পৃথিবীতে একটি সন্তান বড় হয়ে ওঠে মা আর বাবার ভালোবাসা ও সহযোগিতায়। কিন্তু বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তাদের সন্তান দুইজনের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। সে যেকোন একজনের কাছে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যজনের প্রতি রাগ, ক্ষোভ জমা হয় তার। `ব্রোকেন ফ্যামিলি’ শব্দটাই জানিয়ে দেয় পরিবারটা ভেঙে গেছে। এমন পরিবারের সন্তানেরা সাধারণত মানসিকভাবে বিপর্যন্ত থাকে। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা যে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন আলিয়া আজাদ, এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কাউন্সিলর।

তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত যেটা বলব ব্রোকেন ফ্যামিলিরি সন্তানেরা অনিরাপত্তায় ভোগে।  দেখা যাচ্ছে যে তার বাবা একদিকে তার মা অন্যদিকে। হয়তো কেউ মায়ের কাছে আছে হয়তো কেউ বাবার কাছে আছে। যেকোন একজনের কাছে যখন থাকে বাবা কিংবা মা সেও কিন্তু মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না। সে যে সুস্থভাবে সন্তানদেরকে গড়ে তুলবে সেটাও কিন্তু সে তখন পারে না। তার যে আচরণ করেন সেটা অনেক সময় সন্তানেরা নেতিবাচকভাবে পায়। সেক্ষেত্রে সন্তানেরাও বিষন্ণতা, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা বন্ধু মহল এমনকি শিক্ষকদের কাছেও বৈষম্যের শিকার হয়। এক্ষেত্রে তাদের হীনমন্যতায় ভোগা খুব স্বাভাবিক। ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা অবিশ্বাসে ভোগে। অনেক সময়  তারা পৃথিবীটাকেও বিশ্বাস করা বন্ধ করে দেয়। ফলে তাদের পড়ালেখাযর ক্ষতি হয়, তারা কোনো এইম খুঁজে পায় না, আগ্রহ খুঁজে পায় না। এক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়ে। অনেকে সময় দেখা যায় তারা ওই বয়সে যে যে সমস্যা মোকাবিলা করছে সেই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার কথা না। পরিস্থিতি তাদের মনে যে চাপ সৃষ্টি করে তা তাদের বেড়ে ওঠা ব্যাহত করে।’’

 ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের জন্য আলিয়া আজাদের পরামর্শ—
জীবনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে: ব্রোকেন ফ্যামিলি হলেই যে আমি শেষ হয়ে গেলাম বা আমার জীবন শেষ বিষয়টা কিন্তু সেরকম নয়। এই বিষয়টাকে কিন্তু পজিটিভ ভাবেও নেওয়া যেতে পারে। আমি এক্ষেত্রে আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো আমি আমার হসপিটালে ১২ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে রোগীকে দেখতে কেভিনে গিয়েছি। গিয়ে দেখি দুজন মহিলা ওখানে বসা ছিলেন। আমি বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে দুজন মহিলা ওরা তোমার কি হয়? বাচ্চাটা তখন আমাকে সুন্দরভাবে বলল যে, একজন আমার আসল মা আরেকজন আমার সৎ মা। সেই সময় আমি সত্যি অবাক হয়েছি এবং সেই ১২ বছর বয়সী ছেলেটার কাছে আমি প্রথম শিখলাম যে ব্রোকেন ফ্যামিলিও পজিটিভ ভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এরপর আমি যখন ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম এই যে তোমাদের ব্রোকেন ফ্যামিলি তোমাদের খারাপ লাগে ন? বাচ্চাটা তখন আমাকে হেসে বলেছিল যে এটা তো খুব একটা সাধারণ বিষয় আমার অনেক ফ্রেন্ডেরই এমন ফ্যামিলি রয়েছে। তারমানে বিষয়টাকে ও পজেটিভ ভাবে একসেপ্ট করেছে।

পরিস্থিতি মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে: ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের মাঝে দেখা যায় যে বিয়ের প্রতি একটি অনীহাও কিন্তু কাজ করে। তারা তো বিয়ের সম্পর্কটাকে সুন্দরভাবে দেখেনি। তারা কিছুটা অবহেলা নিয়ে নিজেদের মতো করে বড় হয়। যদি একের অধিক ভাই বোন থাকে তাহলে হয়তো একজন অন্যজনের কষ্টটা শেয়ার করতে পারে। কিন্তু সে যদি একক সন্তান হয় তার কিন্তু শেয়ারিং এর জায়গাটা আর থাকে না। যারা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান আছো, তোমাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব তোমরা কিন্তু সুন্দরভাবে বড় হতে পারো এবং তোমরাও সুন্দরভাবে পৃথিবীটাকে দেখতে পারো। মাইন্ড সেটটাকে যদি চেঞ্জ করা যায় তাহলে দেখবে যে তোমরাই ভালো রয়েছো। প্রথমত আমি যে বিষয়টাকে বলতে চাই সেটা হল যে সিচুয়েশনটাকে মেনে নেওয়া। এই যে ১২ বছরের  বাচ্চার যে উদাহরণটা আমি দিলাম ও ঠিক যেভাবে মেনে নিয়েছে। তোমরা যদি ঠিক সেইভাবে মেনে নিতে পারো দেখবে যে তোমাদের মনের ভার ওইখানেই অনেকটা কমে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাবা-মা কারো প্রতি আমরা যেন কোন রাগ ধরে না রাখি। বিশেষ একজনের প্রতি রাগ ধরে না রাখাটাই ভালো। এতে তোমার মনের প্রশান্তি বাড়বে এবং তুমি ভেতর থেকে হয়তো কিছুটা হালকা অনুভব করবে। কারণ আমরা যখন রাগ, অভিমান, ঘৃণা ধরে রাখি মোটকথা এটা আমাদের নিজেদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়। আমরা যেন নিজেদেরকে শাস্তি না দেই।

কষ্ট পুষে না রেখে শেয়ার করুন: ব্রোকেন ফ্যামিলিতে হয়তো আমরা অনেক সময় অনেক কিছু পাব না। কিন্তু আমরা যা পাচ্ছি না সেদিকে নজর না দিয়ে আমরা কি কি পেয়েছি সেদিকে নজর দেওয়া ভালো । এর চেয়েও তো খারাপ হতে পারতাম আমাদের লাইফে । আমরা যা যা পেয়েছি যদি সেটার ওপর ফোকাস দিই তাহলে আমাদের পজিটিভিটি বাড়বে এবং আমার একটা গোল সেট করতে পারবো। আমরা বিষন্ণতার দিকে নিজেদেরকে ঠেলে দেবো না। যেমন, ছোটবেলা থেকে একাধিক ভাইবোন যদি না থাকে তার কিন্তু বন্ধু মহল বা ভালো আত্মীয় থাকতে পারে। সে যদি তার মনের ভাব বা ইমোশন লুকিয়ে না রেখে শেয়ার করে তাহলে দেখা যাবে যে মনের ভেতরে তার কষ্টগুলো জমে থাকবে না। আবার এটাকে বেন্টিলেশনও বলে থাকি যে তার ভেতর থেকে কষ্টগুলো বের হয়ে যাবে। সবারই কিন্তু কেউ না কেউ একজন ওয়েল উইশার থাকে তো এই বিষয়টার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কেউ যদি তার মনের কষ্টটাকে কারো সাথে প্রকাশ করে তাহলে কিন্তু তার মনের কষ্টটা প্রকাশের সঙ্গে বের হয়ে যায়। এতে সে হালকা অনুভব করবে।

সুন্দর জীবন যাপনের চেষ্টা ধরে রাখতে হবে: আমরা যখন কোনো ডিপ্রেশনে বা কষ্টে থাকি সেক্ষেত্রে আমি বলব দুটি কথা। কেউ আমরা ধ্বংস হয়ে যাই হয়তো আমরা কেউ প্রোডাক্টিভ হই। সো আমার রিকোয়েস্ট হবে তোমরা ধ্বংস হবে না তোমরা প্রোডাক্টিভ হবে। এতে তোমার দুইটা উপকার এতে তোমার নিজের একটা পরিচয় হবে এবং তুমি তোমার কষ্টটাকে জয় করে আজকের দিনটাকে ভালোভাবে কাটাতে পারবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং নিজেকে ব্যাডলাক এই শব্দটা কখনোই বলা যাবে না। এই প্রকৃতিতে অনেক কিছুই ঘটে থাকে যার সব কিছুর জন্য আমরা দায়ী নই, আমরা পরিস্থিতির শিকার। সেই পরিস্থিতিটাকে কন্ট্রোল আনার ক্ষমতা কিন্তু মানুষেরই আছে। তোমার মাঝেও সেই ক্ষমতা আছে তুমি যদি একটু চেষ্টা করো তাহলে সেই পরিস্থিতিটাকে কন্ট্রোল করে এই পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে একদিন তুমি দাঁড়াতে পারবে কিন্তু চেষ্টাটাকে জারি রাখতে হবে।

হীনমন্যতা দূর করতে হবে: আলাদা করে ভাবার দরকার নেই যে তুমি ভিন্ন কোনো সংসারে আছো। কোন একটা কারণে তোমাদের বাবা-মা একসঙ্গে থাকতে পারেনি। কিন্তু তুমি একটা পরিবারে আছো। তুমি আট দশজন মানুষের মত স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়ার অধিকার রাখো এবং স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়ার ক্ষমতাও রাখো। তুমি যদি তোমার ক্ষমতাটাকে জানো তাহলে দেখবে যে তুমি নিজেকে স্বাভাবিক ভাবছো এবং হীনমন্যতায়  ভুগছো না এবং তুমি তোমার লাইফটাকে সাধারণভাবে চালিয়ে নিয়ে একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারছো। 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত ক ষমত সমস য র একট

এছাড়াও পড়ুন:

অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো

জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।

স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।

মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’

তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।

চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।

অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।

সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহজাদপুরে আগুনে নিহত চারজনের মরদেহ ঢামেকে
  • অনিয়মের খোঁজ নেওয়ায় সাংবাদিকের চাকরি খাওয়ার হুমকি বেরোবি কর্মকর্তা
  • ইসরায়েলে ছুরি হামলায় নিহত ১, আহত ৩
  • ভোলায় চুরির অভিযোগে একজনের দুই চোখে গুরুতর জখম, কাটা হলো দুই আঙুল
  • ৭টি মৌলিক হক
  • ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডা: পশ্চিমাদের জেগে ওঠার বার্তা
  • নদীতে ভেসে উঠল আরেকজনের লাশ, নিহত বেড়ে ৫
  • হাতে ভাজা মুড়ি, শাশুড়ির পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অর্চনা
  • অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরে কাঁদলেন মার্কিন অভিনেত্রী
  • অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো