বাছুর বিতরণের ফটোসেশন, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অপচেষ্টার অভিযোগ
Published: 16th, January 2025 GMT
প্রকল্পের নাম ‘হতদরিদ্রদের মাঝে উন্নত জাতের গাভীর বাছুর বিতরণ’। বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা। সুফলভোগী ১০ জন নারী। তবে বাছুর দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে প্রশিক্ষণের নামে বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তুলে বিদায় করা হয়েছে এসব নারীদের। কাউকে গরুর বাছুর দেওয়া হয়নি। খামার থেকে দশটি বাছুর এনে ছবি তোলা শেষে আবার খামারেই ফেরত পাঠানো হয়েছে বাছুরগুলো।
গরু না পাওয়ায় হতাশ ওই সকল গরীব দুঃস্থ নারীরা। ফটোসেশনের দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনও তাদের গাভীর বাছুর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রকল্পের টাকা পুরোটাই আত্মসাতের অপচেষ্টা করা হয়েছে।
এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার ‘মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা’ নামের এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর বিরুদ্ধে। বিষয়টি এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে রটে গেছে।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ)-এর আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এনজিও’র উদ্যোগে দশজন দুঃস্থ মহিলাকে গাভীর বাছুর দেওয়ার কথা বলে রেলবাজারে আনা হয়। নিজের পরিচিত একটি খামার থেকে দশটি গাভীর বাছুর গাড়িতে করে নিয়ে আসেন এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু।
এরপর এলাকার কিছু ব্যক্তিকে তার বাসভবন সংলগ্ন এনজিও’র সামনে ডেকে এনে দশজন মহিলাকে দাঁড় করিয়ে গরু দেওয়ার ফটোসেশন করেন।
পরে ঐ সকল দুঃস্থ মহিলাদের গাভীর বাছুর না দিয়ে ডিম-খিচুড়ি খাইয়ে বিদায় করা হয়। এরপর বাছুরগুলো আবার একই গাড়িতে করে একই খামারে ফেরত দিয়ে আসা হয়। সেখানে উপস্থিত অনেকেই গরু প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক বাবলু জানান, পরে দেওয়া হবে।
কুবিরদিয়ার মাঠপাড়া গ্রামের আলম হোসেনের মেয়ে খুশি খাতুন স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর বাবার বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের বাড়িতে ও মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান।
তিনি বলেন, “ট্রেনিংয়ের কথা বলে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। গাভীর বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলে। কিন্তু আমাকে গাভীর দেয় নাই। বলছে এবার অন্য এলাকার লোকদের দেবো, পরেরবার তোমাকে দেবো। পরে ডিম-খিচুড়ি খাইয়ে বিদায় দিয়েছে। বাবলু কাকা ত্যাড়া মানুষ। বেশি কথা বললে আবার ধমক দেয়। তাই আর কিছু বলার সাহস পাইনি।”
খুশি আরো বলেন, “এর আগে একবার আমাকে একটা ছাগল দিয়েছিল বাবলু কাকা। তবে সেজন্য আমার কাছ থেকে নগদ ১৩০০ টাকা নিয়েছিল। এছাড়া পরবর্তীতে একটি গর্ভবতী ছাগলও নিয়েছিল।’’
অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালানো এক গৃহবধূ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের গাভী দেওয়ার কথা বলে ট্রেনিং ডেকে নেয়। তারপর ট্রেনিং শেষে আমাদের বাছুর হাতে দিয়ে ছবি তুলে বিদায় করেছে। বলছে, এখন না, পরে দেবো। এখন পর্যন্ত পাইনি। ট্রেনিংয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রামের দশজন মহিলা ছিলাম।’’
এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু
যে গাড়িতে গরুর বাছুরগুলো আনা নেওয়া করেছে সেই গাড়ি চালক শুভ দাস বলেন, ‘‘ওইদিন আমার গাড়ি নিয়ে মথুরাপুর এলাকার একটি গরুর খামার থেকে দশটা বাছুর নিয়ে রেলবাজার বাবলু সাহেবের বাসার সামনে নেয়। পরে অনুষ্ঠান শেষে ওখান থেকে ওই বাছুরগুলো আবার মথুরাপুরের একই খামারে নামিয়ে দিই। এর বেশি কিছু জানি না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, “আমাকে অতিথি করে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। তবে আমার অফিসের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি প্রত্যয়ন নেওয়ার জন্য রিপোর্ট অফিসে জমা দিয়েছেন কিনা সেটি দেখার পর বলতে পারব। তবে এরকম অভিযোগ থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে মোতাবেক প্রত্যয়ন দেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞা বলেন, “বিশেষ প্রকল্পের আওতায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওকে আমরা পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথম অবস্থায় তিন লাখ টাকা দিয়েছি। কার্যক্রম সন্তোষজনক রিপোর্ট পেলে তাকে বাকি দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট ইউএনও বা তাঁর প্রতিনিধিকে একিভূত করে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্টে ইউএনও'র প্রত্যয়ন লাগবে। ১৫/২০ দিনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এখনও তাঁর রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা বিষয়টি পর্যক্ষেণ করছি। রিপোর্ট আসার পর যাচাই বাছাই করে দেখবো, ঘাপলা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এনজিও মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলুর মুঠোফোনে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত একাধিক নাম্বার থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র এল ক র এনজ ও
এছাড়াও পড়ুন:
ঘর থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, ইউএনও অফিসের গাড়িচালকসহ গ্রেপ্তার ৪
নওগাঁর মান্দায় এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ইউএনও অফিসের গাড়িচালকসহ চার যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের গতকাল সোমবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা হলেন- উপজেলার ছোটবেলালদহ গ্রামের সোলাইমান আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম সোহাগ (২৯), বড়পই গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সুইট (২৯), বিজয়পুর প্রিন্সিপালের মোড় এলাকার মোজাহার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান মুন্না (২৯) ও বিজয়পুর মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে নাসির উদ্দিন (২৯)। তাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন মাস্টাররোলে ইউএনও অফিসের গাড়িচালক।
মামলার এহাজার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী পিকআপচালক। তারা ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ঈদ উপলক্ষে এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে তারা নানার বাড়ি যায়। কাজের জন্য রাতে পিকআপ ভ্যান নিয়ে তার স্বামী বাইরে যান। ফলে বাড়িতে একাই ছিলেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘গত রোববার রাত ৮টার দিকে আমার স্বামী পিকআপ ভ্যান নিয়ে কাজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে আমি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আসামি স্বাধীন বাসায় এসে আমার স্বামীকে ডাকাডাকি করে। স্বাধীন আমার স্বামীর পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সরল বিশ্বাসে আমি দরজা খুলি। সঙ্গে সঙ্গে ৬-৭ জন যুবক ঘরে ঢুকে মুখ চেপে ধরে। এর পর তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে চারজনকে আটক করে। তবে বাকিরা পালিয়ে যায়।’
মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনুসর রহমান বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২-৩ জনের নামে মামলা করেছেন। এ মামলায় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে সোমবার নওগাঁ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি আরও জানান, ‘শুনেছি, নাসির উদ্দিন ইউএনও অফিসের গাড়ি চালায়।’