পাসপোর্টধারী যাত্রী ছাড়াও শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক দুই দেশের মধ্যে চলাচল করছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই এই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন লোকজন।

সম্প্রতি ভারতসহ কয়েকটি দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রোগটির বিস্তার ঠেকাতে এই স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা না পেলেও তারা মৌখিকভাবে সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নাকুগাঁও স্থলবন্দরে বাড়তি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সব জায়গায় আগের মতোই কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সব কার্যক্রম চলছে। সেই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে যাতায়াতকারী ট্রাকচালক ও সহকারীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অবাধে চলাচল করছেন।

কয়েকজন পাসপোর্টধারী যাত্রী জানালেন, তাদের কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আসতে হচ্ছে না।

বন্দর পার্শ্ববর্তী স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন, তারা এ ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আবার অনেক সচেতন নাগরিক বলছেন, এই ভাইরাস যেহেতু ভারতে শনাক্ত হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বসানো দরকার।

পাসপোর্টধারী যাত্রী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, এইচএমপিভি সম্পর্কে তিনি মোটামুটি জানেন। করোনার মতো এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে মুশকিল হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের উচিত সতর্কতার সঙ্গে যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। আগে থেকে সচেতন থাকলে সমস্যা হবে না।’

এলাকার সচেতন মানুষ বলছেন, এখানে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বন্দর এলাকা হওয়ায় শত শত পাসপোর্টধারী যাত্রী, ট্রাকচালক ও সহকারী বাংলাদেশে আসেন যার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য মেডিকেল টিম রাখা ও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় স্থলবন্দর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমানের সঙ্গে। ভাইরাসটির নাম কখনও শোনেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নাম শুনেছিলাম। করোনার সময়তো এই বন্দর বন্ধ ছিল। যদি নতুন করে কোনো ভাইরাস আসে, তাহলে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজন হলে বন্দরের ভেতরে কিংবা বাইরে পরীক্ষা করার যন্ত্রপাতি রাখতে হবে।’

নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, এইচএমপিভি নিয়ে সরকারিভাবে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে পরীক্ষা ছাড়াই পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। মৌখিকভাবে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। নির্দেশনা এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা.

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাঠানো হয়নি। নির্দেশনা পেলে স্বাস্থ্য বিভাগ অবশ্যই সেভাবে কাজ করবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য পর ক ষ এইচএমপ ভ ব যবস থ সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

পুরো বন্ধের পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম

টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটি ঘাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে নোঙর করা দুটি বোট থেকে বালু নামাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। দুটি বোটের যাওয়ার কথা ছিল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে। ওই রাজ্যটি দখলে নেওয়া আরাকান আর্মি বোট দুটিকে ওই শহরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে রপ্তানিকারকেরা শ্রমিক দিয়ে বোট দুটি থেকে আলুভর্তি বস্তা নামিয়ে ফেলেন। 
আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১২ দিন টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এখানে আলু পড়ে আছে ২ হাজার ৭০০ বস্তা। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট আলু সেখানে আটকা পড়েছে ১৩৫ টন। এর মধ্যে ২ হাজার ১০০ বস্তা সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নূরুল কায়েস সাদ্দামের ও ৬০০ বস্তা এক্সপ্রেস এজেন্সির ওমর ফারুকের। এ ছাড়া গুদামে পড়ে আছে ২২ হাজার বস্তা সিমেন্ট। এ ছাড়া পানি, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্যও গুদামে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে এসব পণ্যের দাম পাঁচ কোটি টাকার ওপর। 
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলের পর তিন মাস ধরে টেকনাফ থেকে সীমান্তবাণিজ্য থমকে যায়। গত মার্চে ওই রাজ্য থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৬৭৫ দশমিক ৪৩ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৫ টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪ দশমিক ৫২ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। টনের হিসাবে যা তিন হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯৮৪ টন। রপ্তানিপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলু, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্য।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল রাখাইন থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠবাহী বোট এসেছিল। এরপর থেকে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। এসব কারণে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান বন্দরের শ্রমিক নেতা মনির আহমেদ। তিনি বলেন, বেকার শ্রমিকেরা দুর্দিনে পড়েছেন। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আনা আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে পচন ধরেছে। 
ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, তাঁর অর্ধকোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে গুদামে রেখেছেন। এর মধ্যে আলুসহ অনেক পণ্যে পচন ধরেছে। রাখাইনেও তাঁর কাঠ, ডাল, শুঁটকিসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত আছে। 

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ১০-১২ দিন ধরে মালপত্র আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় এখান থেকে পণ্য যাচ্ছে না, সেখান থেকেও কোনো পণ্য আসছে না। রপ্তানির জন্য আনা তাদের দুই হাজারের বেশি বস্তা আলু, ১০ হাজার বস্তা সিমেন্ট পড়ে আছে। পচনশীল হওয়ায় আলু নষ্ট হওয়ার পথে। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
ইয়াঙ্গুন থেকে তিন মাস আগে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবার আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন থেকেও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, মূলত ওপারে সমস্যার কারণে কোনো পণ্য যাচ্ছে না। এখান থেকে পণ্য যেতে কোনো বাধা নেই। স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, এই বন্দরে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আমদানি হয় ১২ এপ্রিল। সেদিন রাখাইন থেকে কাঠবোঝাই বোট এসেছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল রাখাইন থেকে আসার পথে একটি কাঠবাহী বোট হেফাজতে নেয় বিজিবি। সেটিতে কোনো লোকজন ছিল না। মালিকবিহীন বোটটি আছে স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের হেফাজতে। এ প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, টেকনাফ-মংডু সীমান্তবাণিজ্য এখন পুরোদমে বন্ধ। আরাকান আর্মির সবুজসংকেত না পাওয়ায় আপাতত ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারছেন না। ফলে গুদামে বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত রাখতে হচ্ছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরো বন্ধের পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম