মাহমুদুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
Published: 16th, January 2025 GMT
২০১৮ সালে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কুষ্টিয়ার আদালত চত্বরে হত্যাচেষ্টা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মহিবুল ইসলাম বাধনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি মামলার এজাহারভুক্ত ৪৪ নম্বর আসামি। এখন পর্যন্ত এ মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেহাবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে শহরের হাউজিং এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ।’’
গ্রেপ্তার বাধন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা এলাকার নজরুল ইসলাম বাবুর ছেলে।
আরো পড়ুন:
নারীকে ব্যবহার করে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর টিপুকে হত্যা: পুলিশ
কুষ্টিয়ায় জামায়াতকর্মী নিহত: ৩ আসামি গ্রেপ্তার
এর আগে, ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার একটি আদালত থেকে মানহানির মামলায় জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় লাঠি ও ইটের আঘাতে তিনি আহত হন। তাকে বহনকারী গাড়ির গ্লাসও ভেঙে ফেলা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাহমুদুর রহমান ও তার সহযোগীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার মামলাটি করেন। ওই মামলায় জামিন নিতে কুষ্টিয়া আদালতে গিয়েছিলেন তিনি।
সেদিন কুষ্টিয়ায় দায়ের হওয়া মানহানির মামলায় মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদ ১০ হাজার টাকা জামানতে স্থায়ীভাবে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়ার পর দুপুর ১টা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে মাহমুদুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ওপর হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে রক্তাক্ত হন মাহমুদুর রহমান।
ঢাকা/কাঞ্চন/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর র রহম ন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান ও ঢাকা উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহীনুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগপত্র পর্যালোচনা শেষে এ আদেশ দেন।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামি ডা. তৌহিদুর রহমান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের মৃত তফছির উদ্দিনের ছেলে। অপর আসামি মো. শাহীনুর রহমান মাগুরা জেলা সদরের কাদিরাবাদ গ্রামের একেএম ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে।
আরো পড়ুন:
সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নড়াইলে গ্রাম আদালতে ৬৪১ মামলা নিষ্পত্তি
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, অনুমোদন ছাড়াই বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ব্যতীত সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজিতে (নলতা) ইকুইপমেন্ট সামগ্রী, আসবাবপত্র , বইপত্র সাময়িকী ও খেলাধুলার সামগ্রী কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান তৎকালীন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা ইনস্টিটিউট ও হেলথ টেকনোলজির সাবেক অধ্যক্ষ ডা. তৌহিদুর রহমান। অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত নলতা আইএইচটিতে চাহিদা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই খেলাধুলা সামগ্রীসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য বিধি বহির্ভূতভাবে বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভে কমিটি গঠন করে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করেন ডা. তৌহিদুর রহমান।
২০১৮ সালের ১৫ মে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ঢাকার উত্তরার বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ১০টি ফুটবল, ২৫টি ক্রিকেট ব্যাট, ২১টি ক্রিকেট বল, ২০টি ক্রিকেট প্যাড, ১১টি ক্রিকেট হেলমেট, ১০টি ক্রিকেট গ্লাভস, ১৫টি ক্রিকেট স্টাম্প, পাঁচটি ২০ কেজি ওজন সেট, পাঁচটি ৫ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৪ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ৩ ইঞ্চি স্টিক, পাঁচটি ১৪ কেজি ডাম্বেল, একটি ট্রিসেফ বার, ৫৬ পিস মাল্টি জাম, পাঁচটি চায়না আপ মেশিন, পাঁচটি ট্রেড মিল, চারটি সিট আপ বেঞ্চ, ছয়টি টিটি বোর্ড, ১০টি বাস্কেট বল, ১০টি ব্যাডমিন্টন সেট, পাঁচটি দাবা সেট, ১৫টি হ্যান্ডবল, ১০টি ভলিবল, ক্লাইন চেষ্ট প্রেস-এর চারটি স্মিথ মেশিন, কেবল ওয়ারের ২০টি লাফ দড়ি, পাঁচটি হ্যামার স্ট্রেনথ, পাঁচটি ইলেকট্রিকাল ট্রেনার এক্সসারসাইজ বাইক ও পাঁচটি ৫৬ ইঞ্চি ক্যারাম বোর্ড সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করেন।
পরবর্তীতে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজ ২০১৮ সালের ২৪ মে মালামাল সরবরাহ করে ওই বছরের ১০ জুন ৫০ লাখ টাকার বিল দাখিল করে। ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীনুর রহমানকে ২০১৮ সালের ১০ জুন বিল পাশ করে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর পাঠান। সে অনুযায়ী, হিসাবরক্ষণ অফিস সরকারি কর্তণ বাদে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ২০১৮ সালের ১৪ জুন ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক ইস্যু করে। পরে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহীনুর রহমান টাকা তুলে নেন।
অভিযোগ অনুসন্ধানকালে কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর সঠিক মূল্য একটি টিমের মাধ্যমে যাচাই করার জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ক্রীড়া অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালককে অনুরোধ করে। ২৬ সেপ্টেম্বর নলতা আইএইচটি ও ম্যাটস এর কেনা ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুদকের তদন্তকারী টিম ১০ অক্টোবর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজের সরবরাহকৃত ক্রীড়া সামগ্রীর মূল্য ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাচার টাকা কেটে নিয়ে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এক্ষেত্রে বেনিভোলেন্ট এন্টারপ্রাইজকে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ডা. তৌহিদুর রহমান রহমান ও মো. শাহীনুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৬৫০ টাকা আত্মসাৎ করে অপরাধ করেছেন।
আদালতে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, “গত ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমানের দায়েরকৃত অভিযোগপত্রটি পর্যালোচনা শেষে বিচারক মো. নজরুল ইসলাম অভিযুক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়ে ১৬ মার্চ শুনানির ধার্য দিন নির্ধারণ করে দেন। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ