মুখে এক চিলতে হাসি। কখনও রাগী কিংবা অভিমানী চরিত্রে। কখনও ধরা দেন প্রান্তিক মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে। নানা চরিত্রে তিনি বদলে যান ক্যামেরার সামনে। পর্দায় ভেসে ওঠা তাঁর চরিত্রই যেন বাস্তব। এভাবে অভিনয় দিয়ে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন ছোটপর্দা ও ওটিটির উজ্জ্বল তারকা। সিনেমায় দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুনশিয়ানা। বলছি, অভিনেত্রী ও মডেল তাসনিয়া ফারিণের কথা।
সৌন্দর্য, মেধা, পরিশ্রমকে এ অভিনেত্রী বেঁধেছেন বিনি সুতোয়। বিদায়ী বছরে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন তিনি। উপহার দিয়েছেন ভালো কিছু কাজ। হাজির হয়েছেন নতুন পরিচয়ে। চলতি বছরেও রয়েছে কিছু প্রত্যাশা।
নতুন বছর, নতুন চমক
অতনু ঘোষের ‘আরও এক পৃথিবী’ সিনেমায় পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে ফারিণের। এতে সুঅভিনয়ের জন্য পুরস্কারও এসেছিল তাঁর ঝুলিতে। ওই সিনেমা দিয়ে সেখানকার ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পরিচিতি বাড়ে; নতুন কাজের প্রস্তাবও আসে। গত বছর অভিজিৎ সেনের পরিচালনায় ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমায় পশ্চিবমঙ্গের তারকা অভিনেতা দেবের সঙ্গে অভিনয়ের কথা ছিল। ভিসা জটিলতায় কলকাতা যাওয়া হয়নি ফারিণের। এ কারণে তাঁকে বাতিল করতে হয়েছে সিনেমার কাজ। একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, সিনেমাটি হবে। প্রতীক্ষা নয়, ‘প্রজাপতি টু’ নামে। আগামী মার্চে লন্ডনে হবে এর দৃশ্য ধারণ। এতে দেবের সঙ্গে ফারিণ অভিনয় করছেন ওই সিনেমায়। সম্প্রতি এমন গুঞ্জন উঠেছে ফারিণকে নিয়ে।
এ প্রসঙ্গ উঠতেই ফারিণ বলেন, ‘প্রজাপতি টু নিয়ে এখন চূড়ান্ত কিছু হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত শুটিং ফ্লোরে কিছু না যায়, তা নিয়ে কথা বলা মুশকিল। নানা জটিলতা থাকে। ফলে কোনো কিছু কনফার্ম হিসেবে ধরে নিতে চাচ্ছি না। যখন শুটিং হবে তখন সবাই জানতে পারবেন।’
ভালোবাসা দিবসের আয়োজনে
ভালোবাসা দিবসে ফারিণের কাজ নিয়ে দর্শকের থাকে অন্যরকম আগ্রহ। কাজল আরেফিন অমির পরিচালনায় ‘হাউ সুইট’ নামে রোমান্টিক-কমেডি ওয়েব সিনেমায় তাঁকে দেখা যাবে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এটি মুক্তি পাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে। সিনেমাটি নিয়ে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করে ফারিণ বলেন, ‘ফান কনটেন্টটি দেখে দর্শক খুব মজা পাবেন। কমার্শিয়াল ধাঁচে শুট করা হয়েছে। অসাধারণ গল্প নির্মাণে ছিল যত্নের ছাপ। ইউনিটের প্রত্যেকে খুব মজা করে শুটিং করেছি। সব মিলিয়ে উপভোগ্য কিছু হবে– এ প্রত্যাশা করাই যায়।’
সহকর্মীর প্রশংসায়.
..
সহকর্মীরা ভালো কাজ করলে প্রশংসায় ভাসান ফারিণ। তারকা অভিনেত্রী মেহজাবীন অভিনীত সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘প্রিয় মালতী’র প্রশংসায় মাতলেন ফারিণ। চলচ্চিত্রটি কিছু অংশ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশে দেরি করেননি। তিনি তাঁর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও লিখেছেন। মেহজাবীন ও ফারিণের মধ্যে ব্যক্তিজীবনেও রয়েছে সুসম্পর্ক। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং রয়েছে পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসার সম্পর্ক। সামাজিকমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় তাদের একসঙ্গে ভ্রমণের ছবি। ফারিণ বলেন, ‘‘মেহজাবীন আপুকে সিনিয়র হিসেবে খুব সম্মান করি। আমাকেও তিনি আদর করেন। সে জায়গা থেকে আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক। তাঁর ‘প্রিয় মালতী’ কাজটি ভালো লেগেছে বলে সামাজিকমাধ্যমে লিখেছি।’’
হাসির জাদু
নিজেকে সবসময় হাসিখুশি রাখেন ফারিণ। এ কারণে প্রশংসাও পেয়ে থাকেন আপনজনদের কাছে। এ হাসিখুশি থাকার মন্ত্র কী? মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে উত্তরটা দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমি সবসময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। যদি মন থেকে ভালো থাকা যায় তাহলে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও সমস্যা হয় না। সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলেই হাসি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি। এর মধ্যে আমি তৃপ্তি খুঁজে পাই।’
নতুন বছরের প্রত্যাশা
আলাপে আলাপে নতুন বছরের প্রত্যাশার কথাও জানালেন তিনি। তাঁর ভাষ্যে, ‘‘আমার ক্যারিয়ারের জন্য গত বছরটি খুব ভালো ছিল। শিহাব শাহীনের ছবি ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ওয়েবের জন্য ‘অসময়’ ও ‘চক্র’তে অভিনয় করেছি। সংগীতশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয়েছে। ‘রঙে রঙে রঙিন হবো’ গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বছর আমার নতুন আরও একটি গান আসবে। ভালো কিছু কাজ করতে চাই। পরিবার নিয়ে যেন সুস্থ থাকতে পারি– এটিই প্রত্যাশা। আরও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। চলতি বছরে হয়তো আরও ভালো কিছু যোগ হবে ক্যারিয়ারে। দেখা যাক কী হয়।’’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তুফানের পর বনলতা সেন
‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন/ আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন’– কবি জীবনানন্দ দাশের সুবিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’। এ কবিতা নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কোনো অন্ত নেই। কে এই সুন্দরী নারী? কী তাঁর পরিচয়? নাটোরের বনলতা সেন নামের কোনো মায়াবতীর সঙ্গে কবির কি আদৌ পরিচয় ছিল? বনলতা সেন বিষয়ে আজীবন এই নীরবতা বজায় রেখেছেন কবি; মনের অজান্তেও কখনও কারও কাছে বনলতা সেনকে নিয়ে বলেননি কোনো কথা। কবির চরিত্র অনাবিষ্কৃত থাকলেও এবার পর্দায় আসছে ‘বনলতা সেন’ নামে একটি সিনেমা। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের পরিচালনায় এতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ও মডেল মাসুমা রহমান নাবিলা। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরই এ সিনেমা মুক্তি পাবে।
বনলতা সেনের খোঁজে...
নাবিলার সর্বশেষ অভিনীত সিনেমা ‘তুফান’ মুক্তি পেয়েছে গত বছর ঈদুল আজহায়। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমায় তাঁর অভিনীত ‘জুলি’ চরিত্রটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। শাকিব খানের সঙ্গে তাঁর নতুন রসায়নও দর্শক গ্রহণ করেছেন। তাদের খুনসুটি, ঝগড়া, অভিমান-অনুযোগ, প্রেমের দৃশ্যগুলো দর্শককে বেশ আনন্দ দিয়েছে। এর আগে তিনি শেষ করেছেন অনুদানের সিনেমা ‘বনলতা সেন’-এর কাজ। একেবারে নীরবেই সিনেমার দৃশ্যধারণ হয়েছে । এটি তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ন কাজ বলে মনে করছেন তিনি। সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বেশ বাছবিচার করে সিনেমার কাজে হাত দিয়েছি। আমার অভিনীত তৃতীয় সিনেমা ‘বনলতা সেন’-এর গল্প অসাধারণ। নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বেশ যত্ন নিয়ে কাজটি শেষ করেছেন। অনেক বছর ধরে সিনেমার কাজ হয়েছে। আমার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। আমি চাই, দর্শক পর্দায় কাজটি দেখুক। গল্প ও চরিত্র মিলে সিনেমাটি দর্শকের ভালো লাগবে– এ আশা করাই যায়।
একটি সূত্রে জানা গেছে,শুরুতে নাবিলাকে নির্মাতা শুধু চরিত্রের সারসংক্ষেপ দিয়েছিলেন। পরে পুরো স্ক্রিপ্ট পড়তে চান তিনি। নির্মাতা তাঁকে প্রথমে কম গুরুত্বপূর্ন চরিত্রের কথা বলছিলেন। কিন্তু বিরতির পর ওই ধরনের চরিত্র দিয়ে ফিরতে চাইছিলেন না এই অভিনেত্রী।
অনেক দিন পর নাবিলাকেই ডাকলেন নির্মাতা। নিলেন অডিশন। পরে চরিত্রটি নাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ন চরিত্রটিই বরাদ্দ হলো। নাম শুনে অনেকেই মনে করছেন এটি সাহিত্যনির্ভর কাজ। কেউ কেউ বলেছেন,বনলতা সেন কবিতার ছায়া থাকবে সিনেমায়। বিষয়টি নিয়ে নাবিলা বলেন, ‘স্ক্রিপ্টে যখন চোখ রাখি তখনই মনে হয়েছিল, আমি কোনো সাহিত্য পড়ছি। আসলে এটি সাহিত্যনির্ভর কাজ নয়। বনলতা সেন কে, এটি তো আমাদের জানা নেই। কাল্পনিকই বলা চলে। কেউ কখনও তাকে দেখেননি। নির্মাতা যেভাবে বনলতা সেনকে কল্পনা করেছেন, সেভাবেই সিনেমায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সিনেমাটিকে আসলে কোনো জনরায় ফেলা যায় না। নির্মাতা নিজের মতো করে গল্প লিখেছেন। এটি একটি রহস্যময় সিনেমা। অনেক ইতিহাস আছে এতে। বনলতা সেন কে তা সিনেমা দেখার পর বোঝা যাবে।
রান্নার আয়োজন
অভিনয়, উপস্থাপনা, মডেলিংয়ে বছরজুড়েই ব্যস্ত সময় কাটে নাবিলার। মাঝে সিনেমার কাজে বেশি মনোযোগী ছিলেন তিনি। এ কারণে উপস্থাপনায় একেবারেই দেখা যায়নি এ অভিনেত্রীকে। ১০ বছর পর ফিরলেন উপস্থাপনায়। ‘রাঁধুনী রান্নাঘর, বাংলাদেশের সেরা ১০০ রেসিপি’ ও ‘স্টারশিপ ফিউশন কিচেন’ নাম দুটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন তিনি। গত বছরের শেষ দিকে আবারও ‘রাঁধুনী রান্নাঘর, বাংলাদেশের সেরা ১০০ রেসিপি’ নিয়ে ফিরেছেন নাবিলা।
‘রাঁধুনী রান্নাঘর, বাংলাদেশের সেরা ১০০ রেসিপি’ উপস্থাপনা প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, ‘বেশ বিরতির পর রান্নার অনুষ্ঠান দিয়ে উপস্থাপনায় ফিরতে পেরে ভালোই লাগছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে অনেক ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। নানা অনুষ্ঠানের ভিড়ে এর আইডিয়া ব্যতিক্রম। পাকা ১০০ রাঁধুনির রেসিপি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ আয়োজন। মাছারাঙা টেলিভিশনে এর ১৩ পর্ব প্রচার হয়েছে। বেশ সাড়া পাচ্ছি আয়োজনটিতে। ‘স্টারশিপ ফিউশন কিচেন’ কাজটি পছন্দের বলে জানিয়েছেন নাবিলা। একটি দৈনিক পত্রিকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও চরকিতে রান্নার এ আয়োজন দেখা যাচ্ছে। রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা বেশ উপভোগ করছেন বলে জানান এ অভিনেত্রী।
কাজের অবসরে
শুটিং না থাকলেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন নাবিলা। তিনি বলেন, ‘আমি ঘরকুনো মেয়ে। ঘরেই বেশি মন টেকে। যখন শুটিং করি, তখনও সন্তানকে সময় দিতে পারছি না বলে অপরাধবোধ কাজ করে। ওই সময় সন্তানের সঙ্গ খুব মিস করি। সংসার সামলে সময় যে কখন চলে যায়, টেরই পাই না।’ v