টাঙ্গাইলে লোকজ সাংস্কৃতিক পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে এই পিঠা উৎসব উদ্বোধন করা হয়। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি দিনব্যাপী লাঠি খেলা, হাডুডু, পুঁথিপাঠ, বায়োস্কোপ দেখাসহ নানা লোকজ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করে টাঙ্গাইল কালচারাল রিফরমেশন ফোরাম।
উৎসব কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সোহেল রানা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন টাঙ্গাইল কালচারাল রিফরমেশন ফোরামের উপদেষ্টা হামিদুল হক ওরফে মোহন ও গোলাম আম্বিয়া নূরী, উৎসব কমিটির সদস্য সচিব অনিক রহমান ওরফে বুলবুল প্রমুখ।
উদ্বোধনের দিন লাঠি খেলা ও হাডুডু খেলা হয়। এ খেলা দেখতে আসে নানা বয়সী মানুষ। উৎসবে ৪২টি স্টলে ভাপা পিঠা, দুধের পিঠা, নকশি, চিতই, পাঠিসাপটা, জামাই বরণ পিঠা, ডাল ও তালের পিঠা স্থান পেয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে ঢেঁকিতে চাল ছাঁটা, মুড়ি ভাজা, পুঁথিপাঠসহ গ্রামীণ বিভিন্ন ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। বিকেলে উৎসব মঞ্চে জারিগান ও লালন সংগীতের আয়োজন করা হয়। উৎসব কমিটির সদস্য সচিব অনিক রহমান বুলবুল জানান, শুক্রবার পর্যন্ত এই উৎসব চলবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে প্রথমবার বই বিনিময় উৎসব
টেবিলে থরে থরে সাজানো বই। কেউ জমা দিচ্ছেন, কেউ নিচ্ছেন। পড়া শেষে বাসার সেলফে পড়ে থাকা বই দিয়েও নিচ্ছেন আরেকটি পছন্দের বই। সংগ্রহ করা যাচ্ছে প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটি। সঙ্গে আছে একাডেমিক ও ম্যাগাজিন সেকশন থেকে অফুরন্ত বই বিনিময়ের সুযোগ। কেবল বই দিয়েই বই বিনিময়, পুরো দিনটিই ছিল বই বিনিময়ের।
টাঙ্গাইলে প্রথমবারের মতো ‘বই বিনিময়’ উৎসবের আয়োজন করে ’বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার’ নামের একটি সংগঠন।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে শুরু হয় এ উৎসব। শেষ হবে বিকাল ৫টায়। উৎসব শুরুর পর থেকেই ব্যতিক্রমী এ বই বিনিময়ে বইপ্রেমী তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপক সমাগম লক্ষ্য করা যায়।
অনুষ্ঠান উদ্বোধনের শুরুতেই কুরআন তেলাওয়াত এবং গীতা পাঠ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক বাদল মাহমুদ, লেখক ও গবেষক ড. আলী রেজা, অধ্যাপক আলীম আল রাজী ও প্রাবন্ধিক জহুরুল হক বুলবুল প্রমুখ।
‘বই হোক বিনিময়, বই জীবনের কথা কয়’ স্লোগানে বইকে মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করে তোলা ও বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বই বিনিময় উৎসবটি।
উৎসবে ছিল বইয়ের ছয়টি স্টল এবং দুটি রেজিস্ট্রেশন বুথ। ছয়টি স্টলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই বিনামূল্যে বিনিময় করা হয়েছে। উৎসবের পক্ষ থেকে সংগ্রহ করে রাখা হয় এক হাজারের বেশি বই। সারা দিন প্রায় তিন হাজার বই বিনিময় হয়।
উৎসবে উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্পগ্রন্থসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় সহস্রাধিক বই টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। বইগুলোর পরিবর্তে পাঠকরা তাদের ঘরে পড়ে থাকা বা সাজিয়ে রাখা বইটি বদলে অপঠিত বই নিয়েছেন, এটাই হচ্ছে বই বিনিময়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এমন বইয়ের খোঁজও করেছেন অনেকে। হাজারো বইয়ের ভিড়ে পছন্দের বইটি খুঁজে পেতে একজন বইপ্রেমীর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখকসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয়েছিল মিলনমেলায়।
বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিবা রহমান বই বিনিময় করতে এসে বলেন, ‘‘ছোট থেকেই বই পড়তে ভালো লাগে। তাই আমার কাছে থাকা বই পড়া শেষে নতুন বই পড়ার আগ্রহ থেকে বই বিনিময় করতে এসেছি। এই উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং আমাদের মতো পাঠকেরা খুব উপকৃত হয়।’’
সরকারি সাদত কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘‘আমার বন্ধু ফেসবুকের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বই বিনিময় উৎসবে। তাই ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি অনুষ্ঠান দেখতে। এটা ব্যতিক্রম আয়োজন, খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে।”
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, ‘‘পড়া বই ঘরে না রেখে নতুন কিছু জানার আশায় বই বিনিময় করতে পেরে ভালো লাগছে। কারণ এতে নতুন বই পড়তে টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে না। এরকম আয়োজন আরো হওয়া প্রয়োজন।”
বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও বই বিনিময় উৎসবের আয়োজক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “বইকে পাঠকের কাছে সহজ করতে আমাদের এই উদ্যোগ যা থেকে নতুন প্রজন্মের পাঠক তৈরি হবে। এতে তরুণ ও কিশোররা স্মার্টফোন বিমুখ হয়ে বই পড়ার দিকে ধাবিত হবে।”
অর্থ ব্যয় করে নতুন বই কেনার চেয়ে পুরোনো বই বিনিময়ের এই উৎসব পাঠের অভ্যাস বাড়াবে। তাই এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন টাঙ্গাইলবাসী।
ঢাকা/কাওছার/এস