বৈদ্যুতিক গাড়ি বানিয়ে মোস্তাফার আমিরাত জয়
Published: 16th, January 2025 GMT
জামালপুরের গুঠাইল নদীপারের ছেলে মোস্তাফা আল মোমিন বিশ্বমঞ্চে ওড়ালেন লাল-সবুজের পতাকা। জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষায় তাঁর উদ্ভাবিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে এসেছে এই সাফল্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে জায়েদ সাসটেইনেবিলিটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে মোস্তাফার বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পালকি মোটরস। তিনি পালকি মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
গত মঙ্গলবার আবুধাবি জাতীয় প্রদর্শনী কেন্দ্রে (অ্যাডনেক) এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ১২ কোটি টাকা) এ পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। বিশ্বের ১১টি সংস্থা ও উচ্চ বিদ্যালয় এ পুরস্কার পেয়েছে। জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকাতে টেকসই উন্নয়ন ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
মোস্তাফা আল মোমিন সমকালকে জানান, ঢাকার দূষণ মোকাবিলা এবং চালকদের জীবনমান উন্নয়নে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে অনুপ্রাণিত হন তিনি। তিন বছর আগে মাত্র সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়ে পালকি মোটরস শুরু করেন। বর্তমানে ঢাকার উত্তর বাড্ডায় প্রতিষ্ঠানটির কারখানা রয়েছে। গত তিন বছরে ৭৫টি গাড়ি বাজারজাত করেছেন তারা। মাসে আটটি পর্যন্ত গাড়ি তৈরি করতে পারেন তারা। চালুর মাত্র তিন বছরের মধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন। পুরস্কারের এই অর্থে মাসে গড়ে ১০০টি
গাড়ি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন বলে তাঁর আশা।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের ১৫১টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এনার্জি ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশ থেকে পালকি মোটরস মনোনীত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে নাইজেরিয়া ও বেলজিয়ামকে পেছনে ফেলে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করি। এই স্বীকৃতি আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করবে।
পালকি মোটরসের গাড়িগুলো জ্বালানিতে ৯০ শতাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ে ৫০ শতাংশ সাশ্রয়ী। গাড়িগুলোতে ব্যাটারি-সোয়াপিংয়ের সুযোগও রয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ২০ হাজার বৈদ্যুতিক গাড়ি ও ২০ হাজার বৈদ্যুতিক লরি বিক্রির মাধ্যমে বার্ষিক ২ লাখ ৬০ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পালকি মোটরসের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ তাইউম হোসেন সজল সমকালকে জানান, তাদের মূল লক্ষ্য দেশেই সম্পূর্ণ গাড়ি তৈরি করা। এখন ব্যাটারি ও মোটর আমদানি করতে হয়; এটিও যেন না লাগে। কম দামে কমার্শিয়াল ড্রাইভারদের গাড়ির মালিক বানানো লক্ষ্য তাদের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম টরস
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।