‘নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে’
Published: 16th, January 2025 GMT
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দেখে-শুনে-বুঝে এবং বিচার বিশ্লেষণ করে এ ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি জানান, ‘আজ আমরা অফিসিয়ালি কোনো বক্তব্য দেব না। কারণ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এখনও পাইনি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে বসে নির্বাচন সংক্রান্ত সুপারিশ বিচার বিশ্লেষণ করে মতামত জানানো হবে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মতামত দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে এসব বিষয়ে অগ্রিম কিছু বলা ঠিক হবে না।’
নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত ভোট গ্রহণ করতে সব সময় প্রস্তুত জানিয়ে ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, ‘ভবিষ্যতে রাতের ভোট হবে না, এটা কল্পনাও করা যায় না। একটি অবাধ প্রভাবমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভোটসন্ত্রাস ব্যক্তি-দল কারও জন্য ভালো নয়: সিইসি
ভোটসন্ত্রাস ব্যক্তি-দল কারও জন্য ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ভোটাসন্ত্রাস করে আপাতদৃষ্টিতে জয় পাওয়া যায়। কিন্তু আখেরে নিজের বা দল কারও জন্য ভালো হয় না। এজন্য আমি বলতে চাই, কেউ এ ধরনের কাজ করবেন না।
আজ রোববার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ২ মার্চ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে হয়। এরমধ্যে আমাদের আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হচ্ছে। এ কার্যক্রম শেষ হলে আগামী জুনের মধ্যে আরেকটা ভোটার তালিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে।
মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, যদি এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে যারা আহত ও শহীদ হলেন তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়া শুধু এখন আর অধিকার নয়, এটা একটা দায়িত্বও। আমাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অন্য কোনো ইসির ওপর এতো প্রত্যাশা ছিল না।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দেবে। এটা ভিন্ন ভিন্ন হবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমাদের এখানে অনেকেই আছেন, যারা মনে করেন, আমার দলই দেশপ্রেমিক আর কোনো দল নয়। এট ঠিক না। মানুষ কিন্তু জন্মগতভাবেই দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেমটা কারও মনোপলি (একক অধিকার) নয়, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কম-বেশি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমি যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, এমন কোনো ব্যক্তি পাইনি, যে সুন্দর-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়নি। সবাই সুন্দর-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই কথা হয়েছে; সবাই সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চেয়েছে। আমরা জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছি, আমাদের এজেন্ডা বাংলাদেশের এজেন্ডা, ১৮ কোটি বাংলাদেশির এজেন্ডা। সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমাদের এজেন্ডা। এর বাইরে আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, জনগণের অংশগ্রহণই হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের শাসক নির্বাচন করে। ভোটারদের মতামতের তখনই প্রতিফলন হবে, যদি ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা চারদিকে দেখছি, সংস্কার আর সংস্কার। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইসির কি সংস্কার হবে না? আমি চাই, খোলা মাঠে নির্বাচনটা হোক। স্কুল-কলেজের খোলা মাঠে নির্বাচন করা কি সম্ভব নয়। আমরা চাই ট্রান্সপারেন্ট। কিন্তু এজন্য সবার সহযোগিতা করলে এটা করা সম্ভব।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার দায় কেউ না কেউ নেবে। যদি বিগত নির্বাচনগুলো ভালো না হয়ে থাকে; এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এর দায় ইসিকে নিতে হবে। কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি বলেন, আমাদের ভাবতে হবে, আমরা কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা ভেঙে যাবো, কিন্তু মচকাবো না। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সামাজিকভাবে বিশ্বাস অর্জনের জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তা করতে হবে। প্রথম পরীক্ষাই হবে আমাদের একটা ভালো নির্বাচন করা।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আজকের ভোটার দিবস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। ৩০ জুনের মধ্যে আরও একটি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। ভঙ্গুর নির্বাচনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা করতে হবে। আমরা কোনো রক্তাক্ত, হানাহানি ও চুরি দেখতে চাই না। এসব প্রতিরোধ করতে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এনআইডি মহাপরিচালক জানান, বাড়ি বাড়ি হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার তালিকা থেকে ১৯ লাখ মৃত ভোটার কর্তন করা হয়েছে। সারাদেশে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৩ জনের।