জাতীয় দলে তিন সংস্করণে এখন নিয়মিত ক্রিকেটার নাহিদ রানা। সাদা বলে দুই ফরম্যাটেই দলের অপরিহার্য অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। লাল বলেও তাকে একাদশে রেখেই পরিকল্পনা সাজান টিম ম্যানেজমেন্ট। তিন সংস্করণে পেসারদের অংশগ্রহণ করা মানে বাড়তি ঝুঁকি। অনুশীলন, ম্যাচ, সফর; তিনে মিলে নিজেদের যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে যায় পেসারদের জন্য। তাদের যত্ন নেওয়া অতি জরুরি। কারণ, ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি।

অতীতে বাংলাদেশের পেসারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করা হয়েছে কম। যার ‘শিকার’ বলা যেতে পারে মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের দ্রুততম পেসার টানা খেলায় ইনজুরিতে জর্জরিত হয়েছেন। সময় যত আধুনিক হয়েছে, ক্রিকেট যত এগিয়েছে তত সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পেরেছে পেসারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট। মাশরাফির থেকে দ্রুততম বোলিংয়ের ব্যাটন এখন নাহিদ রানার হাতে। এখন পর্যন্ত তার বোলিং গতিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। বলা যেতে পারে নাহিদ ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস।’

প্রশ্ন উঠছে, এই ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে’ কতটা যত্ন করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় দলের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও নাহিদ নিয়মিত মুখ। এখন রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলছেন বিপিএল। যেখানে প্রথম ৯ দিনে ৫ ম্যাচ খেলেছেন। ৩দিন করেছেন অনুশীলন। টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি ও অনুশীলনে ঘাম ঝরানো…নাহিদ কিভাবে নিজেকে যত্ন করছেন সেই প্রশ্নও তোলা শুরু হয়েছে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহীর মালিকানা বাতিলের প্রস্তাব!

আসিফের নির্দেশনায় নারী দলের সফর থেকে বাদ সরকারের দুই প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে হাজির হয়েছিলেন ডানহাতি পেসার। তার মুখ থেকেই শুনুন বাকিটা, ‘‘আসলে একজন ক্রিকেটারের ওয়ার্কলোডের বিষয়টা সে নিজেই জানবে। সে নিজের শরীর নিজে ভালো বুঝবে যে কখন ভালো আছে। আমার শরীর এখন আমি ভালো অনুভব করছি। রংপুর রাইডার্স টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে সহায়তা করছে। বিসিবি থেকেও খোঁজখবর নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালো।’’

শুধু শারীরিক নয় মানসিক বিশ্রামের কথাও বলছেন তিনি, ‘‘মানসিকভাবে.

.. অবশ্যই বিশ্রামেরও প্রয়োজন আছে। টানা খেললে পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।’’

বিপিএলে তার দল রংপুর রাইডার্স তাকে পর্যাপ্ত যত্ন নিচ্ছেন বলে দাবি তার, ‘‘শরীর ভালো অনুভব করছি। রংপুর রাইডার্সও আমাকে ভালো সহায়তা করছে। তারা বলেছে, তোমার যখন বিশ্রাম লাগবে আমাদের বলবে। তাদের সঙ্গে আমার কথা চলছে। যখন বিশ্রাম লাগবে, আমি তাদের বলব।’’

তবে তার কথায় আর কাজে খুব যে মিল আছে তা মনে হচ্ছে না। কেননা বিশ্রাম কিংবা নিজের যত্নে পর্যাপ্ত সময় পেলে তার বোলিংয়ে প্রভাব পড়ত না। প্রথম কয়েক ম্যাচের পরই নাহিদের বোলিং গতি ধারাবাহিকতভাবে কমতে শুরু করেছে। বোলিংয়ে ততটা জোর দিচ্ছেন না। বেশিরভাগ ডেলিভারি তিনি দিয়েছেন ১৩০ কিলোমিটারের আশেপাশে। যেখানে তার স্বাভাবিক গতি ১৪৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া চোখে-মুখে ও বোলিংয়ে ক্লান্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। ব্যাটসম্যানদের কড়া শাসনের শিকার হয়ে মুখ থেকে উধাও হয়ে যায় হাসিও। তবে এখন পর্যন্ত নিজের সেরাটা দিতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন ৭ ম্যাচে ৮.৪৬ ইকোনমিতে ৯ উইকেট পাওয়া নাহিদ, ‘‘যেই জিনিসটা চাচ্ছিলাম, ওই জিনিসটা হচ্ছে। রংপুর রাইডার্সকে আমি আমার সেরাটা দিতে পারছি। তাই ভালো লাগছে।’’

নিজেকে ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার কথা জানিয়ে নাহিদ যোগ করেন, ‘‘পেস বোলিংয়ে চোট আসবেই। ক্রিকেট খেলতে গেলে ইনজুরি হবেই। এই জিনিসটা যত দূর সম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছি যে কোন কাজগুলো করলে ইনজুরি থেকে মুক্ত থাকা যায়, ওই জিনিসগুলোই করছি।’’ 

সহজাত গতি নিয়ে আসা বাংলাদেশের সম্পদ। পর্যাপ্ত যত্ন এবং ভালো পরিকল্পনায় তাকে সামলাতে না পারলে তার সেরাটা না পাওয়ার শঙ্কা থাকবে।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ইনজ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি–জামায়াতের বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর নির্বাচনী জোট করা ছাড়া পথ কী

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সব পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দমকা হওয়া উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের পালে হঠাৎ করে হাওয়া কমে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।

দ্বিদলীয় গণতন্ত্রে এক দল পলাতক হলে অন্য দল যে খোলা মাঠে গোল দিতে নির্বাচন চাইবে, সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রাণভোমরা। তাই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করাতে গণতন্ত্রকামী অন্য দলগুলোও তাদের নির্বাচনী হিসাব মেলাতে বাধ্য হওয়ার কথা। এমনকি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করা দলও তাদের বৈধতা প্রমাণ করতে নির্বাচনের রাজনীতির দিকেই ঝুঁকবে।

কিন্তু একদলীয় নির্বাচনী ভাগ্যচক্রে অন্য দলগুলো কী পরিণতি আশা করতে পারে?

ভোটের হিসাবে বিএনপির পর দ্বিতীয় শক্তিশালী দল জামায়াত কোনো নির্বাচনেই পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। তাই তাদের পক্ষে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেতেই হিমশিম খাওয়ার কথা। দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির দলগুলো এক নেতা, এক দল; তাই তারা সম্মিলিতভাবে ১০টির বেশি আসনে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাদের আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী দেয়? তাহলে বোধ হয় তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে তারা ১০ ভাগ ভোট পেতে পারে। জিতে আসা তো অনেক দূর।

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।

ছাত্রদের নতুন দলে হাতে গোনা কয়েকজনের জাতীয় পরিচিতি থাকলেও এলাকার রাজনীতি তাঁরা করেননি। তাই রাষ্ট্রীয় সমর্থনবিহীন নির্বাচনী পাশা খেলায় তাঁরা নিজ নিজ আসনে কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে বিএনপি বুঝতে পারছে যে একদলীয় নির্বাচনে ২৯০ সিট জিতে আসা তাদের জন্য বিপজ্জনক। বিরোধী দল না রাখার শেখ সাহেবের ’৭৩ সালের ভুল তাদের স্মরণে আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য তারা তাদের মিত্রদের কাছে ১০০ সিট ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই সুযোগে মিত্র দলগুলো এখনই সংসদের সবুজ চেয়ারে বসার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে ফেলেছে।

এই স্বপ্নের যাত্রায় গণতন্ত্রের পক্ষের যে দলগুলো আওয়ামী জুলুমের সময় রাস্তায় ছিল, তারাও কি বুঝতে পারছে যে একবার বিএনপির আশীর্বাদের চাদরে ঢুকে গেলে তাদের ইনু-মেনন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না? আর ইনু-মেননরা যেহেতু রাস্তার রাজনীতি বিসর্জন দিয়েই যেহেতু সংসদে বসার দাসখত দেন, সামনের বিএনপির সময়েও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এই কায়দায় রাস্তায় নামতে না পারার ঝুঁকিতে পরতে পারে।

আর রাস্তা ফাঁকা থাকলে মানুষ তো আর বসে থাকবে না। তখন হয়তো তারা তাদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগকে ডেকে আনবে!

এমন একই পটভূমিতে ইতিহাস যাতে গুম-খুনের আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বাঁক নিতে বাধ্য না হয়, সে জন্য বিএনপির বাইরে অভ্যুত্থানের পক্ষের নতুন-পুরোনো সব দল মিলে একটা নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো সমাধান নেই।

বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা বলে যে বিএনপি আসলে আওয়ামী লীগেরই অন্য পিঠ। তাই মানুষের পক্ষের নির্বাচনী জোট সামনে এলে আগামী নির্বাচনে চমক দেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেই নির্বাচনে যদি তারা পঞ্চাশের কম আসনও পায়, তারাই হবে প্রধান বিরোধী জোট। সেই সংসদে বিএনপি জোর জুলুম করতে চাইলে হয়ে সংসদে তারা জোরালো কণ্ঠে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে।

বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে এই জোটই সংসদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায়ও আওয়াজ তুলতে পারবে। সেটা একদিকে আওয়ামীতন্ত্রে ফেরার ঝুঁকি কমাবে, আবার অন্যদিকে গণতন্ত্রের আওয়াজ জারি রাখলে পাঁচ বছর পরের যে সংসদ, সেখানে ক্ষমতা নির্ধারণ তাদের হাতেই থাকবে।

সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ