ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দুই দিনব্যাপী ‘সংবাদ মাধ্যমের পাতায় পাতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মাঠে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম ও সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজের উদ্যোগে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাবি প্রক্টর ড.

সাইফুদ্দিন আহমেদ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রদর্শনীতে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে পত্রিকাগুলো যে ভূমিকা রেখেছে, মূলত সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকার ফ্রন্ট পেজ, ছবি ইত্যাদির কাটিং এতে প্রদর্শিত হয়েছে। ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় সংগঠিত জুলাই বিপ্লবের স্থিরচিত্রও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীতে প্রথম আলো, মানবজমিন, নিউ নেশন, যুগান্তর, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, ইত্তেফাক, সমকাল, ইনকিলাব, ডেইলি স্টারসহ একাধিক মুলধারার সংবাদপত্রে প্রকাশিত জুলাই বিপ্লবের সময়ের উল্লেখযোগ্য সব খবর স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের প্রচার সম্পাদক ও প্রদর্শনীর আহ্বায়ক আবিদ হাসান রাফি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংবাদ মাধ্যমগুলোর গুরুত্ব নিয়ে পাবলিক পরিসরে আলাপ হচ্ছে না। যখন ইন্টারনেট শাটডাউন ছিল, তখন পত্রিকা থেকেই আমরা আন্দোলনের সার্বিক বিষয়ে জানতে পারতাম। পত্রিকাগুলো এ গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পত্রিকাগুলোর এ অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই মূলত আমাদের এ আয়োজন।”

বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইমরান উদ্দীন বলেন, “জুলাই আন্দোলনে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত আন্দোলনের স্মৃতিগুলো আমরা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছি। জুলাই অভ্যুত্থানের দুঃসহ দিনগুলোকে মনে মনে জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই মূলত আমাদের এ আয়োজন। বেশ কয়েকজন আমাদের এগুলো প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।“

উদ্বোধনের পর প্রক্টর ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “অনেকে অভ্যুত্থান বলে, আমি বলি বিপ্লব। এখানে শুধু ক্ষমতা নয়, একটা ধারারও পরিবর্তন হয়েছে। এটাকে আমি নতুন বাংলার রেনেসা বলি। আমাদের প্রজন্ম এটার সঙ্গে যত খাপ খাওয়াতে পারবে, ততই বিপ্লব সুসংহত হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের প্রজন্ম ও তরুণ প্রজন্মের মাঝে একটা গ্যাপ আছে। আমরা তরুণদের ভাবনাকে বুঝতে পারছি না। এ ধরনের আয়োজন যত বেশি হবে, তত আমাদের জন্য তরুণদের বোঝা সহজ হবে। আর এ আয়োজন ডকুমেন্টশনের কাজ করে থাকে এবং একটা ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখে। এ ধরনের আয়োজন ব্যতীত বিপ্লব বেহাত হয়ে যাবে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রদর শ

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান অগ্রহণযোগ্য

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার ফসল, সন্দেহ নেই। আন্দোলনটি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহের আগে নেহাতই সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা অবসানের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল, যদিও ১৪ জুলাই দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বক্তব্যটি আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে কয়েকজন সমন্বয়ককে ডিবি হারুনের অফিসে ধরে নিয়ে গিয়ে ‘মিডিয়া-ডিনার’ খাওয়ানোর দৃশ্য এবং সমন্বয়কদের একজনকে দিয়ে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় আন্দোলন সমাপ্ত করার ঘোষণা দিতে বাধ্য করা জনগণের ক্রোধকে দ্রুত ঘনীভূত করে। অন্যদিকে আন্দোলন মোকাবিলার জন্য পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মাস্তান বাহিনীকে লেলিয়ে দেন শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের, যার ফলে সারাদেশে এক দিনেই শতাধিক আন্দোলনকারীর প্রাণহানি ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে কারফিউ জারি করে তা বলবৎ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু কারফিউ প্রায় ১০ দিন চলার পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৩ আগস্ট দুপুরে সামরিক বাহিনীর ঢাকায় অবস্থিত সব অফিসারের সভা (দরবার) ডাকেন। সভায় প্রধানত জুনিয়র অফিসাররা মতামত ঘোষণা করেন– সেনাবাহিনী জনগণের বিপক্ষে গুলি চালাবে না। সেনাপ্রধান তাদের মত মেনে নেন। সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পর ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিশাল সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। তাদের ঘোষিত ৬ আগস্টের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে ৪ আগস্ট আবারও ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশের যৌথ বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন শেখ হাসিনা। ওই দিনও শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিন দেশের প্রায় ৪০০ থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। উপরন্তু, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় আক্রমণ চালিয়ে ১৩ জন ও নরসিংদীতে ৬ জন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সাহস হারিয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে থানা থেকে পালিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ বুঝে যায়, শেখ হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

এ প্রেক্ষাপট তুলে ধরার কারণ এটা বলা, গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মানুষের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, শেখ হাসিনাকে উৎখাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কারা রয়েছে– সেটা তাদের কাছে বিবেচ্য ছিল না। শেখ হাসিনার স্থানে কে ক্ষমতায় আসবে– সেটাও তাদের ভাবনায় ছিল না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের সাড়ে পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর জনগণের সিংহভাগ বুঝতে পারছে– বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবশালী সমন্বয়কদের বড় অংশ একটি বিশেষ মতের। আন্দোলনের সময় তারা তাদের পরিচয় সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাদের অনেকেই ছদ্মবেশে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক পরিচয় পর্যন্ত ধারণ করেছিলেন। এখন শীর্ষ সমন্বয়করাই বলে বেড়াচ্ছেন, আন্দোলনের ভ্যানগার্ড ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির, যদিও লাখ লাখ জনতার মিছিল সংঘটিত করার পেছনে ছাত্রশিবিরের কোনো দলীয় তৎপরতার চিহ্নই ছিল না। 

এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে– সরকারে অন্তর্ভুক্ত ছাত্রনেতারাসহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সমন্বয়ক, যারা বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে ইতোমধ্যে জনপরিসরে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন; তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিবিরের লোক। এই ব্যাপারটি এখন জাতির সামনে একটি মহাবিপদ হিসেবে হাজির হয়েছে। কারণ তারা জাতির প্রধান ঐতিহাসিক অর্জন ও আদর্শ ‘মুক্তিযুদ্ধ’কে মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি সিংহভাগ সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৭১ সালে কারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তা কারও অজানা নয়। তারা গণহত্যাকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে ‘আলবদর’ ও ‘আলশামস’ গঠন করেছিল। এই আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ক্যাডাররা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঘাতকদের সশস্ত্র সহায়তাকারী, গোয়েন্দা বাহিনী ও পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও অত্যন্ত নৃশংস ঘাতকের ভূমিকা পালন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল রাও ফরমান আলীর নীলনকশা অনুসারে এই আলবদর বাহিনীর ক্যাডাররাই দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেছিল। 

মুক্তিযুদ্ধ নিছক একটি গণঅভ্যুত্থান ছিল না। ছিল এক জনযুদ্ধ, যেখানে ধনী-গরিব-মধ্যবিত্ত সব অংশের প্রায় সব সদস্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। এ কথা সত্য, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে দুই বা আড়াই লাখ মানুষ। কিন্তু ভারতের মাটিতে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরের এক কোটিরও বেশি মানুষ বলতে গেলে সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। দেশের ভেতরে কত লাখ পরিবার যে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেছে, তার কোনো হিসাব নেই। সর্বোপরি এ যুদ্ধের প্রস্তুতি চলেছে পাকিস্তানি শাসনের প্রায় ২৩ বছর ধরে। ফলে এর স্মৃতি, আবেগ ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলবে।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি যদি মনে করে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সমন্বয়কদের মদদ পেলেই তারা জনগণকে ধোঁকা দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা স্বীয় কবজায় রাখতে পারবে– তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরও বলতে চাই, তাদের এই বিশেষ মহলকে তোষণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য ও অবস্থান দেশের সিংহভাগ জনগণ মোটেও পছন্দ করছে না।
অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করেছে, সেগুলোর প্রতিবেদনে যদি মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার কিংবা খাটো করার কোনো প্রয়াস দৃশ্যমান হয়, তাহলে তাদেরও জনরোষ মোকাবিলা করতে হবে। সম্প্রতি ছাত্রদের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বেশ হইচই হলো। বলা হচ্ছে, সব রাজনৈতিক দলের মত নিয়ে এই ঘোষণাপত্র সরকার দেবে। এই ঘোষণাপত্র আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, আমরা জানি না। তবে এতে যদি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন সংবিধানকে ‘ছুড়ে ফেলা’র মতো কোনো কোনো সমন্বয়কের দম্ভোক্তির প্রতিফলন ঘটে, তাহলে জনগণ এর উদ্যোক্তাদের শুধু রুখে দাঁড়াবে না, ছুড়েও ফেলতে পারে– আগেভাগেই এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করছি।

অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম: একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ; সাবেক সভাপতি
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি                                                             

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রলীগের ‘ভয়ংকররূপে’ ফেরার বার্তা কী বার্তা দেয়?
  • লাল, কালো, সাদার মন্ত্রে এবারের অমর একুশে বইমেলা
  • শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে অনশনে বৈষম্যবিরোধীরা
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সবুজের লাশ উত্তোলন 
  • গণমাধ্যম এখন নজিরবিহীন স্বাধীনতা ভোগ করছে: প্রধান উপদেষ্টা
  • গণমাধ্যম নজিরবিহীন স্বাধীনতা ভোগ করছে: প্রধান উপদেষ্টা
  • কোটি টাকা সহায়তা দাবি শহীদ পরিবারের
  • বৈষম্যবিরোধীদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান অগ্রহণযোগ্য
  • শাবিপ্রবিতে গণঅভ্যুত্থানের শহীদের স্মরণে দোয়া