Samakal:
2025-04-28@18:27:54 GMT

বিদায়ী ভাষণে যা বললেন বাইডেন

Published: 16th, January 2025 GMT

বিদায়ী ভাষণে যা বললেন বাইডেন

জাতির উদ্দেশে বিদায়ী ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে দেওয়া ভাষণে তিনি তার এক মেয়াদে প্রশাসনের অর্জন তুলে ধরেন। তিনি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, মহামারী থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার এবং আমেরিকাকে আরও নিরাপদ করার কথা উল্লেখ করেন।

বিদায়ী ভাষণে বাইডেন বলেন, "আমরা যা করেছি তার পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে। তবে বীজ রোপিত হয়েছে, যা আগামী দশকগুলোতে বেড়ে উঠবে এবং ফল দেবে।" সুত্র- বিবিসি

রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। আর মেয়াদ শেষে বিদায় নেবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইডেন। ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার দিন কয়েক আগে বাইডেন তার বিদায়ী ভাষণ দিলেন।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাইডেন বলেন, "শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের অপ্রতিহত প্রভাব ব্যবহার করে আমাদের জলবায়ু সংকট মোকাবিলার পদক্ষেপ ধ্বংস করতে চায়, নিজেদের ক্ষমতা এবং মুনাফার স্বার্থে।"

তিনি সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেন, বিশেষ করে মেটা, যা স্বাধীন তথ্য যাচাইকারীদের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। বাইডেন বলেন, "সামাজিক মাধ্যম সত্যের উপর মিথ্যা চাপিয়ে দিচ্ছে, ক্ষমতা ও মুনাফার জন্য।"

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বিপুল সম্ভাবনা দেখলেও এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন বাইডেন। তিনি বলেন, এআই বিপুল সম্ভাবনা উপহার দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রহরা না থাকলে তা নতুন হুমকির জন্ম দিতে পারে। তবে রূপান্তরমূলক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের ওপর নেতৃত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। 

প্রাইমটাইমে দেওয়া ভাষণে ৮২ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, আজ আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাবের একটি অলিগার্কি বিকশিত হচ্ছে, যা আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এটি খুব অল্পসংখ্যক অতিধনী লোকের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণ।

বাইডেন সিলিকন ভ্যালির ধনী ব্যক্তিদের প্রতি ইঙ্গিত করেন, যাদের মধ্যে ইলন মাস্ক উল্লেখযোগ্য। মাস্ক ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং তার প্রচারণায় বিশাল আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব যেমন জেফ বেজোস এবং মার্ক জাকারবার্গ ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছেন।

বক্তৃতার শেষে বাইডেন আমেরিকানদের আহ্বান জানান, "আপনারা দেশের রক্ষাকবচ হোন। আগুনের শিখা প্রজ্জ্বলিত রাখুন।"

বাইডেনের বিদায়ী ভাষণটি আসে একই দিনে, যেদিন তিনি ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে ১৯ জানুয়ারি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার একদিন আগে।

তিনি জানান, এই আলোচনা তার কূটনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।

তবে ট্রাম্পও এই চুক্তির কৃতিত্ব দাবি করেছেন, উল্লেখ করে বলেছেন, "আমার নির্বাচনী জয়ই এই চুক্তিকে সম্ভব করেছে।"

২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বাইডেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বাইডেন লড়তে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।

বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ ছিল ওভাল অফিস থেকে তার পঞ্চম এবং শেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণ। বাইডেন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি তার পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড-এর প্রশংসা করেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

বোঝার উপর শাকের আঁটি

বাংলাদেশ যখন ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা লইয়া হিমশিম খাইতেছে, তখনই নূতন করিয়া আরও অনুপ্রবেশ আমাদের উদ্বেগকে বৃদ্ধি করিয়াছে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য হইতে গত শনিবার পর্যন্ত নূতন করিয়া ১ লক্ষ ১৩ সহস্র রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়াছে। শুধু উহাই নহে; বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন যৌথভাবে নবাগত রোহিঙ্গাদের আঙ্গুলের ছাপও গ্রহণ করিয়াছে। সরকার অবশ্য তাহাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনও দেয় নাই। নবাগত রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করিতে হাইকমিশন প্রেরিত পত্রেরও উত্তর দেয় নাই। উপরন্তু, মৌখিকভাবে সংস্থাটিকে জানাইয়া দিয়াছে, বিদ্যমান বাস্তবতায় লক্ষাধিক নূতন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা সুকঠিন। তবে ২০১৭ সালে যেই মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার জান্তার ভয়ংকর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপটে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত অতিক্রম করিতে অনুমতি দিয়াছিল, সেই মানবিকতা এইবারও বৃহৎ দোহাই হইয়া উঠিতে পারে। ফলস্বরূপ, রোহিঙ্গাদের লইয়া বাংলাদেশ নূতন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতে যাইতেছে। 

বিপুলসংখ্যক নূতন রোহিঙ্গা এমন সময়ে অনুপ্রবেশ করিল যখন ইতোপূর্বে আগত রোহিঙ্গাদের স্বীয় দেশে প্রত্যাবাসন লইয়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহিত দেনদরবার চালাইতেছে। এই আশঙ্কা অমূলক নহে, নূতন আবাসস্থল নির্মাণের মাধ্যমে কার্যত প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে আরও অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গাকে এই দেশে স্বাগত জানানো হইবে। কারণ ইহাতে রাখাইনে অবস্থানকারী অপরাপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসিতে উৎসাহ পাইবে। পরিণামে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হইয়া পড়িবে। প্রসংগত, রাখাইন রাজ্যে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশী আরাকান আর্মির অব্যাহত আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় জান্তা সরকার পশ্চাদপসরণ করিলেও রোহিঙ্গারা শান্তিতে নাই। বরং সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য বিস্তারে অঙ্গীকারবদ্ধ আরাকান আর্মির আচরণে অতিষ্ঠ হইয়া নূতনভাবে বাংলাদেশে পালাইয়া আসিতেছে। এখন প্রায় প্রতিদিন শুধু নাফ নদ পারই নহে, পাহাড়ি পথেও রোহিঙ্গারা প্রবেশ করিতেছে। 

আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ সংকট দেখা দিতেছে। যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য যেই আর্থিক সহায়তা দেয়, তাহা প্রতি বৎসর প্রতিশ্রুতির তুলনায় ক্রমহ্রাসমান। এই বাস্তবতায় নূতনভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করিতেছে।

স্মরণযোগ্য, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য নাই। বোঝার উপর হইতে শাকের আঁটি অপসারণের বিকল্প নাই। আশ্রিত জনগোষ্ঠীর কারণে বিশেষত পরিবেশ-প্রতিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নাজুকতা কী মাত্রায় বৃদ্ধি পাইয়াছে, তাহাও এখন অজানা নহে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহিত রোহিঙ্গাদের বিবিধ প্রকার সংঘাতমূলক ঘটনাও ঘটিতেছে। এই কথাও সর্বজনবিদিত, আশ্রয় শিবিরগুলি মিয়ানমার হইতে পাচারকৃত মাদক কারবারিদের আখড়ায় পরিণত হইয়াছে। কক্সবাজারের শিবিরগুলিতে মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনের সমাজবিরোধী তৎপরতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিতেছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে যাইবার পর হইতে সীমান্ত নিরাপত্তাও ভঙ্গুর হইয়া পড়িয়াছে। এই অবস্থায় একটা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়া স্বাভাবিক। বাস্তবে সেই আশঙ্কাই ক্রমশ দৃঢ় হইতেছে।
আমরা মনে করি, সময় সমাগত বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করিবার। যত চাপই থাকুক; মানবিকতা প্রদর্শন করিতে গিয়া কোনোক্রমেই রাষ্ট্রের সংহতি ও নিরাপত্তাকে লঘু করিয়া দেখা যাইবে না। বরং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলের উপর চাপ বৃদ্ধির কৌশল অন্বেষণ করিতে হইবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ