য নতুন করে যে অভ্যুথান হয়েছে এই অভ্যুথানের স্ফুলিঙ্গ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানী থেকে বলতে চাই আমরা বাংলাদেশের সীমান্তে কোনো লাশ দেখতে চাই না। বাংলাদেশের যত নাগরিককে সীমান্তে লাশ করা হয়েছে তার বিচার আর্ন্তজাতিক আদালতে করতে হবে। ছাত্রজনতা আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ দিয়েছে, সেই ছাত্র জনতা নতজানু পররাষ্ট্র নীতি মেনে নিবে না। আগামীতে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যদি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য কোন দেশের দালাল হন তাহলে তাদের পরিণতি খুনি হাসিনার মতো হবে।”

লং মার্চের শুরুতে ফেলানী হত্যাসহ সীমান্তে সকল নাগরিক হত্যার বিচার, সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্র বন্ধ, শহীদ ফেলানীর নামে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের নামকরণ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাতিল করে সাম্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও কুড়িগ্রামের চরের জীবনজীবিকা উন্নয়নে নদী সংস্কারের পাঁচ দফা দাবি জানান সারজিস আলম।

লং মার্চটি সকাল ১১ টার পরে কুড়িগ্রামের জেলা শহরের কলেজ মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লং মার্চটি জেলা শহরের রিভারভিউ মোড়ে এসে ভ্যানে করে ফেলানীর বাড়ির দিকে রওনা দেয়। জেলা শহর থেকে ফেলানীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বিভিন্ন হাট বাজারে লং মার্চ থামিয়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার করতে বক্তব্য রাখেন সারজিস আলম। 

পরে বিকেল ৪টার দিকে ফেলানীর বাড়ির পাশে রামখানা ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকায় জনসভায় বক্তব্য দেন সারজিস আলমসহ ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা।

নাগেশ্বরী উপজেলার দীঘির পাড় মাঠের জনসভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশে যত পিতা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য ফেলানীর পিতা। ভারতের বিএসএফ যখন অন্যায়ভাবে তার মেয়ের লাশ ঝুলিয়ে রাখে, শেখ হাসিনা কিছুই করতে পারেনি। শেখ হাসিনা কতটা জিম্মি, কতটা পুতুল ছিল যে ভারত সরকার তাকে পরিচালিত করত। এতটাই পুতুল যে, একটা খুনের পর্যন্ত বিচার করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা খাটিয়েছে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর। কিন্তু সেই শেখ হাসিনা কাঁটাতারের ওপারে ভারতে মোদির পায়ের তলায় গিয়ে বসে থাকতো। খুনি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারের উপরে হত্যা করেছে।

খুনি হাসিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। খুনি হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের টুল বানিয়েছে।” 

তিনি আরও বলেন, “বিজিবিকে বিএসএফের অনুগত বানিয়ে রেখেছে। সবগুলো অফিসকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রত্যেক অফিসে টাকা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনার ভারত প্রীতির কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি।”

জনসভায় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৪ বছরেও আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার পাইনি। আর্ন্তজাতিক আদালতে আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার দাবি করছি। আমার চোখের সামনে আমার মেয়েকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি।”

এদিন সন্ধ্যার আগে জনসভা শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

ঢাকা/বাদশাহ/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ক ষমত শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ ব্যাপারে বিজিবির দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিহত যুবক হলেন কসবার পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে আল আমীন (৩২)।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কসবার পুটিয়া সীমান্তের ওপারে কয়েকজন যুবককে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছুঁড়ে বিএসএফ। এতে আল আমীন নামে এক যুবক আহত হয়। পরে বিএসএফ সদস্যরা তাকে ভারতের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শুক্রবার রাত ৯টায় মারা যান তিনি। মরদেহ বিএসএফ ক্যাম্পে রয়েছে।

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদির ও কসবার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তারা আল আমীন নামের ওই যুবকের বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাটি স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে বিজিবির সুলতানপুর ৬০ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে আটক ২ বাংলাদেশি নারীকে হস্তান্তর করল বিএসএফ
  • বাধার পরও ৬০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
  • নিহত বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ
  • দহগ্রাম সীমান্তে ফের কাঁটাতারের বেড়া দিল বিএসএফ
  • ভারতীয়রা সীমান্ত আইন না মানলে আরও কঠোর হবে বিজিবি: ডিজি 
  • বাংলাদেশিকে গুলি করে নিয়ে যায় বিএসএফ, হাসপাতালে মৃত্যু
  • কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত