দিল্লি, বেইজিং ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে ঢাকা। কাউকেই অসন্তুষ্ট না করে নিজ স্বার্থ রক্ষা করে তিন দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বেইজিং যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এসব কথা বলেন তিনি।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হবে কিনা– উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জন্য ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আমরা অবশ্যই একটা ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। কাউকেই অসন্তুষ্ট করতে চাই না। তবে অবশ্যই নিজ স্বার্থ রক্ষা করে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখব।

মার্কিন নতুন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বা এ রকম বড় দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেটা কিন্তু দেশটির সরকার দিয়ে হয় না। নতুন সরকার এলে তাদের কিছু বক্তব্য থাকতে পারে, সেটা আমরা দেখব। আমি মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো হোঁচট খাবে।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, সম্পর্কে পারস্পরিক চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে সব সময় একটু-আধটু পরিবর্তন হয়। এ রকম যখন হবে তখন আমরা সেই অনুযায়ী আমাদের পদক্ষেপ নেব। আমি কবে গেলাম চীনে সেটা কোনো বিষয় না।

তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের ঋণ রয়েছে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে– যেমন আমরা ঋণের শর্তাবলি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো। আলোচনার মধ্যে প্রথমে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো আসবে। চীনের সঙ্গে আমাদের প্রধানত আমদানির সম্পর্ক এবং এগুলো আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের অনেক রপ্তানি সেই আমদানি পণ্যগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কাজেই চীনের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উপদেষ্টা বলেন, চীনের কাছে চাইব– যেন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও ইউরোপের মতো আমাদের জন্য তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখে। এখনও চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু উত্তরণের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে, তাই এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে।

তিনি জানান, এ ছাড়া কিছু সাংস্কৃতিক বিষয় আলোচনায় রয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুই দেশেই কিছু উৎসব আছে। সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করব।

বাংলাদেশে চীনের ঋণে সুদের পরিমাণ জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিটি ঋণের সুদের হার এক না। আমরা মোটা দাগে সুদের হার কমানোর কথা বলব। ঋণ পরিশোধ সীমা চেষ্টা করব ৩০ বছরে নিয়ে যেতে; যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ কম আসে এবং পরিশোধ করতে সহজ হয়। পরিশোধের সময় বাড়ানোর কথা বলব। সফরে নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের করা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন হবে।  

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তা চাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাইব চীন আমাদের সহায়তা করুক। তাদের ওখানে যথেষ্ট প্রভাব আছে। আমরা চাইব রাখাইনে একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হোক।

বিগত সরকারের সময়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ও বাজেট সহায়তা নিয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা কোনো কিছু বাদ রাখব না, সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব। বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলব। 

সীমান্তে সমস্যা মোকাবিলা করা হবে

ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা যখন বলছি, তখন বুঝেই বলছি। তখন আলোচনার প্রশ্ন আসে, সেই আলোচনায় আমরা যাব।

তিনি বলেন, তবে সাধারণ হিসাব হচ্ছে, জিরো লাইন থেকে ১৫০ গজ দূরে প্রাচীর থাকবে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটতে পারে, যেমন তামাবিল সীমান্ত, ওখানে তো ঘর তোলার  জায়গায় নেই। ক্ষেত্র বিশেষে এমন জায়গা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সীমান্ত ইস্যু আমরা এক দিনে সমস্যার সমাধান করতে পারব না, আবার কখনও যে হবে না, এ নিশ্চয়তাও দিতে পারব না। সীমান্তে এ ধরনের সমস্যা হতে থাকবে, আর আমরা মোকাবিলা করতে থাকব। এ ধরনের সমস্যা এর আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট পর শ ধ সমস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ