জ্বলেপুড়ে ছারখার।চতুর্দিকে রুক্ষতা। মরু-মানচিত্রে বিভীষিকার দাগ। বাতাসে লাশের  গন্ধ। ১৫টি মাস কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে; শোকে পাথর গাজা। দিবস ও রজনীর কঠিন দিনরাত্রি পাড়ি দিয়ে অবশেষে এসেছে সুখবর। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। আনাহার, নিদ্রাক্লান্তি আর মৃত্যুর ফনা তোলা সময়ে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতার মধ্যে হঠাৎ ঘটেছে জাগরণ। 

একটু স্বতির খবর আসতেই তাই উচ্ছ্বাস দেখাতে দেরি হয়নি গাজার মানুষের। আর হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির অধীর অপেক্ষায় সময় কাটছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। ইসরায়েলেও দেখা গেছে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে। 

হামাস ও ইসরায়েল চুক্তির শর্তে রাজি হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানির পক্ষ থেকে। ১৫ জানুয়ারি গভীর রাতে তিনি এই ঘোষণা দেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাজা ও ইসরায়েলে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। 

বিশ্ববাসীর চোখের সামনে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস গাজায় নির্বিচার নৃশংসতা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে যার সাময়িক সমাপ্তি হচ্ছে। ১৯ জানুয়ারি রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে যুদ্ধবিরতি। প্রথম দফায় ৪২ দিন স্থায়ী হবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। উভয় পক্ষ শর্ত প্রতিপালন করে চললে পরবর্তীতে আসবে নতুন ঘোষণা। 

কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের প্রতিনিধি ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারীরা। কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করেছে। তারা দুই পক্ষের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করে চুক্তির শর্তে হামাস ও ইসরায়েলের সম্মতি আদায় করে। এরপর আসে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা।

যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এখন পর্যন্ত ৩৩ জন হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে। আর গাজা থেকে পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে ইসরায়েলকে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের একাংশকে মুক্তি দিতে হবে। অবশ্য চুক্তির শর্তগুলো আরো বিশদ, যেখানে অনেক যদি-কিন্তুর ব্যাপার রয়েছে।

হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হতে যাওয়া যুদ্ধবিরতির পরদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিতে হবে বাইডেনকে। অবশ্য ট্রাম্পও এই যুদ্ধবিরতির জন্য কৃতীত্ব নিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতে সহায়তা করায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথমে ট্রাম্প এবং তারপর বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

১৫ মাসে যুদ্ধে গাজায় প্রাণ গেছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সব মিলে দেড় হাজারের মতো ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এই অসম যুদ্ধে গাজা জ্বলেপুড়ে ছারখার হলেও মাথা নোয়ানি ফিলিস্তিনিরা।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র ও ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

এই কঠিন সময়ে ঐক্য ধরে রাখা প্রয়োজন: ঢাবি উপাচার্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির ঐক্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। এক অর্থে জাতির জন্য এটি একটি ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখা একান্তই প্রয়োজন।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিয়াজ আহমেদ খান এ কথা বলেন।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির জন্য পরম শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও মমতার দিন। এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের সেই চূড়ান্ত আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে আছে।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, যুগে যুগে ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এ জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং সাহস জুগিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতি ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আজও জাতির ঐক্য ধরে রাখার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোকবর্তিকা। একই সঙ্গে ১৯৫২, ১৯৬৮, ১৯৬৯, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৯৫২ থেকে ২০২৪—এর প্রতিটি দিন ও ঘটনাপ্রবাহ জাতির মৌলিক পরিচয়ের মাইলফলক। এর কোনো অংশ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ইতিহাসই যুগে যুগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে, আর বর্তমান সময়ে সেই ঐক্য ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ