Samakal:
2025-01-31@13:02:28 GMT

বিএনপির গোপন সঙ্গী আ’লীগ

Published: 16th, January 2025 GMT

বিএনপির গোপন সঙ্গী আ’লীগ

আগে বগুড়ায় যমুনা নদীর বৈধ-অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতারা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তবে গোপনে সঙ্গে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদেরও। এখন বিএনপি-আওয়ামী লীগ মিলেমিশে বালু লুট করছে। এ কারণে অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই কোনো মহলের।

সারিয়াকান্দি

সরকারিভাবে জেলায় পাঁচটি বালুমহালের মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের নারাপালা ও বোহাইল ইউনিয়নের কালিয়ান মহাল সবচেয়ে বড়। কাগজে-কলমে এই বালুমহাল দুটি জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া হয়। তবে বালু তোলা হয় সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী, চরকুমারপাড়া, দেবডাঙ্গা, কুতুবপুর, ধলিকান্দি, চন্দনবাইশার রৌহদহ, আদবাড়িয়া, চর চন্দনবাইশা, দেলুয়াবাড়ি, ইছামারা ও গজারিয়া পয়েন্ট থেকে।

নারাপালা বালুমহালটি কয়েক বছর আগে থেকে ইজারা নিয়ে আসছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী তরফদার এবং সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস সালাম। আর কালিয়ান বালুমহালটি ইজারা নিতেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সারিয়াকান্দির কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান রাসেল। তারা তিনজনসহ একই দলের কয়েকজন মূলত সারিয়াকান্দি উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা আত্মগোপনে যান। তখন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আলম, কামালপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক দেলোওয়ার হোসেন পুটু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা ও বিএনপি কর্মী মোখলেছার রহমান হিটলু। কিন্তু তাদের সঙ্গে গোপনে বালুর ব্যবসার সঙ্গী হন আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতাসহ আরও কয়েকজন।

এদিকে বালু তোলায় ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ নিয়ে ইছামারার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলম প্রতিবাদ করেন। এ কারণে গত ৮ জানুয়ারি তাঁকে মারধর করেন বালু ব্যবসায়ীরা। 

সারিয়াকান্দি পৌর বিএনপির সভাপতি শাহাদৎ হোসেন সনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন বালু ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হবে।’

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি বালু ব্যবসায় জড়িত নই। মোখলেছার রহমান হিটলুসহ কয়েকজন জড়িত।’

সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরে আজম বাবু বলেন, ‘আমাদের দলের যারা বালু ব্যবসায় জড়িত ছিল, তারা এখন আর নেই। আওয়ামী লীগের লোকেরাই এখনও গোপনে বালু ব্যবসা করছেন।’

ধুনট

এ উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৌবেড় মৌজায় সরকারি বালুমহালটি কয়েক বছর ধরে ইজারা পাচ্ছেন জেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়ে পার্শ্ববর্তী সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল, আওলাকান্দি, ধুনটের শহরাবাড়ী, শিমুলবাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, বৈশাখী কৈয়াগাড়ী ও ভূতবাড়ী এলাকায় যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে গেলে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে নেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাশেদুজ্জামান উজ্জ্বল ও ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য বেলাল হোসেন বাবু। তারা যুবলীগ নেতা বেলালের সঙ্গে সমঝোতা করে যৌথভাবে বালু তোলা শুরু করেন। বালু তোলার ফলে শহরাবাড়ী খেয়াঘাটের পাশের চরসহ শিমুলবাড়ীতে ভাঙনে জেগে ওঠা চর যমুনায় বিলীন হয়েছে। বৈশাখী চরেরও একই অবস্থা। শহরাবাড়ী ঘাট থেকে অতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত শহরাবাড়ী থেকে ধুনট উপজেলা পর্যন্ত সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে।

ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বালু ব্যবসা করি না। দলের অন্য কেউ করতে পারে।’

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ‘উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের অনানুষ্ঠানিক কপি পেয়েছি। বালু উত্তোলনকারীদের মৌখিকভাবে বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। এর পরও বালু তোলায় তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

সোনাতলা

এ উপজেলায় অন্তত আটটি বালুর পয়েন্ট রয়েছে। এগুলো আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এখন নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে মধুপুর বালুর পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, সোনাকানিয়া বালুর পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করতেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, চরপাড়ারটি সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন। এখন বালুর পয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটো, মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রিন্স, জোড়গাছা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী, উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আগেও আমি বালু ব্যবসা করিনি, এখনও জড়িত নই। যারা আমার কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে।’

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে ফোন করে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্য

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ বলেন, ‘যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজর আছে। অভিযোগ পেলে অভিযান চালানো হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ন ত কর ম র ব ল র ব যবস ন আওয় ম উপজ ল র শহর ব ড় ল ইসল ম দল র য

এছাড়াও পড়ুন:

জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি ছাড়া সব পদেই আ.লীগের জয়জয়কার

মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে আওয়ামীপন্থিরা ১৪টিতে জয় পেয়েছেন। সভাপতি পদ ছাড়া অন্য সব পদে তারা জয়ী হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী এমদাদুল হক খান। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়াকে ৭৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।

এদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ১৫৬ ভোটে পরাজিত করে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মাহাবুব হোসেন (শাকিল)। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১৩০ ভোট ও জালালুর রহমান পেয়েছেন ১৩০ ভোট। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম মিয়া পেয়েছেন ২৯ ভোট (নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন প্রার্থীর ভোট সমান হওয়ায় পুনরায় গণনা অথবা লটারি করে বিজয়ী প্রার্থী নির্বাচন করা হবে)। সহ-সভাপতি পদে মাহবুব হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ পদে শাকিলা পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-২ পদে মশিউর রহমান পারভেজ, কোষাধ্যক্ষ পদে সুজন ভৌমিক, সম্পাদক (লাইব্রেরি) পদে মুনীর হাসান, সম্পাদক (মহরার) পদে এ কে এম আজিজুল হক মুকুল নির্বাচিত হয়েছেন।

কার্যনির্বাহী ৫টি পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিজয়ী ৫ জন হলেন সৈয়দা তাহমিনা খানম, এনামুল হক, আবদুস সালাম, ইকবাল হোসেন ও আবু সুফিয়ান। এ ছাড়া সম্পাদক (অ্যাপায়ন ও বিনোদন) পদে বদরুন নাহার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ মুঠোফোনে জানিয়েছেন, মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি ছাড়া ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক বিজয়ী হয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে সরাসরি আওয়ামী লীগের পদে থাকা কোনো নেতা অংশগ্রহণ করেননি। আওয়ামী লীগের কোনো আইনজীবী নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনিও অন্য সবার মতন বিজয়ী হতেন বলে আমি মনে করি। যারা নির্বাচিত হয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন।

তবে এমদাদুল হক খান সভাপতি পদে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সমর্থন নিয়েই বিজয়ী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, সভাপতি পদে আওয়ামী লীগের কেউ প্রার্থী না হওয়ায় তাদের সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচনে মূলত এমদাদুল হক খানকেই ভোট দিয়েছেন। সেকারণেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়া পরাজিত হয়েছেন।

মাদারীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোখলেছুর রহমান বলেন, এমদাদুল হক খানকে নির্বাচিত করায় সব আইনজীবীদের ধন্যবাদ। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার বিজয়ে আমরা আনন্দিত।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মাদারীপুর আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন জানান, সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দুজন সমান ভোট পাওয়ায় তাদের ছয়মাস করে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ