যৌথ বাহিনীর ২০ ঘণ্টার অভিযানে অপহৃত ৭ কৃষক উদ্ধার
Published: 16th, January 2025 GMT
অবশেষে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের বমুখাল থেকে অপহৃত ৭ তামাক শ্রমিককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন যৌথবাহিনী। অপহরণের পর টানা ২০ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বুধবার দিনগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি মেরাইত্তা লেবুখাল থেকে তাদেরকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃতরা হলেন- খামারের মালিক মো.
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টার দিকে গজালিয়া ইউনিয়নের বমুখাল নামক স্থান থেকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তিনটি খামার বাড়িতে হানা দিয়ে ৭ জন তামাক চাষে নিয়োজিত শ্রমিককে তুলে নিয়ে যান। পরে খামার মালিক মো. রফিকের মোবাইল ফোনে অপহৃতদের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণও দাবি করা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আবু সৈয়দ ও পুলিশ পরিদর্শক আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে যৌথ একটি টিম উদ্ধার অভিযানে নামেন।
অভিযানে টিকতে না পেরে একপর্যায়ে বুধবার দিনগত রাত ৮টার দিকে সরই ইউনিয়নের মেরাইত্তা লেবুখাল এলাকায় অপহৃতদের ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
এ বিষয়ে অপহৃত তামাক খামার মালিক মো. আল আমিন জানান, সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা প্রথমে ৯ জনকে তুলে নিয়ে গেলেও কিছুদূর গিয়ে দুজনকে মারধর করে ছেড়ে দেন। বাকী ৭ জনকে চোখ বেঁধে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খামার মালিক রফিকের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তারা জেএসএসের সদস্য বলে দাবি করেন বলেও জানান অপহৃতরা।
অপহৃত ৭ তামাক শ্রমিককে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসীরা টিকতে না পেরে অপহৃতদের ফেলে পালিয়ে যায়। উদ্ধার তামাক কৃষকদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুঠোফোন বেজে চললেও কোনো জবাব আসছে না: ভবনের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বাঁকানো তার ও ধাতুর ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যস্ত শত শত উদ্ধারকর্মী। এসব জঞ্জালের সামান্য দূরে অপেক্ষা করছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের কারও বোন, কারও ভাই, কারও মা, কারও স্বামী বা কারও সহকর্মী মুহূর্তে ধসে পড়া নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবনের নিচে চাপা পড়েছেন। এতে শতাধিক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল মান্দালয়ের কাছে গত শুক্রবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১১ মিনিটের মাথায় সেখানে ৬ দশমিক ৪ তীব্রতার আরেকটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল অগভীর হওয়ায় কম্পনের তীব্রতা বেশি ছিল।
মিয়ানমারের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। এ ছাড়া বাংলাদেশ, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও ভারতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়াল২১ ঘণ্টা আগেগতকাল শনিবার মিয়ানমারের জান্তা সরকার জানায়, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৬৪৪ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪০৮ জনের বেশি। তবে পরিসংখ্যানের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ইউএসজিএস পূর্বাভাস করেছে, মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিণাম দেশটির বার্ষিক আর্থিক উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গতকাল ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, ‘আমাদের শহরে অন্তত ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।’
‘আমি টানা কল করে যাচ্ছি’ব্যাংককের নির্মাণাধীন ৩৩ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের এলাকাটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানেই বিখ্যাত সাপ্তাহিক চাটুচক বাজার অবস্থিত। প্রতিবছর এখানে লাখ লাখ বিদেশি পর্যটক আসেন।
গতকাল শনিবার সকালে চাটুচক বাজার এলাকায় নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে অপেক্ষা করছিলেন অনেকে। তাঁদের একজন জুনপেন কাউনোই। তাঁর মা ও বোন ধসে পড়া আকাশচুম্বী ভবনটিতে রঙের কাজ করতেন।
কাউনোই সিএনএনকে বলেন, ‘আমি টানা কল করে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। কল করে প্রতিবার আমি কেবল টো...টো...আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।’
কাউনোই বলছিলেন, ‘মনে হচ্ছে, আমার পেটে দলার মতো কিছু একটি হয়েছে। আমার খিদে চলে গেছে। গতকাল থেকে আমার মা ও বোন আটকা পড়ে আছেন, আমি তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁদের কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কাজে যাওয়ার আগে শুক্রবার সকালে বোনের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল কাউনোইর। তখন তিনি তাঁর কাছে ‘দুপুরে কী খাবে, তা জানতে চেয়েছিলেন’।
ব্যাংককের এ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে নগরের নানা সমস্যা নতুন করে সামনে এসেছে। এসব সমস্যার মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সবচেয়ে বড়। ব্যাংককের নির্মাণশ্রমিকদের অধিকাংশই আসেন থাইল্যান্ডের গরিব অঞ্চলগুলো থেকে। বিশেষ করে কম ধনী উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সেখানে অনেক শ্রমিক আসেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ লাওস, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকেও অনেক শ্রমিক ব্যাংককে কাজ করতে আসেন।
আরও পড়ুনশক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল আট দেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি২৮ মার্চ ২০২৫ধসে পড়া নির্মাণাধীন ৩৩তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের পাশে উদ্ধারকর্মীরা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে, ২৮ মার্চ ২০২৫