কারা কর্মকর্তা মাহাবুব এখনও নিরুদ্দেশ
Published: 16th, January 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের প্রভাবশালী কারা কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম এখনও নিরুদ্দেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই কর্মস্থলে নেই তিনি। স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি দিয়েও মাহাবুবের সাড়া পায়নি কারা অধিদপ্তর। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর চাকরিজীবনের বেশি সময় কেটেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর মধ্যে নিয়ম ভেঙে সর্বশেষ টানা সাত বছর জেলার হিসেবে এই কারাগারের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে বন্দিদের সুবিধা দিয়ে উৎকোচ আদায়সহ নানা অভিযোগ ছিল।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাহাবুবকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ১২ মে কুমিল্লা কারাগারে বদলি করা হয়। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটাতেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পাঁচ দিনের ছুটি নেন। এর পর আর কর্মস্থলে যাননি। পরে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ই-মেইলে তিন মাসের ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দেন। ৮ নভেম্বর সেই ছুটিও শেষ হয়েছে। কর্মস্থলে উপস্থিত কিংবা কারা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেননি মাহাবুব।
কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মনির আহমেদ বলেন, মাহাবুব আগস্ট থেকেই কুমিল্লা কারাগারে উপস্থিত নেই। কৈফিয়ত চেয়ে তাঁর স্থায়ী ঠিকানায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনো জবাব দেননি কিংবা যোগাযোগ করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের পর চার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে (জেল সুপার) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের অবসর-সংক্রান্ত আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী, জনস্বার্থে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা বলা হয় আদেশে। অভ্যুত্থানের পর এই চারজন ছাড়া কারা অধিদপ্তরের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মাহাবুব নিজে থেকেই কর্মস্থল থেকে সরে গেছেন। তিনি ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট ডেপুটি জেলার হিসেবে যোগ দেন। তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল পিরোজপুর কারাগার। ২০০৫ সালের নভেম্বরে বদলি হয়ে আসেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ১/১১-এর সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের পর সংসদ ভবন এলাকায় যে ভবনে বন্দি ছিলেন, সেখানকার ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মাহাবুব। সেই সুবাদে শেখ হাসিনার ‘ঘনিষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সহকর্মী ও কারা কর্মকর্তাদের কাছে শেখ হাসিনার খুব কাছের মানুষ বলে প্রচার করেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পদোন্নতি ছাড়াই তাঁকে জেলারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেলার হিসেবে (চলতি দায়িত্ব) মুন্সীগঞ্জ কারাগারে যোগ দেন তিনি। একই বছরের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের দায়িত্ব পান। প্রায় ১১ মাসের মাথায় ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন। ২০১২ সালের জুলাইয়ে জেলার পদে স্থায়ী হন তিনি। তিন বছর তিন মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের আগস্টে বদলি হন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। দুই বছর পাঁচ মাস পর ফের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হয়ে আসেন মাহাবুব।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নেওয়ার জন্য জেলার মাহাবুবের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। রং নম্বর বলে সংযোগ কেটে দেন তিনি। এর পর তাঁর আরও তিনটি নম্বরে কল করে বন্ধ পাওয়া যায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ল গ সরক র ন র পর আগস ট আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
কখনও বলিনি আমি আর অভিনয় করব না: নাঈম
নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক নাঈম। তবে এখন অভিনয়ে নেই। নানা ইস্যুতে আছেন আলোচনায়। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমায় ‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এ সংলাপকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি। সংলাপ ও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। নিজের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে আছি। সবাই আমাকে এবং আমার পরিবারকে ভালোবাসে। এ ভালোবাসা নিয়েই জীবন চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ভাইরাল হলো ‘‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সংলাপটি, এটার সঙ্গে তো আপনিও আলোচনায় এলেন...
দেখুন, ফিল্ম অনেক বড় বিষয়। প্রায় তিন দশক আগেও একটি সিনেমার ডায়ালগ নিয়ে মানুষ এখনও আলোচনা করছে। ‘চাচা, হেনা কোথায়? তার একটি দৃষ্টান্ত। গত এক মাস হলো আমি শুধু দেখছি, কীভাবে এটা পুরো দেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এটার দ্বারা প্রমাণ হয়, ভালো সিনেমা, ভালো সংলাপ ও ভালো শিল্পী কতটা দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকেন। বিশেষ করে ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমার নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী বাপ্পারাজ-শাবনাজসহ পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাই। শাবনাজ যেহেতু এখন আমার জীবনসঙ্গী। সেই সূত্র ধরেই হয়তো আলোচনায়।
বাপ্পারাজ-শাবনাজ জুটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা তো পুরো দেশের মানুষের জানা। বাপ্পারাজের মতো অভিনেতা পাওয়া কঠিন। আমার স্ত্রী হিসেবে বলব না, ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমাসহ সব সময়ই ও ভালো অভিনয় করেছে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। তারা দু’জনই এককথায় অসাধারণ অভিনয়শিল্পী।
দর্শক তো এখনও আপনাকে অভিনয়ে চায়। অভিনয়ে ফেরার কোনো পরিকল্পনা আছে?
সেটা নির্ভর করবে নির্মাতা ও প্রযোজকের ওপর। তারা যদি আমার ইমেজ, স্টাইল ও প্রেজেন্টেশন নিয়ে ভেবে গল্প বানান আর আমার যদি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই করব। একটা সময় আমি সিনেমা থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। তবে আমি কখনও বলিনি যে, আমি অভিনয় করব না কিংবা সিনেমা নির্মাণ করব না। এখনও আমার ইচ্ছে করে ভালো গল্প নিয়ে একটা সিনেমা বানাব। সিনেমা তো আমার ভেতরে। আমি তো কাজ করতে চাই। ক্যামেরার পেছনে বা সামনে; একটা সময় অবশ্যই আমি করব। তবে সময়টা বলতে পারছি না।
আমাদের সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কী?
অনেক ধরনের মানুষ নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে হয়। এখানে নির্মাতা, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ অনেক বিষয় মাথায় রেখে চিন্তা করতে হয়। একটা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াবে কীভাবে; এটা নিয়ে আমার একটা চিন্তা থাকতে পারে। আমার একার উদ্যোগ বা চিন্তা দিয়ে হবে না। এ ক্ষেত্রে সবার সমান প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তা হলে একটা ইন্ডাস্ট্রি আপনা আপনিই এগিয়ে যাবে।
আপনি তো সাংস্কৃতিক পরিবারের ছেলে...
হ্যাঁ, আমি নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রপৌত্র। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। উপমহাদেশে ১৯৩৮ সালে কিন্তু ঢাকার নবাব পরিবার থেকেই প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। তখন আমাদের পরিবার থেকেই ছিল নির্মাতা, নায়ক ও ক্যামেরাম্যান। অর্থাৎ আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি, এটা ছিল একটা সাংস্কৃতিকমনা পরিবার।
সিনেমা হল সংকট নিয়ে কী বলবেন?
আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে তো দর্শক সিনেমা হলে আসবে। ভালো সিনেমা না বানিয়ে দর্শকদের বলব আপনারা হলে আসছেন না কেন? এটা তো ঠিক না। আগে আমাদের ভালো সিনেমা বানাতে হবে। তাহলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে। হল এমনিতে বাড়বে। এখানে সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কারও একার প্রচেষ্টায় হবে না।
সিনেমার স্বর্ণযুগ কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। ‘না’ বলে আমার কাছে কথা নেই। তবে টাইম লাগে। সবাই মিলে একযোগ হয়ে যদি একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে পারি, তাহলে সব সম্ভব।
ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন কিন্তু আপনি গ্রামে চলে গেলেন কেন?
ঢাকায় আমার দাদার বাড়ি আর টাঙ্গাইল নানার বাড়ি। ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতেই আমি বড় হয়েছি। গ্রামের মাটির সঙ্গে তো প্রতিটা মানুষ জড়িত। আমরা বিভিন্ন বিভাগের মানুষ। কর্মজীবনে আমাদের ঢাকায় থাকতে হয়। ঈদের ছুটিতে আমরা কীভাবে বাড়ি চলে যায়! তো কোনো সময় আমি চিন্তাও করিনি যে বিদেশে স্থায়ী হবো। সব সময় ভেবেছি, এ দেশেতে আমার জন্ম, এ দেশের মাটিতে যেন আমার মৃত্যু হয়।