ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ, লজ্জায় পড়ল বিপিএল
Published: 16th, January 2025 GMT
বিপিএলের খেলা মাঠে থাকবে আর বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ ছড়াবে না, তা কি হয়! অতীতের মতো একাদশ বিপিএলও ৩০ ডিসেম্বর মাঠে গড়িয়েছে অনেক কমতি নিয়ে। সেই ঘাটতিগুলোই এখন সমস্যা আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি এই লিগ শুরুর ১৫ দিনের মাথায় সম্মানীর দাবিতে বিদ্রোহ হয়েছে দুর্বার রাজশাহীতে।
নির্ধারিত সময়ে প্রথম কিস্তির টাকা না দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্বস্তি আগে থেকে ছিল। তার ওপর দেরিতে পাওয়া ২৫ শতাংশ সম্মানীর চেক বাউন্স হয়েছে। কষ্টের টাকা না পেলে ক্রিকেটারদের ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। মানসিক অস্থিরতার মধ্যে অনুশীলনে মনোযোগ রাখা কঠিন। তাই গত দু’দিন চট্টগ্রামে অনুশীলনও করেননি রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। দলের ভেতরে টুকটাক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কথাও শোনা গেছে। জানা গেছে, পুরোপুরি গুমট একটা পরিবেশ দলের ভেতরে। এর ভেতরেই কাল সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ম্যাচ রাজশাহীর।
রাজশাহীকে ফ্র্যাঞ্চাইজি করার সময়ই সমালোচনা ছিল। আর্থিক সক্ষমতা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। টুর্নামেন্ট শুরুর পর সে দুর্বলতা টের পেয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। আইকন ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদকে পর্যন্ত সম্মানীর টাকা দেওয়া হয়নি বলে গুঞ্জন। জাতীয় দলের এ ফাস্ট বোলার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি হয়তো। সে কারণেই নিজেকে হোটেলবন্দি করে রেখেছেন তিনি। রাজশাহীর ক্রিকেটাররা কবে নাগাদ টাকা পেতে পারেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে দলের একজন কর্মকর্তা মালিকের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় একজন ক্রিকেটারের কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও মালিক পক্ষের কেউ খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করেননি। ক্রিকেটাররা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে দলের ম্যানেজার মেহরাব হোসেন অপিকে ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে দলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মালিকের স্ত্রী বলের আঘাতে আহত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গেছেন। সেখান থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায় টাকা নগদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মালিক অপারেশন্স ম্যানেজারকে বলেছেন, দেশে ফিরে ক্রিকেটারদের নগদ টাকা দেবেন। চেক ব্যাংকে জমা না দিতে অনুরোধ করেছেন।’
এ থেকে বোঝা যায়, খেলোয়াড়দের ঠান্ডা রাখতে চেক দেওয়া হয়েছিল। রাজশাহীর মালিক পক্ষের কেউ না এলেও গতকাল সন্ধ্যায় ক্রিকেটারদের আশ্বস্ত করতে চট্টগ্রামে আসেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। হোটেল র্যাডিসনে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতির মিটিংও হয়েছে। জানা গেছে, ফারুক আশ্বস্ত করায় ক্রিকেটাররা ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছেন।
রাজশাহীর এই ঘটনা বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতেও প্রভাব পড়েছে। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আলোচনার বিষয়ই ছিল সম্মানী না পাওয়া। কে কতটা সম্মানী দিয়েছেন, সেই খোঁজ নিচ্ছিলেন খেলোয়াড়রা। লিগের খেলা শেষ হওয়ার আগে সম্মানীর ৫০ শতাংশ টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে অনেকে।
জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য খেলি। সেই টাকা সময়মতো না দিলে মনমানসিকতা ভালো থাকে না। টুর্নামেন্টের অর্ধেক হয়েছে অথচ এখনও ২৫ শতাংশ টাকা দেয়নি। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চুক্তির অর্ধেক টাকা দেওয়ার কথা। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আগে বাকি ২৫ শতাংশ এবং খেলা শেষে ২৫ শতাংশ দেবে। অথচ কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ম মানছে না। ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা দিয়েছে।’
অনিয়মই যেখানে নিয়ম, সেখানে সম্মানীর টাকা সময়মতো পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংক জামানতই তো দেয়নি বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে বিসিবি সভাপতিকে ফোন করা হলেও ধরেননি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স ছিল, জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি আজ বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে ক্ষমা চান।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চান আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে জানান যে, তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। আর বিষয়টি তাঁকে জানান বলেও ওই গণমাধ্যম কর্মী তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন। এরপরই আজকে আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিলেন। সেটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
‘প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
গতকাল রাত ৯ টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ের (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। বিষয়টি উক্ত সাংবাদিককে নিশ্চিত করলাম। তিনি পোস্ট করলেন, নিউজও হলো গণমাধ্যমে। নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তাই ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজনবোধ করলাম।
আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোন ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোন লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেন নি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’